বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া। অথচ বর্ষায় পেঁয়াজ চাষে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছেন না চাষিরা।
ভিন্ রাজ্যের উপরে নির্ভরতা কমাতে গত বছর বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দিয়েছিল রাজ্যের উদ্যানপালন দফতর। তিনটি জেলায় তার সূচনা হয়েছিল। নাসিকে গিয়ে প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছিলেন চাষিরা। এ বছর কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জেলায় জেলায় বীজ পাঠালেও তা কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না চাষিরা।
কেন এই দশা? চাষিদের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি কারণ উঠে এল। এক, গত বছর হুগলিতে অতিবর্ষণের ফলে চাষ মার খেয়েছিল। বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়াতেও ফল আশানুরূপ হয়নি। তাই চাষিদের উৎসাহে ভাটা পড়েছে। দুই, গত দু’বছর বীজ-সার প্রভৃতি-সহ মিনিকিট বিনা পয়সায় বিতরণ করা হয়েছিল। এ বার কিনতে হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। আর তিন, এ বার পেঁয়াজ বীজ সর্বত্র সময় মতো পৌঁছয়নি। অনেক চাষি অপেক্ষা করে জমিতে অন্য চাষ শুরু করে দিয়েছেন। বলাগড়ের চাষি রবীন্দ্রনাথ দাস জানালেন, গতবার বর্ষার পেঁয়াজ চাষ করার পর এ বারও করবেন বলে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বর্ষা গড়িয়ে গিয়েও বীজ না পাওয়ায় ১৭ কাঠা জমিতে ফুলকপি চাষ করে ফেলেছেন তিনি।
অথচ উদ্যান পাল দফতর সূত্রে খবর, সরকারের ঘরে এই মুহূর্তে পড়ে রয়েছে অন্তত দেড় কুইন্টাল বীজ।
সরকারের তরফে গাফিলতির কথা কার্যত স্বীকার করলেন উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীও। তাঁর কথায়, “চলতি বছরে বীজ আসতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। অনেক চাষি জমিতে অন্য চাষ করে ফেলেছেন। তাই পেঁয়াজ চাষ সম্ভব হয়নি।” কিন্তু বীজ আসতে দেরি হল কেন? মন্ত্রী বলেন, “বীজ কিনতে চেয়ে চিঠি পাঠানো, টাকা দেওয়া, পুরো প্রক্রিয়াটাতেই কিছুটা দেরি হয়েছে।”
অথচ এ বছর বর্ষার পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছিল। হুগলি, বাঁকুড়া, বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা ও বর্ধমান এই আট জেলার প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে স্থির করা হয়েছিল। কার্যক্ষেত্রে চাষিদের কাছে সে ভাবে পৌঁছতে পারল না দফতর। হুগলির নাটাগড় ১ পঞ্চায়েতের পাইগাছি গ্রামের বাসিন্দা অশোক দাস বলেন, ‘‘গতবার যে তৎপরতা দেখেছিলাম সরকারের, এ বার তার উল্টো ছবি দেখলাম।” প্রচার বা প্রশিক্ষণে গত বছরের মতো তৎপরতা দেখা গেল না, দাবি অশোকবাবুর। ফলে যাঁরা নতু্ন করে চাষ করবেন ভেবেছিলেন তাঁরা পিছিয়ে গিয়েছেন। হুগলিতে ৬০০ কেজি বীজ আনা হয়েছে, পড়ে রয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি।
বর্ধমানে ৪০০ কেজি বীজ আনা হয়েছিল। মাত্র দেড়শো কেজি তুলেছেন চাষিরা। কালনা মহকুমা উদ্যান পালন বিভাগের আধিকারিক পলাশ সাঁতরা বলেন, “এখনও অনেক চাষি এই চাষের সুফল জানেন না। এবার যাঁরা চাষ করেছেন, তাঁদের মাধ্যমেই পরের মরসুমে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের কথা ছড়িয়ে পড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy