পুলিশের চাকরিটি খোয়ালেন প্রশান্ত তামাঙ্গ।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের জাতীয় প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন তিনি। তাঁর পক্ষে এসএমএসের মাধ্যমে প্রচুর ভোট দিয়ে তাঁকে জেতাতে কলকাতা পুলিশে তাঁর সহকর্মী, এমনকী উচ্চপদস্থ কর্তাদেরও অবদান কম ছিল না। বহু পুলিশকর্মী রাতের পর রাত জেগেছেন শুধু এসএমএস পাঠিয়ে তাঁকে ভোট দিতে। কিন্তু রিজার্ভ ফোর্স-এর সেই কনস্টেবল, পরে গায়ক-অভিনেতা হওয়া দার্জিলিঙের প্রশান্ত তামাঙ্গকে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বরখাস্ত করল কলকাতা পুলিশই। রিজার্ভ ফোর্স-এর কনস্টেবল প্রশান্তকে চাকরি থেকে বরখাস্তের ওই নির্দেশ গত ১৪ জুন জারি করা হয়েছে।
কিন্তু কী ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছিলেন প্রশান্ত?
বরখাস্তের ওই নির্দেশ অনুযায়ী: কনস্টেবল নম্বর ১৯৯৪৩ প্রশান্ত তামাঙ্গ টানা ১৮৭০ দিন কাজে আসেননি। ২০০৯-এর ১ মে থেকে তাঁকে বরখাস্তের দিন অর্থাৎ ২০১৪-র ১৩ জুন পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে প্রশান্ত এক বারের জন্যও তাঁর অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি কিংবা তার কারণ, কিছুই জানাননি।
ভূমিপুত্র প্রশান্ত তামাঙ্গের হয়ে পাহাড় জুড়ে প্রচার করেই সেই সময়ে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল-এর কাউন্সিলর বিমল গুরুঙ্গ বিপুল সমর্থন ও জনপ্রিয়তা পান এবং তাতে ভর দিয়ে শেষমেশ সুবাস ঘিসিঙ্গকে উৎখাত করে নতুন দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম) তৈরি করেন। কলকাতা পুলিশ থেকে প্রশান্তের বরখাস্ত হওয়া নিয়ে অবশ্য মোর্চা নেতা রোশন গিরি মঙ্গলবার বলেন, “এটা প্রশান্ত তামাঙ্গের ব্যক্তিগত বিষয়। এই নিয়ে মন্তব্য করব না।”
লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা জানান, কোনও কিছু না জানিয়ে বছরের পর বছর কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশান্ত তামাঙ্গের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয় গত বছর। শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রমাণ পাওয়ার পরেই প্রশান্তকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান ওই অফিসার।
প্রশান্তের বয়স এখন ৩১ বছর। ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে তিনি নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের তরুণী, পেশায় বিমানকর্মী মার্থা অ্যালি ওরফে গীতাকে বিয়ে করেন।
নেপালি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, দার্জিলিঙের তুংসুং গ্রামের বাসিন্দা, প্রশান্তর বাবা, ট্রাফিক কনস্টেবল মদন তামাঙ্গ এক দুর্ঘটনায় মারা যান ২০০২ সালে। সে জন্য সে বছরই পড়াশোনা ছেড়ে কলকাতা পুলিশে যোগ দিতে হয় প্রশান্তকে। তাঁকে প্রথম নেওয়া হয় রিজার্ভ ফোর্সে। পরবর্তী সময়ে স্পেশ্যালাইজ্ড অ্যাকশন ফোর্স (স্যাফ)-এ তাঁকে পাঠানো হয়। চাকরিতে ঢোকার পরেই কলকাতা পুলিশের অর্কেস্ট্রায় গাইতেন প্রশান্ত। যদিও সঙ্গীতের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ছিল না।
২০০৭-এ বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ওই প্রতিযোগিতার ফাইনালে প্রশান্ত তামাঙ্গের পক্ষে এসএমএস-এ পাঠানো ভোট পড়েছিল প্রায় সাত কোটি। দ্বিতীয় হওয়া প্রতিযোগীর চেয়ে দশ গুণ বেশি। সেটা অনেকটাই কলকাতা পুলিশের সৌজন্যে বলে লালবাজারের দাবি। যাতে সাধারণ মানুষও এসএমএস পাঠিয়ে প্রশান্তকে ভোট দেন, সে জন্য তদানীন্তন এক যুগ্ম কমিশনারের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের কয়েকটি জায়গায় অনুষ্ঠানও করা হয়। প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া ইস্তক প্রশান্ত ওই যুগ্ম কমিশনারের সৌজন্যেই না-কাজ, না-বেতনের ‘বিশেষ ছুটি’ পেয়েছিলেন দু’বছরের জন্য। কিন্তু ওই ছুটির মেয়াদ ফুরনোর পরও বাহিনীকে প্রশান্ত কিছু না জানিয়ে টানা অনুপস্থিত থাকেন।
পরবর্তী সময়ে প্রশান্ত নেপালে বেশ কিছু দিন বসবাস করছিলেন। একাধিক নেপালি ছবিতেও নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স-এর এক অফিসারের বক্তব্য, এখন প্রশান্তর হয়তো আর পুলিশ কনস্টেবলের চাকরির প্রয়োজন নেই। কিন্তু তাঁর কথায়, “যে বাহিনীর জন্য ওঁর এত খ্যাতি ও সমৃদ্ধি হল, প্রশান্ত সেই কলকাতা পুলিশকেই অবজ্ঞা করলেন, ভুলে গেলেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy