Advertisement
E-Paper

ভাগ্নেকে ভোট দেওয়া হবে না, মন ভার দেবের মামাবাড়ির

মামার ভোট জুটবে না খোকাবাবুর। মিলবে কী করে, মামার বাড়ি চন্দ্রকোনা চলে গিয়েছে পাশের কেন্দ্র আরামবাগে। আর দেব ভোটে দাঁড়াচ্ছেন ঘাটাল থেকে। ফলে, দেবকে ভোট দেওয়া হচ্ছে না মামা-মামি, ভাই-বোনেদের। তাতে কী? বক্স অফিস-মাতানো ভাগ্নে যাতে নির্বাচনেও সুপারহিট হয়, তার জন্য প্রচারে কোমর বেঁধে নামছে দেবের মামাবাড়ি। আর তৈরি রাখছে পোস্তর বড়া, মাছের তেল-ঝাল। ওগুলো খেতে বড় ভালবাসে খোকাবাবু।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৪
দেব তখন স্কুল পড়ুয়া। (মাঝে) মুম্বইয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার হাতে। মুম্বইয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠানে। * সব ছবি মামাবাড়ির সৌজন্যে।

দেব তখন স্কুল পড়ুয়া। (মাঝে) মুম্বইয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার হাতে। মুম্বইয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠানে। * সব ছবি মামাবাড়ির সৌজন্যে।

মামার ভোট জুটবে না খোকাবাবুর।

মিলবে কী করে, মামার বাড়ি চন্দ্রকোনা চলে গিয়েছে পাশের কেন্দ্র আরামবাগে। আর দেব ভোটে দাঁড়াচ্ছেন ঘাটাল থেকে। ফলে, দেবকে ভোট দেওয়া হচ্ছে না মামা-মামি, ভাই-বোনেদের। তাতে কী? বক্স অফিস-মাতানো ভাগ্নে যাতে নির্বাচনেও সুপারহিট হয়, তার জন্য প্রচারে কোমর বেঁধে নামছে দেবের মামাবাড়ি। আর তৈরি রাখছে পোস্তর বড়া, মাছের তেল-ঝাল। ওগুলো খেতে বড় ভালবাসে খোকাবাবু।

“দীপ (দেবের ডাকনাম) এখনও জানে না আমরা ওকে ভোট দিতে পারব না। আমাদের প্রচারে যেতে বলেছে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা সবাই প্রচারে যাব,” বললেন দেবের বড় মামা নারায়ণ মুখোপাধ্যায়।

জ্যাঠার বাড়ি অবশ্য পড়ছে ঘাটাল কেন্দ্রেই। তবে তিনি দেবের হয়ে প্রচার করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সুপারস্টার ভাইপো লোকসভা নির্বাচনে ‘সবুজ’ প্রার্থী হওয়ায় মহিষদার বাড়িতে জ্যাঠা-কাকারা ধর্মসঙ্কটে পড়েছেন। একদা সিপিএমের শক্তঘাঁটি কেশপুরের এই অধিকারী পরিবার এখনও ‘লাল’। দেব অবশ্য শুক্রবার মহিষদার বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন, পরিবারের মাথা জ্যাঠামশাইকে প্রণাম করেই ভোট প্রচার শুরু করতে চান। জ্যাঠতুতো দাদা সুজিত অধিকারীকে ফোন করেছিলেন দেব। সুজিতবাবু বলেন, “রাজু (দেবের আর একটা ডাকনাম) জানিয়েছে, বাবাকে প্রণাম করে ও গ্রাম থেকেই প্রচার শুরু করতে চায়।”

সুজিতবাবুর বাবা, দেবের বড় জ্যাঠা শক্তিপদ অধিকারী সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সদস্য। ভাইপোকে তাহলে ভোটে জেতার জন্য আশীর্বাদ করবেন তো? গম্ভীর মুখে শক্তিপদবাবুর জবাব, “বাড়ির ছেলে। আশীর্বাদ চাইলে তো আর ফেরাতে পারব না।”

মামাবাড়িতে অবশ্য এ সব সঙ্কট নেই। চন্দ্রকোনা শহরের মিত্রসেনপুরের মুখুজ্জে বাড়ি বরাবরই দক্ষিণপন্থী। আগে ছিল কংগ্রেসি, এখন সমর্থন ঝুঁকেছে তৃণমূলে। দেবের পাঁচ মামা, চার মাসি। বড় মামা নারায়ণবাবু স্থানীয় রাজবাঁধ পঞ্চগ্রামী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। ছোট মামা কৃষ্ণগোপাল মুখোপাধ্যায় টেনপুর স্কুলের সহ-শিক্ষক। মেজোমামা মধুসূদন ও ন’মামা প্রণব জমিজমা দেখেন। আর সেজোমামা পতিতপাবন বিয়ে-থা করেননি, ঠাকুর-দেবতা নিয়েই মেতে আছেন। মাটির মন্দিরে নানা দেব-দেবীর উপাসনায় দিন কাটে তাঁর। এই মন্দির ভাগ্নের বড় প্রিয় বলে জানালেন দেবের বড় মামিমা মিতাদেবী।

দেবের জন্ম মুম্বইয়ে। তবে পাঁচ বছর বয়স থেকে বেশ কিছু দিন মামাবাড়িতে কাটিয়েছেন তিনি। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছেন এখানে। ছোট্ট দেবের কথা এখনও স্মৃতিতে টাটকা শান্তিনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লক্ষ্মণচন্দ্র মণ্ডলের। তিনি বলেন, “ও বরাবর দুষ্টু। কিন্তু মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকত। পড়াশোনাতেও মন্দ ছিল না।” পরে দেবের বাবা গুরুপদ অধিকারী ছেলেকে মুম্বইয়ে নিয়ে যান। তবে মা মৌসুমীদেবী ও বোন দীপালির সঙ্গে মামাবাড়িতে আসা ছাড়েননি দেব। এখনও মামাবাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।

চার মামিমা মিতা, দোলা, রুমা ও কাকলিদেবী সমস্বরে জানালেন, প্রথম সিনেমা ‘অগ্নিশপথ’-এর শু্যটিংয়ের আগে মামাবাড়িতে এসেছিলেন দেব, সকলের আশীর্বাদ নিতে। ইদানীং ব্যস্ততায় খুব-একটা আসা হয় না। দেবের মামাতো ভাই-বোন সৌরভ, সুচেতা, সম্পদ, মানব, সুদিন, মোনামিদের কথায়, “দাদার আসা এখন কমে গিয়েছে। তবে ফোনে সকলের সঙ্গে কথা বলে।” দেবের এক মাসি লক্ষ্মীদেবী অবিবাহিত।

তিনি বলেন, “আমি প্রায়ই মুম্বইয়ে মেজদির (দেবের মা মৌসুমী) বাড়িতে থাকি। দেব মাছের তেল-ঝাল আর পোস্তর বড়া খেতে খুব ভালবাসে। আমি থাকলে ও সব খাবে বলে আবদার করে।”

দেব শেষ চন্দ্রকোনায় এসেছিলেন গত বছর মার্চে, দিদিমা মারা যাওয়ার পরে। সঙ্গে ছিলেন বাবা-মা। তবে রাতেও ভিড়ের চোটে পুলিশের অনুরোধে মিনিট পঁয়তাল্লিশের বেশি মামাবাড়িতে থাকতে পারেননি। ভোটে জিতলে অবশ্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে জেলায় যাতায়াত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত সেই আশাতেই দেবের মামাবাড়ি।

(সহ-প্রতিবেদন: কিংশুক আইচ)

khokababu dev ghatal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy