Advertisement
E-Paper

ভোরে তলব, ন’ঘণ্টা জেরা সুদীপ্তর বৌমাকে

সারদার লোপাট হওয়া টাকা সংস্থার কর্ণধারের পরিবারের মধ্যেই রয়েছে কি না, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) আপাতত তার হদিস করতে ব্যস্ত। সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎ ও দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিয়ালিকে বুধবার গ্রেফতার করে টানা জেরা করা হয়েছে। আর তার পরে রবিবার দিনভর ইডি’র জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়লেন শুভজিতের স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৬
ইডি অফিসে সুদীপ্ত সেনের পুত্রবধূ প্রিয়ঙ্কা সেন।—নিজস্ব চিত্র।

ইডি অফিসে সুদীপ্ত সেনের পুত্রবধূ প্রিয়ঙ্কা সেন।—নিজস্ব চিত্র।

সারদার লোপাট হওয়া টাকা সংস্থার কর্ণধারের পরিবারের মধ্যেই রয়েছে কি না, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) আপাতত তার হদিস করতে ব্যস্ত। সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎ ও দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিয়ালিকে বুধবার গ্রেফতার করে টানা জেরা করা হয়েছে। আর তার পরে রবিবার দিনভর ইডি’র জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়লেন শুভজিতের স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা সেন। ইডি-র ব্যাখ্যা, শুভজিৎ-পিয়ালিকে জেরা করে কিছু তথ্য মিলেছে, যেগুলো যাচাই করার উদ্দেশ্যেই এ দিন সকালে প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে আসা হয়েছিল।

ইডি-সূত্রের খবর: লগ্নিকারীদের থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নিজের পরিবারের লোকজনের নামে সম্পত্তি কিনেছিলেন সুদীপ্ত। আত্মীয়দের নামে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও প্রচুর টাকা রেখেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই শুভজিৎ-পিয়ালিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইডি-সূত্রের খবর: শনিবার রাতভর জেরার মুখে শুভজিৎ ভেঙে পড়েন। তাঁর পরিবারের নামে আরও কিছু সম্পত্তি থাকার কথা জানান। বিনিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু কিছু তথ্যও দেন। ইডি-আধিকারিকেরা আর দেরি করেননি। শুভজিতের দেওয়া তথ্য যাচাই করতে এ দিন ভোর হতেই প্রিয়ঙ্কাকে মহেশতলার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয় সল্টলেকের ইডি-অফিসে। সেখানে প্রায় ন’ঘণ্টা ধরে তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রিয়ঙ্কার কাছে কী জানা গেল?

এ দিন সন্ধ্যায় ইডি’র এক তদন্তকারী অফিসার জানান, শুভজিতের বিভিন্ন বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে তাঁর স্ত্রীর কথায়। এ ছাড়া তদন্তলব্ধ আরও কিছু তথ্য যাচাই করতেও প্রিয়ঙ্কার সাহায্য চাওয়া হয়েছিল, তিনি সহযোগিতা করেছেন। যদিও সারদায় লগ্নিকারীদের আমানত তছরূপের যে অভিযোগ, তার সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার কোনও যোগসূত্র মেলেনি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

ইডি-সূত্রের আরও দাবি, সুদীপ্ত সেনের পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজ-খবর করতে গিয়ে আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যে গুলো সেন পরিবারের কারও নয়। কিন্তু সুদীপ্তের পরিজনদের অ্যাকাউন্ট থেকে সেখানে বিস্তর টাকার লেনদেন হয়েছে। এমনকী, সুদীপ্ত সেন ধরা পড়ার পরেও এমন বেশ কিছু লেনদেন হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, লেনদেনগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখলে সারদার টাকা ‘পাচার’ সম্পর্কে কার্যকরী সূত্র মিলতে পারে। বস্তুত ওই সব লেনদেনের মারফতই সারদার টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে বলে ইডি-র একাংশের সন্দেহ। যার প্রেক্ষিতে তদন্তকারীরা সারদার আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

মহেশতলা পুর-এলাকায় যে ফ্ল্যাটে প্রিয়ঙ্কা থাকেন, সেটি সম্পর্কেও খোঁজখবর শুরু করেছে ইডি। এ দিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, মহেশতলার ওই আবাসনে নিম্ন আয় (এলআইজি), মধ্য আয় (এমআইজি) ও উচ্চ আয়ের (এইচআইজি) মানুষদের জন্য তিন রকমের ফ্ল্যাট রয়েছে। শুভজিৎ-প্রিয়ঙ্কাদের ফ্ল্যাটটি এমআইজি গোত্রের। বাসিন্দা-সূত্রের খবর, ২০১০-এর মে মাসে যখন আবাসন-প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়, তখন এমআইজি ফ্ল্যাটের দাম ছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। আবাসিকদের অধিকাংশই অবশ্য জানতেন না, সেখানে সুদীপ্ত সেনের পরিজনদের বাস। শুভজিৎ বা তাঁর স্ত্রী আবাসনে তেমন মেলামেশাও করতেন না। “আজ ভোরে কয়েক জন লোক এসে ফ্ল্যাটের মহিলাকে নিয়ে গেলেন। তখনই ব্যাপারটা জানাজানি হল।” মন্তব্য এক পড়শির। আর এক জনের কথায়, “ওই ফ্ল্যাটে কেউ নিয়মিত থাকতেন না। মাঝে-মধ্যে দু’-এক দিনের জন্য ওঁদের দেখা যেত।” আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের কেউ কেউ বলেছেন, মাত্র কয়েক দিন হল ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নিয়মিত থাকতে শুরু করেছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার শুভজিৎ ও পিয়ালিকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের পাঁচ দিন ইডি-হেফাজতে রাখতে বলেছিলেন। কাল, মঙ্গলবার ওঁদের ফের কোর্টে পেশ করার কথা। ইতিমধ্যে ইডি-সূত্রে জানা গিয়েছে, সারদার ব্যবসা সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য তদন্তকারীরা এখনও হাতে পাননি। তাঁদের আশা, শুভজিৎ ও পিয়ালি এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। তাই দু’জনকে ফের ইডি-হেফাজতে রাখার জন্য আদালতে আবেদনের চিন্তা-ভাবনা চলছে।

priyanka sen sarada
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy