Advertisement
E-Paper

ভাড়া মিটারে, গ্রামের পথেও ট্যাক্সি ছোটানোর চিন্তা

গায়ের রং নীল-সাদা। সওয়ারি তুলতে সদা তৈরি। অন্তত কাগজে-কলমে তাদের যাত্রী প্রত্যাখ্যানের কোনও জায়গা নেই। কলকাতার পথে এ হেন ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সির বহর নামানোর পরে তাকে এ বার মহানগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যের অন্যান্য বড়-ছোট শহর থেকে মফস্সলে, মায় গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে পরিবহণ দফতর।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০২:৫৭

গায়ের রং নীল-সাদা। সওয়ারি তুলতে সদা তৈরি। অন্তত কাগজে-কলমে তাদের যাত্রী প্রত্যাখ্যানের কোনও জায়গা নেই।

কলকাতার পথে এ হেন ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সির বহর নামানোর পরে তাকে এ বার মহানগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যের অন্যান্য বড়-ছোট শহর থেকে মফস্সলে, মায় গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে পরিবহণ দফতর। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অন্তত দশ হাজার নতুন ট্যাক্সির পারমিট ছাড়া হবে। শিলিগুড়ি-আসানসোল-বর্ধমান বা হলদিয়ার মতো শহরাঞ্চলের পাশাপাশি দুই ২৪ পরগনা বা হাওড়া-হুগলির বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলও পড়বে রাজ্যের নয়া ট্যাক্সি-মানচিত্রের আওতায়।

দফতর সূত্রের খবর: কলকাতার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ট্যাক্সি-পারমিটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ শুরু হয়ে যাবে আগামী সপ্তাহে। এ দিকে নতুন পরিকল্পনা ঘিরে কিছু মহলে যেমন উৎসাহের সঞ্চার হয়েছে, তেমন সংশয়ে ভুগছে পরিবহণ-ব্যবসায়ীদের একাংশ। প্রশাসনের দাবি, জেলায় মিটার ট্যাক্সি চালু হলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে। “জেলার শহরে শহরে ট্যাক্সির চাহিদা যথেষ্ট। যেমন রাতে দুর্গাপুর স্টেশনে নামলেই টের পাওয়া যায়। ভাড়া গাড়িকে প্রচুর টাকা দণ্ড দিয়ে যেতে হয়। ট্যাক্সি থাকলে হ্যাপা কমবে।” মন্তব্য এক পরিবহণ-কর্তার। চাহিদা আছে, এমন সব শহরেই ট্যাক্সির পারমিট দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পরিবহণ-সূত্রের খবর, জেলায় জেলায় নতুন মিটার ট্যাক্সির রংও হবে নীল-সাদা। সেগুলো পারমিট-এলাকার বাইরে চলতে পারবে না। অর্থাৎ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকার ট্যাক্সি ওই জেলারই কেএমএ (কলকাতা মেট্রোপলিটান এরিয়া)--তে ঢুকতে পারবে না। যা শুনে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের বিমল গুহের মন্তব্য, “নির্দিষ্ট এলাকা বেঁধে না-দিয়ে সারা রাজ্যে চলার পারমিট দিলে প্রকল্প আরও লাভজনক হতো। নতুন ট্যাক্সির মালিকেরা আরও সহজে ঋণের ইএমআই শুধতে পারতেন।” তবে সার্বিক ভাবে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে ট্যাক্সি-মালিকেরা আশাবাদী। “রাজ্য জুড়ে যে ভাবে বাসের সংখ্যা কমছে, তাতে জেলায় জেলায় মিটার ট্যাক্সি নামিয়ে কিছুটা সুরাহা হতেই পারে।’’ মন্তব্য বিমলবাবুর।

পশ্চিমবঙ্গে ট্যাক্সি-পরিষেবা প্রথম চালু হয়েছিল শুধু কলকাতা শহরের জন্য। পরে তা পুর-এলাকার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটান এরিয়া (কেএমএ)-য় ছড়িয়ে পড়ে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি নাগাদ কেএমএ’তে ট্যাক্সির পারমিট দেওয়া শুরু হয়। সে সময়ে কলকাতা পুলিশের আওতাধীন অঞ্চলে চলত কালো-হলুদ ট্যাক্সি, কেএমএ-তে হলুদ ট্যাক্সি। ক্রমে সব ট্যাক্সিরই রং হলুদ হয়ে যায়।

আর রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে কলকাতার রাস্তায় নেমেছে নীল-সাদা ‘নো রিফিউজাল।’ কিন্তু খাস কলকাতাতেই তো ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সির যাত্রী প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ উঠছে! এখানেও রাতে-বিরেতে অনেক ট্যাক্সি মিটারের চেয়ে অনেক বেশি হাঁকে। জেলাতেও তেমন হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?

সরকারের তরফে ব্যাখ্যা মেলেনি। অন্য দিকে বেসরকারি বাস-মালিকদের অনেকের অনুমান, কিছু দিনের মধ্যে ওই সব ট্যাক্সি মিটার ছেড়ে শেয়ারে চলতে শুরু করবে। বস্তুত জেলায় মিটার ট্যাক্সি নামানোর পরিকল্পনা শুনে বাস-মালিকদের অনেকে কার্যত প্রমাদ গুনছেন। ওঁদের আশঙ্কা, এতে গণ-পরিবহণ আরও ধাক্কা খাবে। মিটারের ট্যাক্সি শেয়ারে যাত্রী তুলতে শুরু করলে আরও বাড়বে বাসের লোকসান। প্রসঙ্গত, দফায় দফায় জ্বালানির দাম বাড়লেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাসভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকায় বহু বেসরকারি মালিক যেমন বাস বসিয়ে রেখেছেন, তেমন সরকারি পরিবহণ নিগমগুলোর হাল তথৈবচ। সব মিলিয়ে আমজনতার দুর্ভোগের একশেষ হচ্ছে নিত্য দিন।

এবং এমতাবস্থায় ট্যাক্সি-পরিধি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে বাস-মালিকেরা বিশেষ আশার আলো দেখছেন না। “গণ-পরিবহণের বেহাল দশা ট্যাক্সি দিয়ে ঢাকা যায় না। এতে মানুষকে অটোর মতো বেশি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হবে।” বলছেন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এ সব না-করে মুখ্যমন্ত্রী বরং গণ-পরিবহণের দিকে নজর দিলে রাজ্যের পরিবহণ শিল্পটা বাঁচত। আমজনতারও উপকার হতো।”

পরিবহণ দফতরের খবর: প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, আসানসোল-দুর্গাপুর, বর্ধমান, খড়্গপুর ও হলদিয়ার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন পর্ষদ এলাকায় মিটার ট্যাক্সি নামানো হবে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের পাশাপাশি শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকাতেও নামবে নতুন ট্যাক্সি। এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলার কেএমএ-বহির্ভুত অঞ্চলের জন্য যে ট্যাক্সিগুলি পারমিট পাবে, তারা জেলার গ্রামাঞ্চলেও যাত্রী পরিবহণ করতে পারবে। ওই চার জেলার কেএমএ-তেও নতুন হাজার দুয়েক ট্যাক্সির পারমিট দেওয়া হবে।

একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশ কমিশনারেট অঞ্চলেও নতুন ৩,৫০০ ট্যাক্সির পারমিট ছাড়া হচ্ছে।

taxi meter price atri mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy