Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মাটি পেতে অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় তিন মাথা এক

ইউপিএ জমানায় পাশ করানো জমি অধিগ্রহণ আইনে জনপ্রিয়তা কুড়োনোর চেষ্টাটা যে একটু বেশিই ছিল, ঘরোয়া আলোচনায় দিব্যি তা স্বীকার করেন কংগ্রেস নেতারা। শিল্পায়ন ও উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে এই বিল সংশোধন করাটা যে খুব জরুরি ছিল এ কথাও তাঁরা স্বীকার করেন। কিন্তু সস্তা হাততালির রাজনীতির কাছে কবে আর পাত্তা পেয়েছে অর্থনীতির যুক্তি!

অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের মিছিল। ধর্মতলায়।  ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের মিছিল। ধর্মতলায়। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

ইউপিএ জমানায় পাশ করানো জমি অধিগ্রহণ আইনে জনপ্রিয়তা কুড়োনোর চেষ্টাটা যে একটু বেশিই ছিল, ঘরোয়া আলোচনায় দিব্যি তা স্বীকার করেন কংগ্রেস নেতারা। শিল্পায়ন ও উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে এই বিল সংশোধন করাটা যে খুব জরুরি ছিল এ কথাও তাঁরা স্বীকার করেন। কিন্তু সস্তা হাততালির রাজনীতির কাছে কবে আর পাত্তা পেয়েছে অর্থনীতির যুক্তি!

তাই জমি অর্ডিন্যান্সের তীব্র বিরোধিতার মাধ্যমেই ফের মাটি ফিরে পাওয়ার কৌশল নিতে চাইছে কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদের বাজেট অধিবেশনের সময় কৃষকদের নিয়ে সংসদ ঘেরাওয়ের কথাও ভাবা হচ্ছে। আবার সারদা কাণ্ডে কোণঠাসা তৃণমূলও জমি খুঁজে পেতে জমি অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতাকেই খড়কুটো হিসেবে বেছে নিয়েছে। পথে নেমে বামেরাও বোঝাতে চাইছে, তারাও বা কম কি!

এই মুহূর্তে রাহুল গাঁধী দেশে নেই। সম্ভবত বিলেতে রয়েছেন তিনি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন রাহুল। তাঁর মতে, কংগ্রেস কর্মীদের হতাশার বিষয়টি স্বাভাবিক। কিন্তু বিজেপি কোনও বড় ভুল না-করলে কংগ্রেস আন্দোলনে নামে কী ভাবে? রাহুলের মতে, সেই ভুল সরকার করতে শুরু করেছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই করেছে। সামাজিক কর্মসূচিতেও বরাদ্দ কমাচ্ছে। সেই সঙ্গে মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশের চাষিরা কৃষিপণ্যের ন্যায্য সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না। রাহুল বলছেন, এই অসন্তোষকেই পুঁজি করতে হবে কংগ্রেসকে।

রাহুল-ঘনিষ্ঠ ওই কংগ্রেস নেতা আজ বলেন, জমি আইন সংশোধন করতে সরকার যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, রাজ্যসভায় তা পাশ হওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র যৌথ অধিবেশন ডেকেই এই অর্ডিন্যান্স পাশ করাতে হবে সরকারকে। কিন্তু সংসদে বিরোধিতার থেকেও কংগ্রেসের আগ্রহ আরও বড় কিছুতে। তারা বার্তা দিতে চায় কেন্দ্রের নতুন জমি-নীতি গোটা দেশের কৃষকদের স্বার্থ-বিরোধী। কংগ্রেস বলছে, বর্তমান জমি আইনে কৃষকের স্বার্থ রক্ষার যে কথাগুলি বলা ছিল, বেছে বেছে সেগুলিই বাদ দিয়েছে মোদী সরকার।

সারদা, খাগড়াগড়, যাদবপুরের মতো একের পর এক ঘটনায় তৃণমূল কোণঠাসা। এই অবস্থায় কেন্দ্রের জমি অর্ডিন্যান্সকে হাতিয়ার করে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের আশায় পথে নেমে পড়ল তারাও। রাজ্য জুড়ে বুধবার বিক্ষোভ, মিছিল ও অবরোধ করে ওই অধ্যাদেশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শাসক দলের কর্মীরা। শীর্ষ নেতৃত্বের ঘোষণা অবশ্য ছিল শুধুই বিক্ষোভ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অত্যুৎসাহী কর্মী-সমর্থকেরা অবরোধ করে সেই সাধারণ মানুষকেই ভোগান্তিতে ফেলেছেন, যাঁদের সমর্থন পাওয়ার জন্য এত আয়োজন!

কলকাতায় এ দিন দুপুরে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং এলাকায় মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা সন্তোষ মজুমদারের নেতৃত্বে মানব বন্ধন হয়। পরে শোভনদেবেরা অধ্যাদেশের প্রতীকী প্রতিলিপি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। হুগলির হরিপাল স্টেশনে রেল অবরোধই করে দেন তৃণমূল সমর্থকেরা! জমি আন্দোলনকে ঘিরে এক সময় উত্তাল হয়েছিল সিঙ্গুর। সেই জেলার আন্দোলনকারীদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে অধিগ্রহণের সময় উর্বর ও অনুর্বর জমির মধ্যে কোনও ভেদ থাকবে না।

হলদিয়ার সিটি সেন্টারের কাছে পৌনে এক ঘণ্টা অবরোধের জেরে শিল্পশহরে যানজট হয়। হলদিয়ার যুব তৃণমূল নেতা আজিজুল রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, “অবরোধ করিনি। রাস্তার পাশে বিক্ষোভ হয়েছে মাত্র।” বীরভূমের বোলপুরে তৃণমূল যুব সভাপতি নরেশচন্দ্র বাউরির নেতৃত্বে মিছিল-বিক্ষোভ হয়। উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ির হাসমিচক ও উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে এফসিআই মোড় আটকে বিক্ষোভ হয়।

তৃণমূলের মতো কেন্দ্রের ওই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করছে বামফ্রন্টও। আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে শুক্রবার রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠক বসছে। ওই দিনই দিল্লিতে ছয় বাম দলও এই বিষয়ে বৈঠক করবে। তৃণমূলের ছোঁয়াচ এড়িয়ে কী ভাবে নিজেদের মতো করে এর বিরোধিতা করা যায়, বামফ্রন্টের বৈঠকে তা নিয়েই আলোচনা হবে। সিপিএমের কৃষক সভার নেতা মদন ঘোষ এ দিন বলেন, “কোনও ভাবেই এই অধ্যাদেশ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্ত কেবল কৃষক-বিরোধীই নয়, গরিব মানুষের স্বার্থের বিরোধী।” আন্দোলনের রূপরেখা বামফ্রন্টের বৈঠকেই ঠিক হবে বলে মদনবাবু জানান। জমিহারাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট কথা অধ্যাদেশে কেন বলা নেই, তা নিয়ে সরব হয়েছেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ordinance upa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE