Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাঠে নেমে পড়ে বড়ি দিলেন মমতা, আপ্লুত গাঁয়ের লোক

গাড়ি থেকে নেমে মাঠে চলে গেলেন প্রার্থী। শেষ শীতের রোদ্দুর গায়ে মেখে সেখানে গ্রামের কয়েক জন মহিলা-পুরুষ বড়ি দিচ্ছিলেন। প্রার্থীও দেখাদেখি হাত দিলেন সেই কাজে। যা দেখে গাঁয়ের মেয়ে-বউদের চক্ষু চড়কগাছ। তাঁদেরই এক জন মঞ্জুরানি তো বলেই ফেললেন, “প্রার্থী নিজের হাতে বড়ি দিচ্ছেন, এমন দৃশ্য তো আগে দেখিনি। বেশ কাছের লোক বলে মনে হচ্ছে।”

আমি তোমাদেরই লোক, বার্তা তৃণমূল প্রার্থীর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

আমি তোমাদেরই লোক, বার্তা তৃণমূল প্রার্থীর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

গাড়ি থেকে নেমে মাঠে চলে গেলেন প্রার্থী। শেষ শীতের রোদ্দুর গায়ে মেখে সেখানে গ্রামের কয়েক জন মহিলা-পুরুষ বড়ি দিচ্ছিলেন। প্রার্থীও দেখাদেখি হাত দিলেন সেই কাজে। যা দেখে গাঁয়ের মেয়ে-বউদের চক্ষু চড়কগাছ। তাঁদেরই এক জন মঞ্জুরানি তো বলেই ফেললেন, “প্রার্থী নিজের হাতে বড়ি দিচ্ছেন, এমন দৃশ্য তো আগে দেখিনি। বেশ কাছের লোক বলে মনে হচ্ছে।”

রোড-শোর প্রথম দিনেই মাঠের বাইরে ছক্কা হাঁকালেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর।

প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পর থেকে ছোট ছোট কর্মিসভা করছিলেন। বৃহস্পতিবার থেকে রোড-শো শুরু করলেন মতুয়া বাড়ির বড় বৌ মমতা। তাঁরই স্বামী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে বনগাঁ কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। প্রচারে বেরিয়ে সে কথাও বললেন প্রার্থী। বললেন, “স্বামীর স্বপ্নপূরণ করতে ভোটে দাঁড়িয়েছি। আপনারা সকলে আশীর্বাদ করুন। এমন কাজ কখনও যেন না করি, যাতে আমার বা আমার পরিবারের দুর্নাম হয়।” ভোটারদের দিকে তাকিয়ে আরও বললেন, “দোয়া করবেন, আপনাদের সুখের দিনে না হোক, দুঃখের দিনে যেন পাশে থাকতে পারি। যেন ভাল কাজ করতে পারি।”

লোকসভায় এই প্রথম মহিলা প্রার্থী দেখল বনগাঁ। প্রার্থীকে দেখতে মেয়ে-বৌদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। এ দিন বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি পঞ্চায়েত এলাকায় বিশাল গাড়ির কনভয় নিয়ে ঘুরেছেন মমতা। পঞ্চায়েতগুলি হল, ছয়ঘড়িয়া, ঘাটবাওড়, গোপালনগর ১ ও ২, আকাইপুর ও ধর্মপুকুরিয়া। হুড খোলা গাড়িতে প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল। পরে গাড়িতে ওঠেন ঘাটবাওড় পঞ্চায়েতের প্রধান জেসমিন আরা খাতুন এবং প্রাক্তন প্রধান কাঞ্চন তরফদার।

ঘাটবাওড়ের পাইকপাড়া বাজার থেকে রওনা দেয় প্রার্থীর কনভয়। বনগাঁ-বাগদা রোড ধরে গাড়ি এগোতে থাকে ভাসানপোতা, হাজিপাড়া, কালমেঘা, অঙ্গার পুকুরিয়া, রামচন্দ্রপুর, বোয়ালদহর মতো ছোট ছোট গ্রামের মধ্যে দিয়ে। ছোট ইটের রাস্তা দিয়েও অনেক সময়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ে প্রার্থীর গাড়ি।

যেখানেই গিয়েছেন মমতা, মাইকে ঘোষণা শুনে ছুটে বেরিয়ে এসেছেন মানুষজন। কেউ বেরিয়ে এলেন দাড়ি কাটতে কাটতে। একগালে তখনও সাবান লেগে। কেউ আঁচলের খুঁটে হলুদের দাগ মুছতে মুছতে হেঁসেল ছেড়ে এক ছুটে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালেন। স্নান সেরে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন এক বধূ।

অঙ্গার পুকুরিয়ায় মাঠের মধ্যে বড়ি দিচ্ছিলেন কয়েক জন। তা দেখে সেখানে চলে আসেন মমতা। বয়স্ক দম্পতি শরৎচন্দ্র মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী সুভাষিণী মল্লিকের হাত ধরে টেনে নিজের মাথায় ছোঁয়ালেন মমতা। বললেন, “আপনাদের আশীর্বাদ চাই।” বৃদ্ধ চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসও ছিলেন পাশে। তাঁরও হাত টেনে নিজের মাথায় রাখেন প্রার্থী। সব দেখেশুনে তো গদগদ শরৎবাবু।

বললেন, “আমরাও তো মতুয়া। বাড়িতে হরিচাঁদের ছবিও আছে। তোমার কোনও চিন্তা নেই মা। অনেক বেশি ভোটে জিতবে তুমি।” প্রার্থীকে কাছে পেয়ে গ্রামের ইটের রাস্তাটি যাতে পাকা করা যায়, সেই আর্জি জানালেন চিত্তরঞ্জনবাবু। রহিমা বললেন, রাস্তাটির অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। ভোটের পরেই কাজ হবে।”

এ সব কথা যখন হচ্ছে, মমতা তত ক্ষণে মাঠে বসে পড়ে বড়ি দিতে শুরু করেছেন। তাঁকে দেখে রহিমাও হাত লাগালেন। এক গাল হেসে প্রার্থী বললেন, “বাঙালি মেয়েরা সব পারে। আমি লাঙল চালাতেও পারি। শুধু কেউ মুখ কালো করে কথা বললে সহ্য করতে পারি না।”

সুভাষিণীদেবীর মেয়ে গীতার বিয়ে হয়েছে লাগোয়া জেলা নদিয়ার চাকদহে। তাঁর তো মুখে হাসি আর ধরে না। বললেন, “এই বড়ি আমি শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাব। সকলকে দেখাব। বলব, ঠাকুরবাড়ির মায়ের হাতে তৈরি জিনিস।”

এড়াপোতার দিকে গাড়ি চাওয়ার সময়ে আসিয়া খাতুন নামে এক মহিলাকে ছুটতে ছুটতে গাড়ির দিকে আসতে দেখা গেল। প্রার্থীর উদ্দেশে চেঁচিয়ে বললেন, “আমার বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ত্রিপলের নীচে রাত কাটাচ্ছি। আমার বাড়ির ব্যবস্থা করুন।” গাড়ি চলতে চলতেই মমতা হাত তুলে আশ্বাস দেন, বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। আসিয়া পরে জানালেন, তিনিও তৃণমূল করেন। গ্রামের অনেকে সাহায্য পেলেও তিনি ঘর ভাঙার পরে কোনও সাহায্য পাননি। কেউ দেখছে না।

গাড়িতেই রুটি আর বাঁধাকপির তরকারি দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরেছেন মমতা। বললেন, “হাত নাড়তে নাড়তে তো ব্যথা হয়ে গেল।” এ তো সবে শুরু। এখনও প্রচার তো ঢের বাকি। একগাল হেসে মতুয়া-বাড়ির বড় বৌ বললেন, “ক’দিন ধরেই তো খাটাখাটনি শুরু হয়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamatabala matua bangaon by-election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE