Advertisement
E-Paper

মাতৃগর্ভ থেকে সাফল্যেও হাতে হাত যমজের

হৃদয় অভিন্ন মাতৃজঠর থেকেই। প্রায় সব কিছুর মতো মেধাতেও তাঁদের অপূর্ব মিল! ক্লাসে রোল নম্বরে পাশাপাশি থাকতেন। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও পেয়েছিলেন প্রায় একই নম্বর। এ বার মেডিক্যাল জয়েন্টেও কৃতী-তালিকায় কাছাকাছি হরিদেবপুরের দুই ভাই অভিষেক ও অভিনব সেনগুপ্ত। বৃহস্পতিবার জয়েন্টের কৃতী-তালিকায় অভিনব চতুর্থ। অভিষেক দ্বাদশ!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০৩:২৬
এ বারের যমজ কৃতী অভিষেক এবং অভিনব সেনগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

এ বারের যমজ কৃতী অভিষেক এবং অভিনব সেনগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

হৃদয় অভিন্ন মাতৃজঠর থেকেই। প্রায় সব কিছুর মতো মেধাতেও তাঁদের অপূর্ব মিল!

ক্লাসে রোল নম্বরে পাশাপাশি থাকতেন। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও পেয়েছিলেন প্রায় একই নম্বর। এ বার মেডিক্যাল জয়েন্টেও কৃতী-তালিকায় কাছাকাছি হরিদেবপুরের দুই ভাই অভিষেক ও অভিনব সেনগুপ্ত। বৃহস্পতিবার জয়েন্টের কৃতী-তালিকায় অভিনব চতুর্থ। অভিষেক দ্বাদশ!

সাত বছর পরে ফের ইতিহাসের সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গ। ২০০৫ সালে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার যমজ ভাই রজত ও রাকেশ সরকার মাধ্যমিকে একই নম্বর পেয়ে প্রথম ডিভিশনে পাশ করেছিল। দু’জনেই ৫৭৭। তারও ৪৫ বছর আগে, ১৯৬০-এ দার্জিলিং গভর্নমেন্ট স্কুলের ছাত্র, যমজ ভাই অসীম (পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী) ও অতীশ দাশগুপ্ত (শিক্ষাবিদ) সাবেক স্কুল ফাইনালে একই নম্বর পেয়েছিলেন। পরে দু’জনের পথ ভিন্ন হয়ে যায়। অসীমবাবু চলে যান অর্থনীতিতে। অতীশবাবু ইতিহাসে।

’৯০-এর ৮ জানুয়ারি তিন ঘণ্টার ব্যবধানে গাইঘাটার রজত-রাকেশের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই দু’ভাইয়ের মধ্যে অদ্ভুত মিল বলে গ্রামবাসীরা তাদের ‘রাম-লক্ষ্মণ’ বলে ডাকেন। হরিদেবপুরের দাদা অভিষেকের থেকে ভাই অভিনবের জন্মের ব্যবধান মাত্র এক মিনিটের! চেহারায় অদ্ভুত মিল তাঁদের। গলার স্বরেও!

অভিষেক জানান, বারো ক্লাসে তাঁর রোল নম্বর ছিল তিন। ভাইয়ের দুই। সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় অভিনব পেয়েছেন ৯৬.২ শতাংশ নম্বর। অভিষেক গায়ে গায়ে, ৯৬ শতাংশ! পড়াশোনার ক্ষেত্রেও পরস্পরের সহযোগী দু’ভাই।

“তা বলে বাড়িতে শান্ত থাকে না। ছোটখাটো নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকে,” বললেন কৃতী যমজের মা রীনা সেনগুপ্ত।

ওই যমজের সাফল্যে খুশি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীমবাবু। ২০০৫ সালের স্মৃতি উস্কে বললেন, “রজত-রাকেশের বাবা ছিলেন প্রান্তিক চাষি। খুবই গরিব পরিবার থেকে উঠে এসেছিল ওরা।” সেই দু’ভাইকে সাহায্য করেছিলেন অসীমবাবু ও অতীশবাবু। অসীমবাবু বললেন, “ওদের এক ভাই ভাল চাকরি পেয়েছে শুনেছি।” রজত ও রাকেশ দু’জনেই মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে এমএসসি পাশ করেছেন। বিএসসি, এমএসসি-তে দু’ভাইয়েরই নম্বর কাছাকাছি। রজত চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন। রাকেশ কলেজে শিক্ষকতা করতে চান। তাই নেট-এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। রজত বলেন, “চাকরি পেয়েছি বটে, কিন্তু ভাইয়ের মতো আমিও নেট-এর জন্য তৈরি হচ্ছি।” এত বছর পরে ফের অভিষেক-অভিনব দু’ভাই ভাল ফল করায় গাইঘাটার যমজ ভাইও খুশি। তাঁরা হরিদেবপুরের কৃতী যমজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

হরিদেবপুরের এই যমজ অবশ্য সচ্ছল পরিবারের সন্তান। বাবা অভিজিৎ সেনগুপ্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উচ্চ পদে আছেন। ছেলেদের সাফল্যের খবর পেয়ে এ দিন বাড়ি চলে আসেন। সেই থেকে পরিচিত-পরিজনের ফোনে ব্যস্ত তিনি।

বারবার যমজের এমন কৃতিত্বের কারণ কী? এর পিছনেও কি আছে বিজ্ঞানের অবদান?

শারীরবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, এই ধরনের কৃতিত্ব মূলত একই ধরনের চেহারা নিয়ে জন্মানো যমজের (বিজ্ঞানের ভাষায় আইডেন্টিক্যাল টুইন বা সদৃশ যমজ)। এদের জন্মরহস্যই তার কারণ। মাতৃগর্ভে একটি ভ্রূণকোষ বিভাজিত হয়ে দু’টি কোষে পরিণত হয়। তার থেকেই সমলিঙ্গের, একই চেহারার দু’টি শিশু জন্ম নেয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যার অধ্যাপক, স্নায়ুবিজ্ঞানী তুষার ঘোষ বলেন, “এর ফলেই দু’জনের মস্তিষ্কের গঠন ও গুণগত মান প্রায় এক হয়। দু’জনের মেধাও হয় প্রায় সমান।” তবে শুধু মেধা এক থাকলেই হবে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দু’জনকে বড় হয়ে উঠতে হবে একই পরিবেশে। অন্যথা হলে অর্থাৎ দু’টি আলাদা পরিবেশে বড় হলে মেধার উপরেও তার প্রভাব পড়ে।

অসীমবাবু-অতীশবাবু, রজত-রাকেশ, অভিষেক-অভিনব তিন জোড়া ভাই-ই বেড়ে উঠেছেন একই পরিবেশে। তাই তাঁদের মধ্যে সমমেধার স্ফুরণ ঘটেছে বলে মনে করেন স্নায়ুবিজ্ঞানীরা। তুষারবাবু বলেন, “মানুষের চরিত্রে, গুণাবলিতে জন্মগত প্রভাব ও পরিবেশ, দুইয়েরই অবদান থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষায় তা প্রমাণিত।”

সাফল্যে সমতায় অভিষেক আর অভিনব কতটা খুশি?

জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মেধা-তালিকায় ওই যমজ যেখানে রয়েছেন, তাতে একই মেডিক্যাল কলেজে দু’জনে ভর্তি হতে পারবেন। তাঁদের সব থেকে আনন্দ দিচ্ছে এটাই।

twin brothers joint entrance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy