Advertisement
E-Paper

মৃত্যুর ছায়া সত্ত্বেও পুজো হবেই, বলছেন বিধায়ক

এখনও ৪৮ ঘণ্টা কাটেনি, গাঁধীনগরের পুজো মণ্ডপেই উদ্যোক্তাদের হাতে মার খেয়ে মৃত্যু হয়েছে সেখান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা মাছ বিক্রেতা শম্ভু চক্রবর্তীর (৪১)। বাঁশের উপরে ত্রিপল চাপানো, সবে বাইরের দিকে নীল কাপড় দিয়ে সাজানো শুরু হয়েছিল মণ্ডপে। আর সেই মণ্ডপের খুঁটিতে বেঁধেই শম্ভুকে বেধড়ক মেরেছিলেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ, নেশার বদ অভ্যাস ছিল। শম্ভুর মাছ বিক্রি করে বিশেষ আয় ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪১

এখনও ৪৮ ঘণ্টা কাটেনি, গাঁধীনগরের পুজো মণ্ডপেই উদ্যোক্তাদের হাতে মার খেয়ে মৃত্যু হয়েছে সেখান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা মাছ বিক্রেতা শম্ভু চক্রবর্তীর (৪১)। বাঁশের উপরে ত্রিপল চাপানো, সবে বাইরের দিকে নীল কাপড় দিয়ে সাজানো শুরু হয়েছিল মণ্ডপে। আর সেই মণ্ডপের খুঁটিতে বেঁধেই শম্ভুকে বেধড়ক মেরেছিলেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ, নেশার বদ অভ্যাস ছিল। শম্ভুর মাছ বিক্রি করে বিশেষ আয় ছিল না। বৃহস্পতিবার ভোরে পাড়ার পুজো মণ্ডপে কাজ করা কর্মীদের ১০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন খোয়া যায়। পাশেই শম্ভুর এক চিলতে ঘর। উদ্যোক্তাদের পরিবারের এক জন বলেও ফেলেন, শম্ভুকে ভোরে মণ্ডপের কাছে দেখা গিয়েছিল। আর তাতেই ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশ পায়। শম্ভুকে টেনে-হিঁচড়ে এনে পুজো মণ্ডপের বাইরে খুঁটিতে বেঁধে চলে গণ জেরা। চড়-থাপ্পরও চলতে থাকে। তার সঙ্গে মণ্ডপ তৈরির বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় তাঁকে। আহত শম্ভুর মৃত্যু হয় শুক্রবার। তার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনার পারদ চড়ে। রাতে শম্ভুর মৃতদেহ নিয়ে এলাকায় মিছিলও করেন বাসিন্দাদের একাংশ। চুরির ঘটনায় সন্দেহ হলেও আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে খুঁটিতে বেঁধে গণপ্রহারের অধিকার সভ্য সমাজে বসবাসকারীদের কে দিল, এই প্রশ্ন আইনের রক্ষকদের পাশাপাশি এলাকাবাসীরাও করছেন। অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে।

যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি পানিহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড। তার নির্বাচিত প্রতিনিধি চেয়ারম্যান স্বপন ঘোষ নিজেই। তিনি পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষের ভাই। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক তারক গুহ-সহ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই চেয়ারম্যান বা বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। শুক্রবার রাত থেকেই কার্যত বাড়িছাড়া সকলে। তারকবাবুর প্রতিবেশী অসীম দাস বলেন, “শম্ভুকে চুরি করতে কেউ দেখেনি। শুধু সন্দেহের বশে ওকে মারা ঠিক হয়নি।” শুক্রবারই খড়দহ থানায় পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছেলেকে পিটিয়ে খুন ও খুনের ঘটনায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ করেছেন শম্ভুর মা মানু চক্রবর্তী। মানুদেবীর অভিযোগ, “শম্ভু রোজ ভোরে মাছ কিনতে বেরোয়। তার পরে বিক্রি করে। মণ্ডপের পাশেই আমাদের বাড়ি। কেউ ভোরে মণ্ডপের কাছে দেখেছিল ওকে। তাতেই রটে গেল ও চোর। আমার ছেলে চুরি করেনি। কিন্তু সে কথা প্রমাণের আগেই ওকে মেরে ফেলল। এর পরেও ওদের কোনও দুঃখ নেই। আবার পুজো করবে!”

পুলিশ শুক্রবার রাতেই পুজো কমিটির তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিরা পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে এলাকায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নজরদারিও শুরু হয়েছে। কিন্তু শনিবার দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যাননি বিধায়ক বা তাঁর চেয়ারম্যান ভাই। স্বপনবাবু বলেন, “আমি অসুস্থ। তাই বেরোনোর উপায় ছিল না। পরিস্থিতির উপরে নজর আছে। আইন হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আর এর সঙ্গে পুজো বন্ধ হওয়ার সম্পর্ক কোথায়?” ঘটনাস্থলে যাননি বিধায়ক নির্মলবাবুও। তিনি বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া কিছু বলার নেই। আইন আইনের পথে চলুক। কিন্তু পুজো বন্ধ করা চলবে না। পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন স্থানীয়েরা। সেটা এ ভাবে বন্ধ করা যায় না।” কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পুজো হবে কী করে, প্রশ্ন বাসিন্দাদেরই। যেখানে একটি নিরীহ ছেলেকে ওই পুজো মণ্ডপেই পিটিয়ে, বাঁশ দিয়ে থেঁতলে মারা হল, সেখানেই অঞ্জলি দেবেন, ভোগ খাবেন সকলে? তা ছাড়া মণ্ডপকর্মীরাও এই ঘটনার পরে কাজ ফেলে পালিয়ে গিয়েছেন। শনিবারও থমথমে পরিস্থিতি। পুলিশি তল্লাশি চলেছে এলাকার বহু বাড়িতে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধ্যন সি সুধাকর বলেন,“পুজো হবে কি না, তা আমাদের ভাবার বিষয় নয়। শুধু সন্দেহের বশে কাউকে পিটিয়ে মারার অধিকার কে দিয়েছে পুজো কমিটির কর্তাদের? প্রশাসনিক ভাবে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, আমরা নিচ্ছি।”

পুলিশ পিকেট, টহল সবই চলেছে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, পুজো পর্যন্ত ওই পিকেট ও টহল থাকবে গাঁধীনগরে। পুজো হবে কি হবে না, তা এখনও মনস্থ করতে পারেননি বাসিন্দারা। সংস্কার না মানবিকতা, শেষ পর্যন্ত কোনটা বেশি গুরুত্ব পাবে? তা নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে এখনও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

panihati gandhinagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy