Advertisement
E-Paper

মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ

রাজ্যের স্কুলগুলিতে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িক ভাবে স্থগিত করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনকে (এসএসসি) স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, বিএড উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পৃথক তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:৩৬

রাজ্যের স্কুলগুলিতে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িক ভাবে স্থগিত করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনকে (এসএসসি) স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, বিএড উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পৃথক তালিকা প্রকাশ করতে হবে। বিএড ডিগ্রিধারীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার পরেই অন্যদের নিয়োগপত্র দেওয়া যাবে। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে এসএসসি একটিই তালিকা প্রকাশ করেছে। তারই নিরিখে সোমবার হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের কোনও সুপারিশ করতে পারবে না।

এই স্থগিতাদেশের ফলে ইতিমধ্যে যে সব শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়ে গিয়েছে, যাঁদের সুপারিশ এসএসসি-র অফিস, ডাকঘর বা কোনও স্কুলে পড়ে রয়েছে সেগুলি কোনওটাই আপাতত কার্যকর করা যাবে না। যাঁদের সুপারিশ জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিসের (ডিআই অফিস) অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলো আপাতত বৈধ বলেই গণ্য হবে না। যাঁদের নিয়োগ ইতিমধ্যেই স্কুল পরিদর্শকের অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে, সেগুলিকে অবশ্য এখনই অবৈধ বলেনি হাইকোর্ট। কিন্তু ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশে যদি গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াটা বাতিল হয়ে যায়, তা হলে এঁদের সকলের চাকরি নিয়েও টানাটানি শুরু হবে বলে আইনজীবীদের একাংশের আশঙ্কা।

এ দিন বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি-র কোনও সুপারিশ কার্যকর না-করার নির্দেশ দিয়েছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি, পরবর্তী শুনানির দিন কমিশন কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে, আদালতের নির্দেশ তাঁরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। ওই দিন মামলাটিতে রাজ্য সরকারকেও যোগ দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি এ দিন বলেন, এসএসসি-র ঘাড়ে দায় চাপিয়ে রাজ্য সরকার দূরে সরে থাকতে পারে না। সরকারের আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্যকে বিচারপতি এ দিন এই নির্দেশ জানিয়ে দেন।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ প্রসঙ্গে শুধু বলেন, “আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হবে। রায়ের প্রতিলিপি হাতে পেয়েই যা বলার বলব।” এসএসসি এখন কী করবে? কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যও জানিয়েছেন ৬ ফেব্রুয়ারি কী হয় দেখে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। বিতর্ক এড়াতে যৌথ তালিকা ভেঙে ক্যাটিগরি ভিত্তিক তালিকা আলাদা ভাবে প্রকাশ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। যদিও ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০ হাজার প্রার্থীর চাকরি হয়ে যাওয়ার পরে এখন নতুন করে তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

গত ফেব্রুয়ারিতেই তানিয়া ঘোষ নামে এক প্রার্থীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, বিএড ডিগ্রিধারী এবং বিএড ডিগ্রিহীনদের নামের তালিকা আলাদা করে প্রকাশ করতে হবে। রায়ে বলা ছিল, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-র নিয়ম অনুযায়ী টেট, বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হলে চূড়ান্ত তালিকায় প্রার্থীর নাম উঠবে। ওই নিয়মেই বলা আছে, বিএড ডিগ্রিধারীদের কোনও মতেই বঞ্চিত করা যাবে না। নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তাঁরাই পাবেন। তবে যে হেতু এ রাজ্যে বিএড ডিগ্রিধারীর সংখ্যা শূন্যপদের তুলনায় কম, তাই বিএড ডিগ্রিধারীদের নিয়োগের পরে অন্যদের নেওয়া যাবে। পরবর্তী দু’বছরের মধ্যে তাঁদের বিএড ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত তাই বিএড-প্রাপ্ত এবং বিএড-হীনদের দু’টি তালিকা তৈরি করতে বলেছিলেন।

কিন্তু বাস্তবে সেই রায় মানেনি এসএসসি। একটিই তালিকা প্রকাশ করেছে তারা। এবং বিষয়ভিত্তিক যে সব তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে প্রার্থীর নাম, রোল নম্বর, র্যাঙ্ক ইত্যাদি থাকলেও তিনি বিএড ডিগ্রিধারী কি না বা সংরক্ষিত পদের প্রার্থী কি না, তার উল্লেখ নেই। মামলাকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় একটি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এ দিন বিচারপতির হাতে তুলে দিয়ে অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দলীয় সমর্থকদের ঢোকানোর জন্য মেধার সঙ্গে আপস করা হয়েছে। এই তালিকা মানলে মেধাবীরা সুযোগ পাবেন না। তাতে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হবে। সুব্রতবাবু বলেন, এসএসসি সব জেনেশুনে রায়ের প্রতিলিপি দেখার পরেও আদালতকে অবমাননা করার জন্যই এই ভাবে তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকাটিও আবার সবাই দেখতে পাবেন না। যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, কেবল তাঁরাই দেখতে পাবেন।

যে পরীক্ষার তালিকা নিয়ে বিতর্ক, সেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২-র ২৯ জুলাই। তার দ্বিতীয় পত্র বা টেট-এর ফল বেরোয় ওই বছরের ডিসেম্বরে। গত বছর অগস্টে প্রথম পত্র বা বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হয়। ইন্টারভিউ নিয়ে শিক্ষক সুপারিশের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত বছরের শেষ থেকে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। তিনি এ দিন বলেন, “আমি এখন কোনও মন্তব্য করব না। তবে কমিশন স্বচ্ছ ভাবে কাজ করেছে। যুক্তি দিয়ে কমিশনের কাজ সমর্থন করতে পারি।”

কিন্তু এসএসসি-র নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভের পথে নেমেছেন বহু প্রার্থী। অভিযোগ, প্রথম দিকের প্রার্থীদের ডিঙিয়ে তালিকায় পিছনে থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন। এই অভিযোগে এ দিনই বেশ কিছু প্রার্থী সল্টলেকে এসএসসি-র প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান। এঁদের কেউ বালুরঘাট, কেউ বেলপাহাড়ি, কেউ ক্যানিং থেকে এসেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ইন্টারভিউতে সফল হয়ে চূড়ান্ত মেধাতালিকায় ঠাঁই পাওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে তাঁরা কাউন্সেলিংয়েই ডাক পাননি। এঁদের প্রতিনিধিদল এ দিন কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। যদিও ইতিমধ্যেই দু’দফায় কাউন্সেলিংয়ে প্রায় ৩০ হাজার প্রার্থী নিয়োগের সুপারিশ হয়ে যাওয়ার পরে কমিশন নতুন করে কী দেখবে, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। অনেকেরই ধারণা, কমিশন এখন যা-ই করুক, আইনি জটিলতা বাড়বে।

এসএসসি-র নিয়োগ নিয়ে আরও অন্তত ১৩টি মামলা রয়েছে হাইকোর্টে। বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে সেগুলি দায়ের করেছেন আইনজীবী কার্তিক কাপাশ, সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেই মামলাগুলির শুনানি হবে ১৯ মার্চ। এ দিন এসএসসি-র আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় যখন কিছু নথি বিচারপতির কাছে জমা দিচ্ছিলেন, তখন কমিশনের সহ-সচিব অমিতেশ বিশ্বাস তাঁকে কিছু পরামর্শ দেন। ক্ষুব্ধ বিচারপতি তা দেখে অমিতেশবাবুর পরিচয় জানতে চান। তিনি কমিশনের সহসচিব জানার পরে বিচারপতি বলেন, “আপনি এখানে কেন? শুনানি চলাকালীন আপনি আদালতের নিয়ম বহির্ভূত কাজ করছেন।” অমিতেশবাবু তখন এজলাস ছেড়ে চলে যান।

teacher appoint madhyamik
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy