Advertisement
E-Paper

মানসদের লড়াইয়ে নামাতে ব্যর্থ রাহুলও

স্বয়ং রাহুল গাঁধীর নির্দেশও তাঁদের ভোটের লড়াইয়ে নামাতে পারল না। চাপের মুখে তখন ঘাড় নেড়ে এলেও মানস ভুঁইয়া, শঙ্কর সিংহ, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো প্রবীণ নেতারা পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছেন কিছুতেই প্রার্থী হতে চান না তাঁরা। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের খবর, প্রদেশ কংগ্রেসের এই নেতাদের আচরণে অসন্তুষ্ট রাহুলও। গত সপ্তাহেই দিল্লিতে এই প্রবীণ নেতাদের বৈঠকে ডেকে রাহুল বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দলের এখন অস্তিত্বের সঙ্কট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪১
মানস ভুঁইয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং শঙ্কর সিংহ।

মানস ভুঁইয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং শঙ্কর সিংহ।

স্বয়ং রাহুল গাঁধীর নির্দেশও তাঁদের ভোটের লড়াইয়ে নামাতে পারল না। চাপের মুখে তখন ঘাড় নেড়ে এলেও মানস ভুঁইয়া, শঙ্কর সিংহ, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো প্রবীণ নেতারা পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছেন কিছুতেই প্রার্থী হতে চান না তাঁরা।

কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের খবর, প্রদেশ কংগ্রেসের এই নেতাদের আচরণে অসন্তুষ্ট রাহুলও। গত সপ্তাহেই দিল্লিতে এই প্রবীণ নেতাদের বৈঠকে ডেকে রাহুল বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দলের এখন অস্তিত্বের সঙ্কট। আপনাদের সবারই উচিত প্রার্থী হয়ে মানুষের কাছে যাওয়া। এতে সংগঠনও চাঙ্গা হবে। অথচ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে আগামী কাল যখন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক বসছে, তার আগে এঁরা সকলেই বেঁকে বসেছেন। তা সে প্রাক্তন দুই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া বা প্রদীপ ভট্টাচার্যই হোন, বা শঙ্কর সিংহ, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো জেলার দাপুটে নেতারা।

একমাত্র ব্যতিক্রম বর্ষীয়ান আব্দুল মান্নান। পায়ে চোটের জন্য তিনিও প্রথমে প্রার্থী হতে রাজি হননি। কিন্তু মান্নান সাহেব জানিয়ে দিয়েছেন, দল তাঁকে প্রার্থী বাছলে তিনি ভোটে লড়ার জন্য তৈরি। আর প্রবীণদের দলে একেবারেই অন্য রকম সোমেন মিত্র। তৃণমূলের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই কলকাতা-উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে হইহই করে প্রচারে নেমে পড়েছেন তিনি।

লোকসভা ভোটের মাত্র দু’মাস আগে প্রদেশ সভাপতি পদের দায়িত্ব রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে দিয়েছেন রাহুল। গোড়ায় অধীরবাবুরই প্রস্তাব ছিল, প্রবীণ নেতারা সকলে প্রার্থী হোন, যাতে সিপিএম ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দেওয়া যায়। পরবর্তী কালে রাহুল গাঁধীও প্রদেশ নেতাদের ডেকে একই কথা বলেন। মজার বিষয়, রাহুলের সামনে মানসবাবু, প্রদীপবাবুরা প্রার্থী না-হওয়ার ব্যাপারে নিজ নিজ যুক্তি দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু রাহুল ‘শেষ কথা’ জানিয়ে দেওয়ার পর তাতে সম্মতি দিয়েই বেরিয়ে আসেন।

অথচ তার পর যখন অধীরবাবু তাঁদের প্রার্থী হওয়ার কথা বলেন, ফের বেঁকে বসেন এঁরা। সূত্রের খবর, তাঁকে যাতে প্রার্থী করা না-হয় সে জন্য কাকুতি-মিনতি শুরু করেন মানস ভুঁইয়া। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, অধীরবাবু মানসবাবুকে ঘাটাল থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আসানসোল, শঙ্কর সিংহকে কৃষ্ণনগর, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বর্ধমান-দুর্গাপুর, অরুণাভ ঘোষকে দমদম এবং আব্দুুল মান্নানকে শ্রীরামপুর থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু মান্নান ছাড়া কেউই কার্যত রাজি হননি। সে জন্য তাঁরা নানা যুক্তিও সাজিয়েছেন। প্রদীপবাবু বলেন, তাঁর বয়স হয়েছে, নবীনদের এগিয়ে আসা উচিত। মানস ভুঁইয়া শেষমেশ প্রার্থী করার জন্য তাঁর স্ত্রীকে এগিয়ে দেন। শঙ্করবাবু বলেন, তিনি মোটেই হারতে প্রস্তুত নন। আর রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বর্ধমান-দুর্গাপুর তো তাঁর এলাকাই নয়।

প্রশ্ন উঠেছে, রাহুল গাঁধী কঠোর ভাবে নির্দেশ দিলে এই নেতারা কি তা অমান্য করার সাহস পেতেন? জবাবে রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “জোর করে তো কাউকে প্রার্থী করা যায় না। অধীরবাবুও যদি জোরাজুরি করতেন, ভোটের আগে দলের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়ে যেত। তবে কার কত দৌড়, এটা অন্তত বোঝা গেল।”

অধীর চৌধুরীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ওঁদের প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম, এটা ঠিক। কিন্তু কেউই শেষ পর্যন্ত রাজি হননি।” তাঁর কথায়, “ভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য জেদ দরকার। তবে এটা ঠিক যে এঁদের কথায় স্ববিরোধিতা ধরা পড়ছে। এক দিকে বলছেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। আবার প্রার্থী হবেন কি না, নিজেই তা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন!” তা হলে ৪২টি আসনে কাকে প্রার্থী করবেন? অধীরবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “কংগ্রেস এতো বড় একটা দল, যোগ্য প্রার্থীর অভাব নাকি?”

কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক হওয়ার আগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম জানাতে চাননি অধীরবাবু। কারণ, অনেক আসনেই একের বেশি প্রার্থীর নাম রয়েছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ১৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। কালকের বৈঠকের পর পরশু রাজ্যের বাকি আসনগুলিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে। তার আগে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, শ্রীরামপুর আসনে আব্দুুল মান্নানকে প্রার্থী করা হতে পারে, ঘাটালে জগন্নাথ গোস্বামীর কথা ভাবা হচ্ছে। আসানসোলে প্রার্থী হতে পারেন মনোজ পাণ্ডে, বোলপুরে অসিত মাল। এ ছাড়া ঝাড়গ্রামে অনিতা হাঁসদা, বসিরহাটে আব্দুর রহিম ও মেদিনীপুরে বিমল রাজ-এর নাম থাকার সম্ভাবনা। বিজেপি-বিমল গুরুঙ্গ জোট হওয়ার আগেই অধীরবাবু জানিয়েছিলেন, দার্জিলিং কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে কংগ্রেস। সেই দৌড়ে রয়েছেন শঙ্কর মালাকার, দাওয়া নরবুলা-সহ একাধিক নেতা।

কিন্তু কংগ্রেস সূত্রের খবর, সম্ভাব্য এই প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করার থেকেও রাহুলের দরবারে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু রাজ্যের প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের আচরণ। খোদ রাহুল নির্দেশ দেওয়ার পরেও তাঁরা যে ভোটে দাঁড়াতে চাইলেন না, তাতেই বিস্মিত কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

pradesh congress loksabha election manas bhunia shankar singh pradip bhattacharyya rahul gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy