নকল চাবি বানিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র দফতরে ঢুকে মঙ্গলবার দিনভর নাটকের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। আর বুধবার পুলিশের তলব পেয়েও তাদের মুখোমুখি হলেন না এসএসসি-র ‘রিলিজ’ পাওয়া সহ-সচিব অমিতেশ বিশ্বাস। তাঁর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে সল্টলেক পূর্ব থানার পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক প্রবণতা, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি, জমায়েত করে আক্রমণ করা-সহ মোট পাঁচটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ দিনই রাজ্য সরকারের কর্মিবর্গ দফতরের তরফে এসএসসি-কর্তৃপক্ষের কাছে অমিতেশবাবুর ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। অমিতেশবাবু ডব্লিউবিসিএস অফিসার। তাই স্বরাষ্ট্র কর্মিবর্গ দফতরই তাঁর নিয়ন্ত্রক। নবান্ন সূত্রের খবর, অমিতেশবাবুর ব্যাপারে এসএসসি-র রিপোর্ট বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সল্টলেক পুলিশ এ দিন অমিতেশবাবুকে তলব করে। কিন্তু তিনি সেখানে যাননি। তার বদলে এ দিন তিনি নবান্নে কর্মিবর্গ প্রশাসনিক দফতরে গিয়ে এসএসসি-র দফতরে গোলমালের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। অমিতেশবাবু জানান, সল্টলেক পূর্ব থানার আইসি শেখর রায় তাঁকে ফোন করে থানায় হাজিরা দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনও বেআইনি কাজ করেননি। তা ছাড়া এ ভাবে তিনি হাজিরা দিতে পারেন না। কী করণীয়, সেই বিষয়ে তিনি নবান্নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দেশ চাইবেন বলে জানান অমিতেশবাবু।
তলব পেয়েও তিনি পুলিশের মুখোমুখি হলেন না কেন?
অমিতেশবাবু বলেন, “সরকারের অনুমতি ছাড়া এসএসসি-র চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন না। কিন্তু উনি সেটাই করেছেন। বিষয়টি আমি কর্মিবর্গ দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরা কী করেন দেখি। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হব।” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এখন থেকে কি তা হলে নবান্নেই বসবেন? সরাসরি জবাব এড়িয়ে ওই আমলার জবাব, “কাজ করছি। আমাকে একটু কাজ করতে দিন।”
মঙ্গলবার এসএসসি দফতরে গোলমালের পরেই অমিতেশবাবুকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র কর্মিবর্গ দফতর। যদিও অমিতেশবাবুর দাবি, নবান্ন থেকে তিনি এই ব্যাপারে কোনও লিখিত নির্দেশ পাননি।
২০১২-র এসএসসি পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে সোমবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন অমিতেশবাবু। ওই দিন সন্ধ্যাতেই এসএসসি-র সহ-সচিব পদ থেকে তাঁকে ‘রিলিজ’ করে দেওয়া হয় বলে জানান কমিশন-প্রধান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। তার সূত্র ধরেই শুরু হয় বিতর্ক। বিসিএস অফিসার অমিতেশবাবুর নিয়ন্তা নবান্নের কর্মিবর্গ দফতরের কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন ওঠে, এসএসসি-কর্তৃপক্ষ তাঁকে এ ভাবে ‘রিলিজ’ দিতে পারেন কি? খোদ অমিতেশবাবুর বক্তব্য, এসএসসি-প্রধান এটা করতে পারেন না। সরকারি মহলেরও অভিমত, এসএসসি-র সহ-সচিবের পদ থেকে তাঁকে রিলিজের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি থেকে গিয়েছে। তিনি যে-হেতু বিসিএস অফিসার, তাই তাঁর ব্যাপারে কর্মিবর্গ দফতরই রিলিজের নির্দেশ জারি করতে পারে।
বিতর্কিত রিলিজের মধ্যেই মঙ্গলবার সল্টলেকে এসএসসি-র দফতরে অমিতেশবাবুকে কেন্দ্র করে দিনভর গোলমাল হয়। তার জেরে ওই দিন বিকেলে এসএসসির দফতর চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করে সল্টলেক পুলিশ। সল্টলেক কমিশনারেটের কাছে অমিতেশবাবুর বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, রক্ষীকে মারধর, জোর করে দফতরে সহ-সচিবের নির্দিষ্ট ঘরে ঢোকার মতো বেশ কিছু অভিযোগ করেন এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। তার ভিত্তিতেই মামলা রুজু করে পুলিশ। মঙ্গলবারের ঘটনা সম্পর্কে বুধবার তিনি
স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিব অর্ণব রায়কে রিপোর্ট দিয়েছেন বলে জানান সুবীরেশবাবু।