Advertisement
০৮ মে ২০২৪

মদনের জন্য মিছিলে সবাই আসছেন কি

সারদাকাণ্ডে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ, শনিবার ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে থেকে ক্রীড়াবিদদের মিছিলের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। সিবিআই মদনকে গ্রেফতার করার কিছু পরেই এই মিছিলের কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ‘ক্রীড়াক্ষেত্রকে আঘাত করেছে সিবিআই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ডাকা মিছিলে শেষ পর্যন্ত কত জন ক্রীড়াবিদ থাকবেন, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ে রয়েছেন সংগঠকরাই।

মদন মিত্রের সঙ্গে এক ঝাঁক প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ।—ফাইল চিত্র

মদন মিত্রের সঙ্গে এক ঝাঁক প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ।—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

সারদাকাণ্ডে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ, শনিবার ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে থেকে ক্রীড়াবিদদের মিছিলের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। সিবিআই মদনকে গ্রেফতার করার কিছু পরেই এই মিছিলের কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

‘ক্রীড়াক্ষেত্রকে আঘাত করেছে সিবিআই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ডাকা মিছিলে শেষ পর্যন্ত কত জন ক্রীড়াবিদ থাকবেন, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ে রয়েছেন সংগঠকরাই। চুনী গোস্বামীর মতো বাংলার খেলার অন্যতম ‘আইকন’ যেমন “এতে রাজনীতির গন্ধ আছে” বলে সরে দাঁড়িয়েছেন, তেমনই রাজ্যের প্রথম মহিলা ‘অর্জুন’ শান্তি মল্লিক প্রশ্ন তুলেছেন মিছিলের যৌক্তিকতা নিয়েই। চুনী বলে দিলেন, “মদনবাবু দক্ষ সংগঠক। প্রচুর কাজ করেছেন। তবে আমি কোনও দিন রাজনীতিতে নেই। মিছিলে তাই যাওয়ার প্রশ্ন নেই।” আর শান্তির প্রতিক্রিয়া, “মমতাদিকে ভালবাসি। কিন্তু যে কারণে মদনদা গ্রেফতার হয়েছেন, তার জন্য মিছিল করতে যাব কেন? ওরা ফোন করেছিল। বলে দিয়েছি, যাব না।”

ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের অনেক খেলোয়াড়ই মিছিলের কথা শুনে নানা অছিলায় পিঠটান দিতে শুরু করেছেন! ময়দানে ফিসফাস, এঁদের বেশির ভাগই মদনের বদান্যতায় ‘ফুটবল-রত্ন’, ‘কোচ-রত্ন’ হয়েছেন। কেউ পেয়েছেন টাকা। কেউ খেলার সরঞ্জাম। অন্য দিকে শনিবারের মিছিলে যোগ দেবেন বলে যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগের সাফ বক্তব্য, ব্যক্তি মদনের জন্যই তাঁরা হাঁটবেন। বাংলার প্রথম দ্রোণাচার্য সৈয়দ নইমুদ্দিন মিছিলে যাচ্ছেন। তবে কেন, তা নিজেই বলতে পারলেন না! “গৌতমরা বলল, তাই যাচ্ছি। কাল যাওয়ার পর বলব কেন মিছিলে হাঁটলাম।” শহরের বাইরে থাকায় মিছিলে যোগ দিচ্ছেন না সুব্রত ভট্টাচার্য। কোচবিহার থেকে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফোনে বললেন, “মদনের গ্রেফতার নিয়ে মন্তব্য করব না। আর আমি শহরেই নেই। মিছিলে যাব কী করে?” থাকলে যোগ দিতেন? “সেটা আর এখন বলে কী লাভ?”

গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরী, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদেশ বসুর মতো সাতের দশকের এক ঝাঁক তারকা ফুটবলার জানিয়ে দিলেন, তাঁরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হাঁটবেন মিছিলে। ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘরে এঁদের প্রায়ই দেখা যেতো। মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা গৌতম সরকার। তাঁকে রাজ্য ফুটবল অ্যাকাডেমিতে টিডি বানিয়েছেন মদনই। গৌতম বললেন, “মদনের মতো ক্রীড়ামন্ত্রী কখনও বাংলা পায়নি। খেলাধূলার জন্য উনি যা করেছেন, কেউ করেননি। ওর গ্রেফতার মানতে পারছি না।” সাতের দশকের আর এক ময়দান কাঁপানো ফুটবলার সমরেশের বক্তব্য, “কোথায় কী রাজনীতি হচ্ছে, জানি না। আমরা ব্যক্তি মদনের জন্য মিছিলে হাঁটছি।” একই মত বিদেশ-শ্যামলদেরও। মানস ভট্টাচার্য এখনও দোটানায়। তাঁর মা অসুস্থ। বলেন, “দেখি যেতে পারি কি না।” সাতের দশকের আগের বা পরবর্তী সময়ের ফুটবলাররা মিছিলে হাঁটবেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

দীপেন্দু বিশ্বাস অবশ্য হাঁটবেন। বসিরহাট বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন তিন প্রধানে খেলা এই স্ট্রাইকার। দীপেন্দু সেই অর্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের লোক। তিনি বলেন, “আমি ফুটবলার হিসাবে বলছি, মদনদার মতো মানুষ হয় না। একবার একটা ফোন করতেই চলে এসেছিলেন আমাদের একটি গ্রামের প্রদর্শনী ম্যাচে পুরস্কার দিতে। হাতের আংটি খুলে দিয়ে সাহায্য করেছিলেন দুই ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়েকে। ওনার জন্য কিছু হলেই আমি যাব। মিছিলে হাঁটব।”

ফুটবলারদের অনেকেই শনিবারের এই মিছিলে হাঁটলেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও ক্রিকেটার যোগ দেবেন কি না, জানা যায়নি। হকি অলিম্পিয়ান গুরবক্স সিংহ শহরের বাইরে। অনেকেই বলছেন, তিনি থাকলে হয়তো মিছিলে যেতেন। উদ্যোক্তাদের দাবি, ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়া, অ্যাথলিট সোমা বিশ্বাস, শু্যটার মাম্পি দাসরা মিছিলে হাঁটবেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা হয় কি না, দেখার। কারণ ওঁরা সংবাদমাধ্যমের ফোনই ধরছেন না। ক্রীড়ামন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ তিরন্দাজ ভাই-বোন দোলা ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবারই চলে যাচ্ছেন জামসেদপুরে। টাটা ম্যারাথনে যোগ দিতে। থাকলে মিছিলে যেতেন? দোলা বললেন, “যখন থাকছিই না, তখন এটা না বলাই ভাল।”

তৃণমূল ভবন থেকে ক্রীড়ামন্ত্রীর সমর্থনে মিছিল হবে ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের দফতর থেকে ফোন যেতে শুরু করে বিভিন্ন ক্রীড়াবিদের কাছে। মাঠে নামেন ময়দানের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা ও ভাই বিওএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হকি সংস্থার প্রেসিডেন্ট স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সারদা-কাণ্ডের ধাক্কায় অনেকেই এত বিভ্রান্ত যে, মনে হল, বেশ অসংগঠিত ভাবে যে যার মতো করে লোক জোগাড় করছেন! বিভিন্ন ক্লাব ও সংস্থাকে মিছিলে সামিলের চেষ্টা হচ্ছে। ফলে কে কাকে ফোন করছেন, কেউ জানেন না! ময়দানের তিন প্রধান ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহমেডান কর্তাদের কাছে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও অনুরোধ যায়নি। ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার বললেন, “মিছিল নিয়ে আমাকে কেউ ফোন করেনি। আমি তো ক্লাবে ছিলাম।” তবে তৃণমূল বিধায়ক এবং মহমেডান ফুটবল সচিব ইকবাল আহমেদ বললেন, “অনুরোধ এলে পুরো টিম পাঠিয়ে দেব মদনের জন্য। ও আমাদের লোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra cbi arrest saradha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE