সারদা-কাণ্ডে তাঁর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক এবং ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে সিবিআই জেরা করার পর থেকেই রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার কি এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতাল দেখভালের দায়িত্ব থেকেও তাঁকে অব্যাহতি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? বুধবার ওই হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর এক অনুষ্ঠান উস্কে দিল এই প্রশ্ন। তার কারণ দু’টি। এক, মদনের অনুপস্থিতি। দুই, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে হাসপাতালে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মমতার ঘোষণা।
মন্ত্রী-বিধায়ক হওয়ার অনেক আগে থেকেই দলের তরফে এসএসকেএম হাসপাতাল দেখতেন মদন। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে পিজি-র রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়। যদিও পরিবহণমন্ত্রীই ওই হাসপাতালে যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। বছরখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই মদন মিত্রকে রোগীকল্যাণ সমিতির কো-চেয়ারম্যান করা হয়। তখন মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, ‘মদন এসএসকেএমটা ভাল বোঝে।’ কিন্তু বুধবার পিজি-র নতুন অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং এবং ইউরোলজি ও নেফ্রোলজি বিভাগের নতুন আউটডোর কমপ্লেক্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মদনকে দেখা যায়নি। এবং এই অনুপস্থিতিকে কোনও রকম গুরুত্ব না দিয়েই মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, “ববি আমার হয়ে পিজি-টা দেখে।”
মদন কেন অনুপস্থিত তা নিয়ে প্রশ্ন হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যেই। পরিবহনমন্ত্রীর বাড়ির ২০০ মিটারের মধ্যে পিজি। সেখানেই মদনকে না দেখে মদন-অনুগামীরা বুঝে গিয়েছেন, এসএকেএম হাসপাতালে মদন-যুগ শেষ হতে চলেছে। যদিও প্রশ্ন করলে তাঁরাই এ দিন জানিয়েছেন, পরিবহণমন্ত্রী অসুস্থ। তাই আসতে পারেননি।
দক্ষিণে কামালগাজী থেকে উত্তরে বেলঘরিয়া পর্যন্ত পুজো উদ্বোধন করে বেড়ালেও, হাসপাতালের অনুষ্ঠানে না থাকা নিয়ে মদনের ব্যাখ্যা, “মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আমি হাসপাতালে থেকে সব কিছু দেখভাল করে এসেছি। কিন্তু বুধবার অনুষ্ঠানের সময়ে যে আমি উপস্থিত থাকতে পারব না, তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কারণ, ওই সময়টা আমার চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ব্যয়াম করার সময়।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সে কথা মঞ্চে থেকে কেন জানালেন না, কেন এক বারের জন্যও মদনের নাম নিলেন না, তাতে পরিবহণ মন্ত্রীর অনুগামীরা বিস্মিত।
সারদা-কাণ্ডে মদনের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে পুজোর আগে রাজারহাটে পরিবহণ দফতরের একটি অনুষ্ঠানে মদনকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিলেন মমতা। পুজোর মুখে নজরুল মঞ্চ থেকে দক্ষিণেশ্বরের জেটি উদ্বোধনের সময়েও মদনকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছিল। আর দিন দশেক আগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের অনুপস্থিতি বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছিল সবার। ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মদন না থাকলেও সেখানে রাজ্যের অন্য দুই মন্ত্রী অমিত মিত্র ও অরূপ বিশ্বাস ছিলেন। এ বার নিজের খাসতালুকেই মদন গরহাজির। এসএসকেএমের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন কিন্তু পরিবহণমন্ত্রী থাকবেন না, এটা হজম করতে পারছেন না তাঁর অনুগামীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy