কর্মজীবনে ছিলেন আমলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজনীতির আঙিনায় যখন পদার্পণ ঘটেছিল সাড়ে তিন বছর আগে। বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন যাদবপুর থেকে। কিন্তু ভোটের প্রচারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময়ে দীর্ঘদেহী প্রাক্তন আইপিএস বলে দিতেন, ২১ জুলাই নিয়ে বেশি কথা বলতে চান না! সাড়ে তিন বছর পরে সেই ২১ জুলাইয়ের ঘটনাই বিপাকে ফেলে দিল মণীশ গুপ্তকে। যখন তিনি সেই মমতারই সরকারে বিদ্যুৎমন্ত্রী!
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কমিশন ২১ জুলাইয়ের ঘটনায় যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তার ভিত্তিতে এ বার মণীশবাবুর মন্ত্রী থাকার ‘নৈতিকতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিল বামেরা। একুশ বছর আগে মমতার নেতৃত্বে তৎকালীন যুব কংগ্রেসের ‘মহাকরণ অভিযানে’ পুলিশের গুলিচালনার নির্দিষ্ট করে দায় কার, তা অবশ্য বলতে পারেনি কমিশন। তবে রিপোর্টে তারা মন্তব্য করেছে, রাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব মণীশবাবু কিছু জানতেন না, এটা হতে পারে না! অথচ কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, সে দিনের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না! এই জায়গা থেকেই মন্ত্রী মণীশকে নিশানা করছে বামেরা। অসমে গণহত্যার প্রতিবাদে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের ডাকে মঙ্গলবার শহরে একটি মিছিলে যোগ দেওয়ার অবসরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিবের বিবেকের দংশন হওয়া উচিত! তিনি কেন মন্ত্রিসভার সদস্য থাকবেন?”
বরাবরই ২১ জুলাই নিয়ে কথা বলতে অনীহা মণীশবাবুর। তাঁর পদে থাকার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবও এ দিন বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছ থেকে মেলেনি। ফোন ধরেননি তিনি। বিমানবাবু অবশ্য মণীশের সৎ সাহস নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশিই অভিযোগ করেছেন, “রিপোর্ট গোলমেলে। সাড়ে সাতশো পাতাতেও কিছু বোঝা যাচ্ছে না! তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে, এর মধ্যে কোনও নিরপেক্ষতা নেই!”
ঘটনার সময়কার স্বরাষ্ট্রসচিব যখন বর্তমান রাজ্য সরকারেই আছেন, তাঁর কাছ থেকে কেন ভাল করে সব তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে না, কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়েই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বাম নেতারা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিএম নেতা বিমানবাবুকেও কমিশন ডেকেছিল। ঘটনার সময়ে বুদ্ধবাবু অবশ্য পুলিশমন্ত্রী ছিলেন না। মঙ্গলবার আনন্দবাজার পত্রিকার কয়েকটি সংস্করণে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনটিতে ভুল করে তৎকালীন পুলিশমন্ত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সেই সময়ে বুদ্ধবাবু ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী। কিন্তু মদন মিত্রের মতো তৃণমূল নেতারা কমিশনে দাবি করেছিলেন, পুলিশমন্ত্রী না হলেও বুদ্ধবাবুকেই দফায় দফায় রিপোর্ট করছিলেন তদানীন্তন পুুলিশ-কর্তারা। কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যে দাবিকে ‘অর্বাচীনের মতো কথা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী!
সে বারের মহাকরণ অভিযান যাদের পতাকা নিয়ে হয়েছিল, সেই যুব কংগ্রেসও কমিশনের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে ময়দানে নামছে। যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যের অভিযোগ, কমিশনের রিপোর্টে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা হয়েছে। দোষীদের শাস্তির বদলে শহিদদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে তৃণমূল সরকার বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও তাঁর দাবি। দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজ, বুধবার রাজ্য জুড়ে কালা দিবস পালন করবে যুব কংগ্রেস। বিভিন্ন সরকারি অফিসের সামনে হবে বিক্ষোভও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy