ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ঘিরে কলেজে কলেজে অশান্তির ছবি দেখা গেল শনিবারও। কোথাও আক্রান্ত বিরোধী এবিভিপি, কোথাও ডিএসও, কোথাও আবার এসএফআইকে মনোনয়ন জমায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ। টিএমসিপি-র ‘সন্ত্রাস’ ঠেকাতে ছাত্র পরিষদ, এসএফআই এবং এবিভিপি জোটবদ্ধ হয়ে মনোনয়ন জমা দিল, এমন দৃশ্যও দেখা গেল এ দিন।
গোলমাল এড়াতে শনিবার মালদহের গাজল কলেজে এক জোট হয়ে মনোনয়ন তোলে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। এই কলেজে এই প্রথম নির্বাচন। শনিবার প্রথমে টিএমসিপি মনোনয়ন তুলে কলেজ গেটের সামনে জমায়েত করে। তা দেখে ছাত্র পরিষদ, এসএফআই ও এবিভিপি-র ছাত্ররা জোট বেঁধে মনোনয়ন তুলতে যায়। দু’পক্ষের ইট ছোড়াছুড়িও হয়। তবে কেউ জখম হয়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পরে বিরোধী তিন ছাত্র সংগঠনই মনোনয়ন তুলে জমা দেয়। পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সামান্য গোলমাল হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলেছে।”
টিএমসিপি-র ব্লক সভাপতি প্রসূন রায় বলেন, “আমরা মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছাত্র পরিষদ, এসএফআই এবং এবিভিপি আমাদের উপরে হামলা চালায়।” সিপি-র ব্লক সভাপতি প্রেম চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, “ওরা আমাদের ঢুকতে দেবে না বলে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাই এক জোট হয়ে যাই।”
বালুরঘাট কো-এড কলেজে এসএফআই এবং পিএসইউ প্রার্থীদের পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র মহিলা কর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে বিকেলে দুই সংগঠন আলাদা ভাবে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। কলেজের ৫১টি আসনে টিএমসিপি কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে। এ দিন তারা বিজয় মিছিলও করে। তবে পতিরাম কলেজের ১৮টি আসনেই এ দিন মনোনয়ন দিয়েছে এবিভিপি।
শনিবার মনোনয়ন জমার শেষ দিনে বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন কলেজেও। দুপুরে মারিশদার দুরমুঠ দেশপ্রাণ কলেজে টিএমসিপি-ডিএসও সংঘর্ষ বাধে। দুই মহিলা-সহ ৬ জন ডিএসও কর্মী জখম হন। তিন জনকে কাঁথি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডিএসও-র অভিযোগ, তাঁদের ছাত্ররা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে পুলিশের সামনেই বহিরাগতরা তাঁদের বাধা দেয় ও হেনস্থা করে। প্রতিবাদে দুরমুঠ বাসস্ট্যান্ডে দিঘা-কলকাতা সড়ক অবরোধ করলে কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি বিকাশ বেজের নেতৃত্বে দলীয় কর্মীরা ডিএসও-র উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ডিএসও-র জেলা সভাপতি সরোজ মাইতি বলেন, “এর প্রতিবাদে ডিএসও ১৯ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে ধিক্কার দিবসের ডাক দিয়েছে।” এসএফআই-এর অভিযোগ, বাধা দেওয়ায় দেশপ্রাণ কলেজে তারাও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। বিকাশবাবু অবশ্য বলেন, “হামলার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।”
গাজল কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
নন্দকুমার কলেজে এসএফআই ও এবিভিপি-র ছাত্রদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে কলেজের সামনে দিঘা-কলকাতা সড়ক মিনিট কুড়ি অবরোধ করে এসএফআই-এবিভিপি। এগরা কলেজে মনোনয়ন জমা দিতে না পারায় টিএমসিপি-র দিকে আঙুল তুলে এবিভিপি এগরা-কাঁথি রাজ্য সড়ক অবরোধ করে। এ দিন মহিষাদল রাজ কলেজে এবিভিপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। চৈতন্যপুরের বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ে আবার টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। তবে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি দীপক দাসের দাবি, “মহিষাদল রাজ কলেজে মারধরের ঘটনা ঘটেনি। আর বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয়নি।” জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানান প্রতিটি কলেজে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী ছিল। কোথাও বড় গোলমাল হয়নি।
হাওড়ার জগৎবল্লভপুর শোভারানি মেমোরিয়াল কলেজে এবিভিপি ভোটার তালিকা তুলতে গেলে টিএমসিপি-র ছেলেরা মারধর করে বলে থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে। শ্রীরামপুর গার্লস কলেজে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া ডিএসও-র এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে।
টিএমসিপি রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের অবশ্য দাবি, “ছাত্র সংঘর্ষ বন্ধে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু এবিভিপি, এসএফআই বহিরাগত এবং সংবাদমাধ্যমকে কলেজে নিয়ে গিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে।” এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদার বলেন, “বাম জমানার কায়দাতেই আক্রমণ করে আমাদের মনোনয়ন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। নবান্নর নির্দেশেই এই হিংসা চলছে।”