পরীক্ষার শেষেও কাটছে না আতঙ্ক। হেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ছবি: সোহম গুহ।
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় আহত হলে পড়ুয়াদের আলাদা করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে পূর্ব মেদিনীপুরে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ১০ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে এক জন গুরুতর আহত। ঘটনাটি শুনে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বলেন, “আহত ছাত্রী সুস্থ হলে, তার জন্য আলাদা পরীক্ষার বন্দোবস্ত হবে।” শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে এ হেন ঘটনা ঘটলে শিক্ষা দফতরকে একই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
খেজুরির জুরানগড় এলাকায় এ দিন যাতায়াতের পথে ঝামেলা-ঝক্কি এড়াতে গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১০ পরীক্ষার্থী। সেই গাড়িই দুর্ঘটনায় পড়ে। মৃত্যু হয়েছে গাড়িচালকের। ১০ জন পরীক্ষার্থীই আহত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে আহত ন’জন পড়ুয়া এ দিন হেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে পরীক্ষা দেয়। আর গুরুতর আহত অবস্থায় কাঁথি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ছাত্রীর জন্য অন্য ব্যবস্থা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সে সুস্থ হয়ে ওঠার পরে ফের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে।
এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখে স্থায়ী ব্যবস্থার আকারই দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, “এ বার ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে যাবে, তাই এই বিষয়টি আর বলতে পারব না। উচ্চ মাধ্যমিকের সময়েও একই নিয়ম থাকবে। ওদের (পরীক্ষার্থীদের) তো আর দোষ নেই। এটা দুর্ঘটনা। ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে মানবিক দিক দিয়ে রাজ্য সরকার বিচার করবে। শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দিচ্ছি।”
মমতার এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে এ বার থেকে দুর্ঘটনায় আহত সব পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার একই ব্যবস্থা নেবে? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “এটা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ। আমরা তা পালন করছি। ভবিষ্যতেও মুখ্যমন্ত্রী বললে, পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, খেজুরির জুখিয়া কুমারনারায়ণ বিদ্যাপীঠের পড়ুয়াদের নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল প্রায় চোদ্দো কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে। স্থানীয় দশ পড়ুয়া মিলে ভাড়ার গাড়িতে চেপে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জুখিয়া থেকে গাড়িতে ওঠে সন্তু বেরা, বুদ্ধদেব শী, সৌমেন জানা, মিতালি দাস, অর্পিতা ভুঁইয়া, গীতা বেরা, কল্পনা জানা, মল্লিকা গিরি, শ্রাবণী জানা ও রেখা জানা। চালকের পাশে বসে সন্তু ও বুদ্ধদেব। সন্তু বলে, “জুরানগড়ের কাছে আসতেই গাড়ি দুলে ওঠে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোরাম রাস্তায় উঠে গিয়ে একটি গাছে ধাক্কা মারে গাড়িটা।”
ঘটনাস্থলেই মারা যান গাড়ি চালক নন্দন সাউ (১৯)। নন্দন খেজুরির মোহাটি এলাকার বাসিন্দা। এক মাস আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। দুর্ঘটনার আওয়াজে ও পড়ুয়াদের চিৎকারে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই পরীক্ষার্থীদের হেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। প্রত্যেকেরই কমবেশি চোট-আঘাত লাগে। রেখা জানার আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে কাঁথি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, “রেখার মাথার পিছনের হাড় ও স্পাইনাল কর্ডে চিড় ধরেছে। মাথার স্ক্যান, এক্স রে করানো হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ওকে নজরে রেখেছেন। ওর অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।” আজ, শনিবার রেখার ডিজিটাল এক্স-রে করানো হবে বলে তিনি জানান।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আহত পরীক্ষার্থীদের বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ ভাবে বেলা ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত পরীক্ষা হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে ৪টে পর্যন্ত পরীক্ষা চলে। হেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আহত ন’জনের পরিদর্শক হিসাবে কৃষ্ণনগর হাইস্কুল থেকে এসেছিলেন দিব্যেন্দু গুড়িয়া ও বাসুদেব মণ্ডল।
দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “ওই রকম একটা দুর্ঘটনার পরে পরীক্ষার শুরুতে বেশ টেনশনে ছিল ওরা। তার উপরে শরীরের নানা জায়গায় চোট-আঘাত থাকায় মাঝেমধ্যেই কাতরাচ্ছিল।” পরীক্ষা কেমন হল? মাথায় তিনটি সেলাই নিয়ে বিমর্ষ মুখে শ্রাবণী বলে, “এমন কাণ্ডের পরে শেষমেষ যে পরীক্ষা দিতে পেরেছি, সেটাই অনেক। ইতিহাসের জন্য ভাল প্রস্তুতি ছিল। সব ঠিক থাকলে হয়তো লেটার হতো!”
কাঁথি হাসপাতালে রেখার বাবা গৌরহরি জানা বলেন, “মেয়ে বেঁচে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ওর পাশে দাঁড়িয়েছেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা জানা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy