Advertisement
E-Paper

যুবরাজের অভিষেকে আশিস মুকুলের, তবু প্রশ্ন

যন্তর মন্তরকে সাক্ষী রেখে তৃণমূলের সংগঠনে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হল যুবরাজের! দলনেত্রীর বার্তা পড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে যুবরাজের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার চেষ্টায় খামতি রাখলেন না আহমেদ পটেলও! প্রশ্ন তবু রয়েই গেল। রাজধানীর বুকে হাল্কা ভিড়ের এমন প্রতিবাদ-সভা থেকে ভাইপো তথা নবীন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ব্যাটন হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালিয়ে কী এমন লাভ হল তৃণমূল নেত্রীর!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৯
তিন সাংসদ। নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে (বাঁ দিক থেকে) মুকুল রায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: ইয়াসির ইকবাল।

তিন সাংসদ। নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে (বাঁ দিক থেকে) মুকুল রায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: ইয়াসির ইকবাল।

যন্তর মন্তরকে সাক্ষী রেখে তৃণমূলের সংগঠনে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হল যুবরাজের! দলনেত্রীর বার্তা পড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে যুবরাজের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার চেষ্টায় খামতি রাখলেন না আহমেদ পটেলও! প্রশ্ন তবু রয়েই গেল। রাজধানীর বুকে হাল্কা ভিড়ের এমন প্রতিবাদ-সভা থেকে ভাইপো তথা নবীন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ব্যাটন হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালিয়ে কী এমন লাভ হল তৃণমূল নেত্রীর!

বিজেপি-কে প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে নয়াদিল্লিতে দাঁড়িয়ে পাল্টা লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন অভিষেক-সহ তৃণমূলের নেতা-সাংসদেরা। প্রতিবাদ মঞ্চে আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সারদা-কাণ্ডের পর থেকে তাঁর ‘আহমেদ পটেল’ মুকুলের চেয়ে ‘যুবরাজে’র উপরেই দলনেত্রী বেশি আস্থা রাখছেন। দলের অন্দরে এই ভারসাম্য বদলের প্রক্রিয়া বুঝেই সম্ভবত অভিষেককে আজ একাধিক বার ‘পুত্রসম’ বলে ‘আশীর্বাদ’ করেন মুকুল! কিন্তু ঘটনা হল, তৃণমূলের এই প্রতিবাদ-মঞ্চে মুকুলকে আজ দেখা গিয়েছে যেন নিছক পার্শ্বচরিত্র হিসাবেই! সেখানে মুখ্য আসনে অভিষিক্ত হয়েছেন অভিষেক। আগাগোড়া সভা পরিচালনা করেছেন, কার পর কে বক্তৃতা দেবেন ঠিক করে দিয়েছেন। মাইক্রোফোন হাতে গোটা মঞ্চ ঘুরে নিজে বক্তৃতা করেছেন তাঁর পিসির আদলেই! পরিস্থিতির প্রয়োজনে বলেছেন হিন্দিও।

কিন্তু সাকুল্যে হাজারখানেক মানুষের উপস্থিতিতে এই প্রতিবাদ-সভা থেকে রাজনৈতিক বার্তা আখেরে কী লাভ হল, সেই অনিবার্য প্রশ্ন উঠছে তৃণমূল শিবিরের একাংশেই। বিশেষত, এমন একটি সময়ে যখন বিপুল জনভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সারদা কেলেঙ্কারি এবং বর্ধমান-কাণ্ডের পরে নিঃসন্দেহে চাপ বাড়ছে তৃণমূলের উপরে। তার থেকে পরিত্রাণের কোনও উপায় কি মিলল আজ মুষ্টিমেয় মানুষের সামনে মোদীকে আক্রমণ করে? দলের অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এক সাংসদ অবশ্য বলছেন, “দিল্লির সভায় বিপুল ভিড় হবে, এমন কোনও প্রত্যাশা ছিল না। ভিড় নয়, এখানে বার্তাটাই আসল। বিজেপি-র বিরুদ্ধে দলনেত্রীর বার্তা আজ জাতীয় স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন অভিষেক।” দলের কেউ কেউ এমনও বলছেন, লোকসভা ভোটের আগে রামলীলা ময়দানে অণ্ণা হজারের নামে সমাবেশে মমতার উপস্থিতিতে যত লোক হয়েছিল, তার চেয়ে অন্তত বেশি ভিড় এনে দেখিয়েছেন তৃণমূল ‘যুবা’র সর্বভারতীয় সভাপতি!

শ্রোতা-দর্শক খুব বেশি না হলেও মঞ্চে অবশ্য তিল ধারণের জায়গা ছিল না! তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদ মিলিয়ে ২৮ জন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও কলকাতা থেকে যোগ দিতে এসেছিলেন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, ফিরহাদ হাকিমেরা। ছিলেন বেশ কিছু বিধায়কও। গান গেয়েছেন তৃণমূলের টিকিটে লোকসভার প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন। তদুপরি জেডি (ইউ)-র প্রাক্তন বিধায়ক শোয়েব মহম্মদ ইকবালকে দলে যোগদান করিয়ে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে একটি বার্তাও দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, গোটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টাই সেরেছেন মমতা। সারদা এবং আরও নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে দলে যখন মুকুল-বিরোধী হাওয়ার আভাস, তখন তরতাজা এক জন নেতার প্রয়োজন ছিল তৃণমূলের। আজ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (যিনি আজই সফর কাটছাঁট করে জেনিভা থেকে ফিরে সটান হাজির বক্তৃতা মঞ্চে), শিশির অধিকারী বা সৌগত রায়ের পাশাপাশি সমান উৎসাহে হাজির ছিলেন সৌমিত্র খান, উমা সোরেন, অনুপম হাজরার মত নতুন সাংসদেরাও। অভিষেক ছাড়াও বক্তা ছিলেন সুদীপবাবু, মুকুলবাবু, ডেরেক ও’ব্রায়ান, ফিরহাদ, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুব্রত বক্সীরা। তবে তার পরেও প্রশ্ন, এতে নেতা হিসাবে দলের অভ্যন্তরে অভিষেকের প্রতিষ্ঠা হয়তো হল কিন্তু দিল্লিতে দলের মর্যাদা কতটা বাড়ল? যদিও দলের একাংশ বলছে, প্রথমটাই তৃণমূল নেত্রীর কাছে বেশি প্রয়োজনীয় ছিল!

বিজেপি সূত্রে কটাক্ষ করা হয়েছে, “ওই সভা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেরামতির জন্য! আমরা কেন তাকে গুরুত্ব দিতে যাব!” কিন্তু অভিষেক চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। পিসির ‘অনাড়ম্বর’ জীবনযাপনের সঙ্গে তিনি তুলনা করেছেন মোদীর। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “নিজের দলের দুর্নীতি আগে দূর করুন! তার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে চোখ তুলে তাকবেন! মমতা আজও চার বাই দশ ফুট ঘরে থাকেন। ৪০ টাকার হাওয়াই চপ্পল, ৩০০ টাকার শাড়ি পরেন। আর মোদী দিনে পাঁচ বার কুর্তা পাজামা বদলান! ১০ কোটির গাড়ি চড়েন!”

প্রথমে ঠিক ছিল, সিবিআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে দিল্লিতে সরব হবে তৃণমূল। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে আশঙ্কা করে সার্বিক ভাবে বিজেপি-র ব্যর্থতাকেই তুলে ধরা হয়েছে মঞ্চে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের দল হয়েও দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী সমাবেশের প্রয়োজনীয়তাটা কী? অভিষেকের জবাব, “দেশ যখন সমস্যায় জর্জরিত, তখন আমরা সময় নষ্ট করব না। লড়াই ছড়িয়ে দেব দিল্লি থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।”

tmc delhi mukul roy abhishek bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy