Advertisement
E-Paper

রেলে হঠাৎ বিধি বদল, অথৈ জলে পরীক্ষার্থীরা

কোনও জাদুবলে বাংলায় কি বেকারের হার দ্রুত কমছে! অন্তত রেলের একটি পরীক্ষায় হাজিরার হাল দেখে এমন সংশয় জাগতে বাধ্য। পাঁচ দফায় রেলের গ্রুপ-ডি পদের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লক্ষের কিছু বেশি। অথচ ইতিমধ্যে চার রবিবারে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন মাত্র দু’লক্ষ! আর এটা দেখেই চোখ কপালে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪১

কোনও জাদুবলে বাংলায় কি বেকারের হার দ্রুত কমছে!

অন্তত রেলের একটি পরীক্ষায় হাজিরার হাল দেখে এমন সংশয় জাগতে বাধ্য। পাঁচ দফায় রেলের গ্রুপ-ডি পদের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লক্ষের কিছু বেশি। অথচ ইতিমধ্যে চার রবিবারে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন মাত্র দু’লক্ষ! আর এটা দেখেই চোখ কপালে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের।

মন্ত্রবলে বেকারেরা সব চাকরি পেয়ে যাওয়াতেই এই অবস্থা, এমন ভেবে নিলে সেটা হবে নিতান্তই ভ্রান্তিবিলাস। তা হলে রেলের মতো কর্মসংস্থানের বৃহৎ ক্ষেত্রে চাকরির পরীক্ষায় হাজিরার এই হাল কেন?

দেখা গেল, ঠগ বাছতে গিয়ে প্রার্থী-তালিকা প্রায় উজাড় করে ফেলেছেন রেলকর্তারা। রেল সূত্রের খবর, দুর্নীতি রোখার নামে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ আচমকা একটি নিয়ম পরিবর্তন করে দেওয়াতেই এই বিপত্তি। নিয়ম বদল মানে প্রথা মেনে কর্মপ্রার্থীদের বাড়িতে অ্যাডমিট কার্ড পাঠাননি তাঁরা। তার বদলে ফরমান জারি করে দেন, ইন্টারনেট থেকে প্রার্থীদেরই অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করে নিতে হবে। প্রার্থীরা তো বটেই, রেলকর্মীরাও অভিযোগ তুলেছেন, বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী গ্রামগঞ্জের বাসিন্দা হওয়ায় নিয়ম বদলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানতেই পারেননি। যাঁরা জেনেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই ইন্টারনেট না-থাকায় অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে পারেননি। ফলে তাঁদেরও আর পরীক্ষায় বসা হয়নি। আগামী রবিবারেও পঞ্চম ও শেষ দফার ওই পরীক্ষা হবে। এবং সেখানেও উপস্থিতির হার একই রকম হবে বলে রেলকর্মীদের আশঙ্কা।

গ্রামের প্রার্থীদের হাল জেনেও আচমকা এই নিয়ম পরিবর্তন কেন?

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা জানান, পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম হয়। অনেকেই অ্যাডমিট কার্ডে ছবি পাল্টে অন্যকে পরীক্ষায় বসায়। মূলত এমন কারচুপি রুখতেই অ্যাডমিট কার্ড হাতে পাওয়ার নিয়ম বদলানো হয়েছে। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগেই কেন নিয়ম বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না, তার কোনও জবাব দিতে পারেননি রেলকর্তারা।

দক্ষিণ-পূর্ব রেল পরীক্ষার ১০ দিন আগে হঠাৎ নতুন নিয়ম বাধ্যতামূলক করলেও পাশের জোন পূর্ব রেল কিন্তু যথারীতি প্রার্থীদের বাড়ির ঠিকানাতেই অ্যাডমিট কার্ড পাঠিয়েছে। তা হলে কি পূর্ব রেলের ওই পুরনো সিদ্ধান্ত বহাল রাখাটাই ভুল হয়েছে?

পূর্ব রেলের কর্তাদের বক্তব্য, অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডের নিয়ম চালু করতে হলে প্রথম থেকেই সেটা করার কথা। অর্থাৎ রেলের নির্দিষ্ট জোন থেকে শূন্য পদ পূরণের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময়েই নতুন নিয়মের কথা জানিয়ে দেওয়া উচিত। অথবা পাশাপাশি পুরনো ও নতুন দু’টি নিয়মই বহাল রাখা দরকার। ওই পরীক্ষার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তাই তাঁদের হাতে অ্যাডমিট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এড়ানো যায় না বলে রেলকর্তাদের একাংশের অভিমত।

নিয়ম বদলের ধাক্কায় টাকা দিয়েও অসংখ্য প্রার্থী যে পরীক্ষা দিতে পারলেন না, তার দায় কার?

গ্রুপ-ডি পদে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য রেলের আলাদা বিভাগ থাকে। তার নাম ‘রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট সেল’ বা আরআরসি। রেলের সব জোনের অধীনে থাকে একটি করে আরআরসি থাকে। এই দফতরটি রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড বা আরআরবি-র মতো স্বশাসিত নয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ওই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে সেই জোনের আরআরসি। প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না-পারার দায় সেই আরআরসি-রই, বলছেন রেলকর্মীরা।

নিয়ম বদলের কথা ঠিক সময়ে জানানো হল না কেন?

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আরআরসি-র অধ্যক্ষ (চেয়ারম্যান) শুভপ্রসাদ সেন প্রথমে কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দায় এড়াতে চেয়েছেন। পরে তিনি বলেন, “এটা রেল-কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। তাই যা বলার, সেটা বলবেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক।” পরীক্ষায় উপস্থিতির হার যে কম, তা স্বীকার করে ওই রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, রেল বোর্ডের অনুমতি নিয়েই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্য দু’টি জোনেও এই নতুন নিয়ম বলবৎ হয়েছে বলে তিনি জানান। “আমরা বিভিন্ন স্টেশনে মাইকে ঘোষণা করে এবং কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যাপারটা জানিয়ে দিয়েছিলাম। কেউ যদি ডাউনলোড করতে না-ই পারেন, রেলের দফতরে এসে অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে যেতে পারতেন,” বলছেন সঞ্জয়বাবু।

রেলকর্মীরা কিন্তু কর্তাদের এমন জবাবে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা বলছেন, ওই পরীক্ষায় যাঁরা বসছেন, তাঁদের বেশির ভাগই পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রামগঞ্জের ছেলেমেয়ে। তাঁদের অনেকের এলাকায় ইন্টারনেটের ব্যবস্থাই নেই। সকলে স্টেশনের কাছেও থাকেন না যে, মাইকে ঘোষণা শুনে ব্যবস্থা নেবেন। শেষ মুহূর্তে নিয়ম বদলের কথা জানানোয় তাঁরা বিষয়টি জানতেই পারেননি।

south-eastern railway written examination confusion amitava bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy