Advertisement
০৭ মে ২০২৪

রাহুল যেতেই বিজেপিতে সিপিএম নেত্রী-সহ বহু

বাম শিবিরে ক্ষয় বাড়িয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। ক্ষতি হচ্ছে অন্য দলগুলিরও। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাক্তন বাম বিধায়ক স্বদেশ পাত্রের পরে এ বার বিজেপিতে গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি, সিপিএমের পিংলা জোনাল সদস্য অন্তরা ভট্টাচার্য।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে দুই নবাগত, গৌর ঘোড়ই ও অন্তরা ভট্টাচার্য। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে দুই নবাগত, গৌর ঘোড়ই ও অন্তরা ভট্টাচার্য। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

বাম শিবিরে ক্ষয় বাড়িয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। ক্ষতি হচ্ছে অন্য দলগুলিরও।

পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাক্তন বাম বিধায়ক স্বদেশ পাত্রের পরে এ বার বিজেপিতে গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি, সিপিএমের পিংলা জোনাল সদস্য অন্তরা ভট্টাচার্য। পিংলা, মেদিনীপুর, লালগড়, গোপীবল্লভপুরের কিছু ফব, কংগ্রেস, তৃণমূল ও ঝাড়খণ্ডী নেতা-কর্মীও একই রাস্তা ধরেছেন।

রবিবার খড়্গপুর গ্রামীণ থানার মাতকাতপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের উপস্থিতিতেই দলবদল করেন অন্তরাদেবী। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের সন্ত্রাস চলছে। সিপিএম নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছে থেকেই বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি।” তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে রাহুলবাবু বলেন, “শেষবেলায় অন্তরাদির উপরে চাপ সৃষ্টি করেছিল সিপিএম। ব্যর্থ হয়ে কাজে লাগিয়েছিল তৃণমূলকেও। কিন্তু উনি অবিচল থেকেছেন।” তৃণমূলের কয়েক জন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বলে অন্তরাদেবীও জানান।

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি আসনেই ভাল ফল করেছে বিজেপি। খড়্গপুর সদর বিধানসভা এলাকায় তারাই এগিয়ে ছিল। সেই সাফল্যের পরে বিভিন্ন দল ছেড়ে কর্মী-সমর্থকদের বিজেপিতে যোগদানের প্রবণতা বেড়েছে। অন্তরা ভট্টাচার্য ছাড়াও এ দিন বিজেপিতে যান পিংলার কংগ্রেস নেতা গৌর ঘোড়ই, ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠন যুব লীগের জেলা সভাপতি আশিস চট্টোপাধ্যায়, মেদিনীপুরের প্রাক্তন তৃণমূল উপ-পুরপ্রধান গণেশ ভকত (গত বছর পুরভোটে নির্দল প্রার্থী), সিপিআইয়ের শ্রমিক নেতা অশোক সেনাপতি, গোপীবল্লভপুর ২ ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি সুকুমার বাগ, তৃণমূলের চাঁদাবিলা অঞ্চলের নেতা মহেন্দ্র মাহাতো এবং লালগড়ের ঝাড়খণ্ডী নেতা বুদ্ধেশ্বর মাহাতো।

এ দিনই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় আবার দাবি করেন, জলপাইগুড়ি ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কংগ্রেস ও সিপিএম ছেড়ে কিছু নেতা-কর্মী তাঁদের দলে এসেছেন। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে পরাজিত সিপিএম প্রার্থী সোহরাব হোসেনও আছেন। মুকুলবাবু বলেন, “২০০৮-এর পর থেকে রাজ্যে কংগ্রেস, আরএসপি, সিপিএম ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। ওই সব দলের সাংগঠনিক নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে আসছেন।”

লোকসভা নির্বাচনের পর এ দিনই প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুরে এলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। লোধাশুলি, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম ও মাতকাতপুর চার জায়গায় তিনি সভা করেন। নয়াগ্রামে যাওয়ার পথে নিমাইনগরে তৃণমূলের লোকজন তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ দ্রুত তাদের সরিয়ে দেয়। প্রতিটি সভাতেই সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল, ঝাড়খণ্ডী পার্টি ছেড়ে বেশ কিছু নেতা-কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে নাম লেখান। এঁদের মধ্যে কিছু পঞ্চায়েত সদস্যও আছেন। রাহুলবাবুর দাবি, এই এক দিনেই হাজার চল্লিশ মানুষ তাঁদের দলে এসেছেন। তাঁর কথায়, “পূর্ব মেদিনীপুর থেকে একটা পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেখান থেকেই প্রকৃত পরিবর্তনের সূচনা হল।” মাওবাদী-তৃণমূল যোগসাজশের অভিযোগ তুলে তাঁর মন্তব্য, “রাজ্য সরকার বলছে, ওরা নাকি জঙ্গলমহলকে মাওবাদীমুক্ত করেছে। মাওবাদী তো ওরা নিজেই।” শিল্পায়ন প্রসঙ্গেও তৃণমূল সরকারকে তুলোধনা করেন তিনি।

এ দিনের দলবদলের তালিকায় সবচেয়ে বড় নাম অবশ্যই অন্তরা। ২০০৮-১৩ তিনি পশ্চিম জেলা সভাধিপতি ছিলেন। তার আগে দশ বছর ছিলেন পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। সদ্য লোকসভা ভোটেও পিংলার বুথে ঘাটালের বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণার পোলিং এজেন্ট ছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটের পরেই দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। দলীয় সূত্রের খবর, পিংলায় বারবার দলের কর্মী-সমর্থকরা আক্রান্ত হলেও জেলা নেতারা পাশে না দাঁড়ানোয় তিনি ক্ষুব্ধ হন। তাঁর বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হওয়ার পরে অবশ্য গত সপ্তাহে সিপিএমের কিছু জেলা নেতা তাঁকে ফোন করেন। জেলা সম্পাদক দীপক সরকার তাঁর চলে যাওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেন, “আমাদের দল স্বেচ্ছা প্রতিষ্ঠান। অনেকে আসেন, অনেকে যান। উনি দলের সদস্য ছিলেন। জেলায় এ রকম ৩২ হাজার সদস্য আছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cpm leaders join bjp rahul sinha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE