Advertisement
E-Paper

রয়েছেন প্রকাশ্যে, তবু ‘ফেরার’ অম্বিকেশ

দিল্লিতে খোদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করছেন তিনি। নিয়মিত তাঁকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পথসভায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতেও হাজির থাকছেন তিনি। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট বলছে, অম্বিকেশ মহাপাত্র ফেরার। আদালতে পেশ করা চার্জশিটেও এ কথা লেখা হয়েছে। ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র ‘ফরওয়ার্ড’ করে ২০১২ সালের এপ্রিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিষদৃষ্টিতে পড়েছিলেন অম্বিকেশবাবু। ওই সময়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন পান। সেই মামলা এখনও চলছে। এর মধ্যে গত ৩ ডিসেম্বর কোরপান শা খুনের প্রতিবাদে রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর বিক্ষোভে থাকার ‘অপরাধ’-এ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৫

দিল্লিতে খোদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করছেন তিনি। নিয়মিত তাঁকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পথসভায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতেও হাজির থাকছেন তিনি। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট বলছে, অম্বিকেশ মহাপাত্র ফেরার। আদালতে পেশ করা চার্জশিটেও এ কথা লেখা হয়েছে।

ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র ‘ফরওয়ার্ড’ করে ২০১২ সালের এপ্রিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিষদৃষ্টিতে পড়েছিলেন অম্বিকেশবাবু। ওই সময়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন পান। সেই মামলা এখনও চলছে। এর মধ্যে গত ৩ ডিসেম্বর কোরপান শা খুনের প্রতিবাদে রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর বিক্ষোভে থাকার ‘অপরাধ’-এ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ। সেই মামলার যে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে আদালতে, তাতেই তদন্তকারীরা ফেরার বলে দেখিয়েছেন অম্বিকেশবাবুকে। তাই ‘ফেরার’ অম্বিকেশবাবুর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজিরা দিয়ে এই মামলাতেই জামিন পেয়ে যান অম্বিকেশবাবু।

পরে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার পুলিশকে দিয়ে ষড়যন্ত্র করে আমাকে জেলে পুরতে চাইছে। আমি আইনি পথেই লড়ব।”


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

শুধু অম্বিকেশবাবুই নন, একই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, সিপিএম নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য, শৈলেন চৌধুরী-সহ বেশ কয়েক জনের নামে। কান্তিবাবু ছিলেন ওই বিক্ষোভের মূল উদ্যোক্তা। পুলিশি রিপোর্টে এঁদের প্রত্যেককেই ফেরার দেখানো হয়েছে। এই বিষয়ে কান্তিবাবু বলেন, “প্রাক্তন মন্ত্রী হিসাবে আমি সরকারি নিরাপত্তা রক্ষী পাই। আমার বাড়ি থেকে দু’শো মিটার দূরেই থানা। অথচ, পুলিশ বলছে, আমি ফেরার! এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, খাস কলকাতায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এক ব্যক্তি কী করে পুলিশের খাতায় ফেরার হয়ে গেলেন?

এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র কোনও স্পষ্ট জবাব দেননি। তিনি শুধু বলেন, “আমরা তদন্ত করে যা পেয়েছি, আদালতে তা-ই জমা দিয়েছি। আমরা ঠিক করেছি না ভুল করেছি, তা আদালত বিচার করবে।” তবে পুলিশের এই আচরণের পিছনেও শাসক দলের ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করছেন অম্বিকেশবাবুর সহকর্মী ও আইনজ্ঞদের একাংশ। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মতে, অম্বিকেশবাবুকে এই মামলাগুলিতে গ্রেফতার করলে জনরোষ হতে পারে বলে আঁচ করেছে প্রশাসন। তাই তাঁকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

কোন ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে অম্বিকেশবাবুকে ফেরার বলে চার্জশিট দাখিল করল পুলিশ?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত ৩ ডিসেম্বর বুধবার কলকাতার রানি রাসমণি রোডে রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছিলেন অম্বিকেশবাবু। নীলরতন সরকার হাসপাতালের ছাত্র হস্টেলে প্রতিবন্ধী যুবক কোরপান শা-কে পিটিয়ে হত্যা করার প্রতিবাদেই ওই সভায় যোগ দেন তিনি। ওই সময়ে শাসক দল ও পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছিলেন অম্বিকেশবাবু। বেলা বারোটা থেকে ওই সভা শুরু হয়েছিল। শুরুতেই বক্তব্য রেখে তিনি সভা থেকে চলে যান। পরে প্রতিবন্ধীরা আইন অমান্য আন্দোলন করেন। ব্যারিকেড ভেঙে রানি রাসমণি রোড থেকে রেড রোডের দিকে এগোতে গেলেই পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনাতেই অম্বিকেশবাবুর বিরুদ্ধে গোলমালে যোগ দেওয়া, সরকারি কর্মীর কাজে বাধাদান করার মতো একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। একই ধারায় মামলা হয় সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ, এই মামলার কথা পুলিশ তাঁদের জানায়নি। বরং অভিযুক্তরা পলাতক বলে চার্জশিট পেশ করা হয়। ২৩ জানুয়ারি হেয়ার স্ট্রিট থানার তদন্তকারী অফিসার অভিযুক্তদের পলাতক বলে রিপোর্ট পেশ করেন। ২৯ জানুয়ারি ব্যাঙ্কশাল আদালতে ওই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। এর পরেই বিচারক অম্বিকেশবাবুকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। বিচারকের নির্দেশ মেনে

ওই পরোয়ানা পাঠিয়ে দেওয়া হয় পঞ্চসায়র থানায় (অম্বিকেশবাবুর বসতবাড়ি যে থানার অধীনে পড়ে)। সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে এই গ্রেফতারি পরোয়ানার কথা জানতে পারেন অম্বিকেশবাবু।

কান্তিবাবুর বক্তব্য, “আমাদের মিথ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে এর প্রতিবাদে ফের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আন্দোলনে নামব।”

ambikesh mahapatra cartoon case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy