Advertisement
E-Paper

লালবাতি চড়ে এসে পয়লা দিনেই গ্রেফতার মাতঙ্গ

লালবাতি লাগানো গাড়িতে চেপে, এক দল দেহরক্ষী নিয়ে সকালে এসেছিলেন সিবিআই দফতরে। আট ঘণ্টা জেরার পরে যখন বেরোলেন, তখন সিবিআইয়ের ঘেরাটোপে! শুক্রবারই সারদা-কেলেঙ্কারিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে প্রথম বারের জন্য সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে সিবিআই। তার চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শনিবার প্রথম হাজিরা দিয়ে গ্রেফতার হয়ে গেলেন প্রাক্তন কয়লা-প্রতিমন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ। রাতেই তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
সিবিআই অফিসে মাতঙ্গ। শনিবার। ছবি:শৌভিক দে।

সিবিআই অফিসে মাতঙ্গ। শনিবার। ছবি:শৌভিক দে।

লালবাতি লাগানো গাড়িতে চেপে, এক দল দেহরক্ষী নিয়ে সকালে এসেছিলেন সিবিআই দফতরে। আট ঘণ্টা জেরার পরে যখন বেরোলেন, তখন সিবিআইয়ের ঘেরাটোপে!

শুক্রবারই সারদা-কেলেঙ্কারিতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে প্রথম বারের জন্য সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে সিবিআই। তার চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শনিবার প্রথম হাজিরা দিয়ে গ্রেফতার হয়ে গেলেন প্রাক্তন কয়লা-প্রতিমন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ। রাতেই তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। আজ, রবিবার তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

সারদা-কেলেঙ্কারিতে এ দিনই প্রথম সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দিলেও অসমের বাসিন্দা মাতঙ্গকে জেরা করতে চেয়ে এর আগে ছ’বার নোটিস পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাটি। নানা কারণ দেখিয়ে তিনি দেখা করেননি। অবশেষে এ দিন নিজেই সময় চেয়ে বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ পৌঁছে যান সিবিআই দফতরে। তার পর দীর্ঘ আট ঘণ্টা ধরে জেরার শেষে সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সারদা-কেলেঙ্কারিতে এই প্রথম কোনও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে গ্রেফতার করল সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার মুখপাত্র কাঞ্চন প্রসাদ জানান, প্রতারণা, তহবিল তছরুপ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মাতঙ্গকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সারদা-কেলেঙ্কারিতে এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের তালিকায় মাতঙ্গ হলেন দ্বিতীয় মন্ত্রী। প্রথম জন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, শুক্রবার মুকুল রায় তদন্তে সহযোগিতা করলেও এ দিন মাতঙ্গের কাছ থেকে অনেক ক্ষেত্রেই সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। মাতঙ্গকে এর আগে জেরা করেছে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) ও ইডি। শ্যামল সেন কমিশনেও তিনি হাজিরা দেন।

কে এই মাতঙ্গ সিংহ?

অসমের তিনিসুকিয়া জেলার হিজোগুড়িতে জন্ম মাতঙ্গের। কয়লা ও ঠিকাদারির ব্যবসা করতে করতেই রাজনীতিতে পা। ১৯৯২ সালে কংগ্রেসের টিকিটে অসম থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন। পরে নরসিংহ রাও মন্ত্রিসভায় কয়লা ও সংসদ বিষয়ক-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই আমলেই সাংসদ কেনাবেচায় নাম জড়ায় তাঁর। ২০০০ সালে সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধাচারণের জন্য কংগ্রেস থেকে বরখাস্ত হন। সেই সনিয়ার কাছেই ২০১১ সালে ক্ষমা চেয়ে কংগ্রেসে ফেরেন তিনি।

মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর উত্তর-পূর্ব ভারতে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় মন দেন মাতঙ্গ। তৈরি করেন এনই টিভি। সেই কাজে তাঁর প্রধান সঙ্গী ছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী তথা সাংবাদিক মনোরঞ্জনা সিংহ। কয়েক বছরের মধ্যেই স্ত্রীকে সরিয়ে দেন। মনোরঞ্জনা বেরিয়ে এসে নিজে একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল তৈরি করেন। অভিযোগ ওঠে, চ্যানেল খোলার জন্য মাতঙ্গ-মনোরঞ্জনা দু’জনেই সারদাকর্তার থেকে টাকা নিয়েছিলেন। মনোরঞ্জনার অবশ্য দাবি, তিনি সব কিছুই করেছেন আইন মেনে।

কী ভাবে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়ালেন মাতঙ্গ?

সিবিআই সূত্রে খবর, গা-ঢাকা দেওয়ার আগে সিবিআইকে লেখা চিঠিতে সুদীপ্ত সেন জানিয়েছিলেন, অসমে এনই চ্যানেল কেনাবেচার জন্য মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে তাঁর ২৮ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাতিল হলেও টাকা ফেরত পাননি তিনি। ওই চিঠিতেই রাজেশ বজাজ নামে আরও এক ব্যক্তির নাম করেছিলেন সুদীপ্ত। এর আগে রাজেশকে ইডি ও সিবিআই দুই সংস্থাই জেরা করে। এ দিনও রাজেশ ও মাতঙ্গকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। গ্রেফতার হওয়ার পরে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় মাতঙ্গ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “সুদীপ্ত সেনের সংস্থার সঙ্গে আমার সংস্থার ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছিল। আমি সেই টাকা ফেরত দিতেও রাজি। তবুও আমাকে অপরাধী সাজানো হচ্ছে।”

এ দিন গ্রেফতার হওয়ার আগে মাতঙ্গ ও তাঁর সঙ্গী খ্যাতি সরদানা নামে এক মহিলা সিবিআই দফতর থেকে আচমকা বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সিবিআই কর্তাদের বচসাও হয়। এর ঘণ্টাখানেক পরে মাতঙ্গের গ্রেফতারের কথা জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পরে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে খ্যাতি সরদানা সাংবাদিকদের বলেন, “উনি অসুস্থ। তা সত্ত্বেও সিবিআই দুর্ব্যবহার করছে। আমরা নিজেরাই তো সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম।” সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে লেখা মাতঙ্গের একটি চিঠিও সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেন তিনি। সেই চিঠিতে মাতঙ্গের অভিযোগ, তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে জেনেও সিবিআইয়ের যুগ্ম-অধিকর্তা রাজীব সিংহ এবং ডিআইজি শঙ্খব্রত বাগচী হেনস্থা করেছেন। জেরা না করে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে এক জন অপরাধীর মতোই ব্যবহার করা হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগও এনেছেন মাতঙ্গ। সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পরেই আত্মহত্যা করেন অসম পুলিশের প্রাক্তন ডিজি শঙ্কর বরুয়া। মাতঙ্গের অভিযোগ, সিবিআইয়ের এক অফিসার শঙ্করের কাছে কয়েক কোটি টাকা চেয়েছিলেন। তা দিতে না পারায় হেনস্থার চোটে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। রাতে মাতঙ্গ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, অতীতে তাঁর কাছেও টাকা চেয়েছেন সিবিআই অফিসারেরা।

মাতঙ্গের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের মুখপাত্র কাঞ্চন প্রসাদ বলেন, “ওঁর সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। আমরা জেনেছি, এই কেলেঙ্কারিতে প্রভাবশালী এবং আমলাদের একাংশের সঙ্গে তাঁর যোগসাজশ ছিল। এ সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

matanga singh ed arrested cbi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy