Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
বর্জ্য-গ্রাসে রাস্তা/২

শোধনে জাপানি সংস্থা, আশায় বুক বাঁধছে কদাকার দিল্লি রোড

আবর্জনায় মুখ ঢাকা দিল্লি রোডের এমন করুণ পরিণতি কিন্তু নতুন নয়। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগেই এ নিয়ে বিতন্ডায় জড়িয়েছে বিভিন্ন পরিবেশ সংস্থা ও পুরসভা। উত্তাল হয়েছে বিধানসভা।

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৯:৩১
Share: Save:

আবর্জনায় মুখ ঢাকা দিল্লি রোডের এমন করুণ পরিণতি কিন্তু নতুন নয়।

রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগেই এ নিয়ে বিতন্ডায় জড়িয়েছে বিভিন্ন পরিবেশ সংস্থা ও পুরসভা। উত্তাল হয়েছে বিধানসভা। এমনকী রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর দায় এড়ানো মন্তব্যের প্রতিবাদে পথ অবরোধের চেনা আন্দোলনেও নেমেছিলেন তৎকালীন বিরোধীরা।

কিন্তু এ সত্ত্বেও দেশের শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন পুর কর্তৃপক্ষ কী করে নির্বিকার ভাবে দায় এড়াচ্ছে?

সংশ্লিষ্ট পুর কর্তাদের কাছে এর কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। উল্টে অধিকাংশ পুর কর্তৃপক্ষই দায় অস্বীকার করে জানাচ্ছে, দিল্লি রোডের ধারে পুর-বর্জ্য তারা ফেলে না। অথচ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ওই পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কর্মীদেরই একাংশ কবুল করছেন, রাতের অন্ধকারে অনেক সময়েই পুর-বর্জ্য ফেলে আসা তাদের প্রায় নিয়মিত কাজ। এ ব্যাপারে রয়েছে চাপানউতোরও। ‘আমরা-ওরা’র বিভেদও স্পষ্ট। রিষড়া এবং শ্রীরামপুর পুরসভা যেমন এ ব্যাপারে সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছে, এলাকার অন্য পুরসভাগুলি দিল্লি রোডের ধারে বর্জ্য ফেললেও তারা ‘এ কাজ’ করে না।

কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরের আমাদের ময়লা ফেলার ভাগাড় রয়েছে। আবর্জনা সেখানেই ফেলা হয়।” তবে জেলা প্রশাসনেরই এক পদস্থ কর্তা জানান, কিছু দিন আগে দুই ট্র্যাক্টর বোঝাই ময়লা ফেলার সময়ে হাতেনাতে ওই পুরসভার দু’জন জঞ্জাল সাফাই কর্মীকে আটক করা হয়েছিল।

বৈদ্যবাটী পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় প্রতাপ সিংহ অবশ্য খোলাখুলি জানাচ্ছেন পুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত ইট ভাটায় তাঁদের যে ভাগাড় ছিল তা ভরে গিয়েছে। সেকারণেই আপাতত আবর্জনা ফেলার জন্য তারা অন্য জায়গাও বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিতর্কিত এই ছ’টি পুরসভার মধ্যে আমরাই প্রথম পথ দেখাতে চলেছি। কেএমডিএ তাদের বর্জ্য-পরিশোধন প্রোজেক্ট শুরু করছে বৈদ্যবাটি পুরসভাকে নিয়েই।” কি সেই পরিকল্পনা?

‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি’র (জাইকা) সঙ্গে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের চুক্তি অনুসারে গঙ্গা লাগোয়া ছ’টি পুরসভার বর্জ্য শোধনের জন্য ঋণ মিলেছে ১৪১ কোটি টাকা। প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের বরাদ্দ ২৯ কোটি টাকা। কাজের তত্ত্বাবধানের ভার বর্তেছে কেএমডিএ-এর উপরে। এ ব্যাপারে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি সংস্থাকে দায়িত্বও দিয়েছে। তারাই হুগলির ওই ছ’টি পুর এলাকাকে বর্জ্য-দূষণমুক্ত করতে চলেছে। যার ফলে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে বর্জ্য-ঢাকা দিল্লি রোডও।

বৈদ্যবাটি পুরসভার পাশাপাশি, কোন্নগর পুরসভাও এ ব্যাপারে টেন্ডার ডাকার প্রস্তুতি নিয়েছে। চাঁপদানি পুর এলাকার বাসিন্দাদের ওই বর্জ্য কী ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, কী ভাবেই বা তা তুলে দিতে হবে পুরকর্মীদের হাতে—তা নিয়ে সচেতনতা প্রচারও শুরু হয়েছে।

কেএমডিএ-এর এক পদস্থ কর্তা বলেন, “যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা রুখতেই এই পরিকল্পনা।” ওই প্রকল্প কর্তারাই জানান, এখন থেকে পুর বর্জ্য ফেলে দিয়েই দায় সারবে না পুর-কর্তৃপক্ষ। বর্জকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলা হবে তিনটি ভিন্ন ভাগাড়ে। পচনশীল বর্জ্য দিয়ে তৈরি হবে সার। এ জন্য পুর বাসিন্দাদের দেওয়া হবে একটি নির্দিষ্ট সবুজ পাত্র। অপচনশীল বর্জ্যের জন্য বরাদ্দ হয়েছে নীল বালতি। সেই বালতিতে ফেলতে হবে প্লাস্টিক, কাচ বা ধাতব জিনিসপত্র। সেগুলি ‘রিসাইকেল’-এর জন্য চলে যাবে সংশ্লিষ্ট কল কারখানায়। এর বাইরে যে বর্জ্য থাকবে তা-ও প্রাথমিক ভাবে ঝাড়াই-বাছাই করবে প্রকল্প বিশেষজ্ঞরা। পরে তা মাটির নীচে এমন ভাবে পুঁতে ফেলা হবে যাতে বায়ু দূষণের সম্ভাবনা না থাকে।

দিল্লি রোড সেই ‘সুদিনের’ দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

delhi road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE