Advertisement
E-Paper

শুভেন্দু কি গেরুয়া পথে, জল্পনা মমতার মন্তব্যেই

আপাতদৃষ্টিতে বিজেপি-কে তোপ। আপাতদৃষ্টিতে চক্রান্তের অভিযোগও। কিন্তু প্রচ্ছন্ন বার্তা শুভেন্দু অধিকারীর জন্য! কথার চালে দলের সাংসদকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, বিজেপি-র দিকে তাঁর ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনার কথা দলনেত্রীর অজানা নয়! খড়গপুরে পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরের কর্মী সম্মেলনের মঞ্চে মঙ্গলবার শুভেন্দুকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, “চমকে দিয়ে তৃণমূলকে জব্দ করা যাবে না! কত বড় সাহস! দাঁড়িয়ে বলে, ভাগ মদন ভাগ, ভাগ মমতা ভাগ, ভাগ মুকুল ভাগ!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৪
খড়্গপুরে তৃণমূলের কর্মিসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

খড়্গপুরে তৃণমূলের কর্মিসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

আপাতদৃষ্টিতে বিজেপি-কে তোপ। আপাতদৃষ্টিতে চক্রান্তের অভিযোগও। কিন্তু প্রচ্ছন্ন বার্তা শুভেন্দু অধিকারীর জন্য! কথার চালে দলের সাংসদকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, বিজেপি-র দিকে তাঁর ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনার কথা দলনেত্রীর অজানা নয়!

খড়গপুরে পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরের কর্মী সম্মেলনের মঞ্চে মঙ্গলবার শুভেন্দুকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, “চমকে দিয়ে তৃণমূলকে জব্দ করা যাবে না! কত বড় সাহস! দাঁড়িয়ে বলে, ভাগ মদন ভাগ, ভাগ মমতা ভাগ, ভাগ মুকুল ভাগ! শুভেন্দুকে ডেকে বলছে, হয় আমাদের সঙ্গে এসো, তা না হলে জেলে যাও!” নেত্রীর কথায়, “হোয়াট ইজ দিজ?”

শুনলে মনে হবে, বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর নিত্যদিনের তোপের আরও এক টুকরো। কিন্তু তার মধ্যেই ঘুরিয়ে বলে দেওয়া আছে শুভেন্দুর কাছে বিজেপি-র বার্তা আছে, এমন খবর তিনি রাখেন! তাই বিজেপি-র দিকে দৃষ্টি থাকলেও নিশানা আসলে তমলুকের সাংসদ! যাঁকে এবং সম্ভবত আরও অনেককে দলনেত্রী বলে দিচ্ছেন, দল ছেড়ে যেতে চাইলে তাঁরা যেতে পারেন। মমতা বিচলিত নন!

হঠাৎ কেন এমন বললেন মমতা? তৃণমূলেরই একাংশের ব্যাখ্যা, এর কারণ খুঁজতে গেলে একটু পিছনে তাকাতে হবে। সংগঠনে সাম্প্রতিক কালে শুভেন্দুর গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। শুভেন্দুও দলের যাবতীয় কর্মসূচিতে হইহই করে সামিল হচ্ছেন না। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের নিয়মিত আন্দোলনে তিনি নেই। উল্টো দিকে আবার জাল ছড়াচ্ছে বিজেপি! দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তৃণমূলের নেতা-সাংসদ-বিধায়কদের অনেকেই তলে তলে বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সিদ্ধার্থনাথ আরও দাবি করেছেন, তাঁরা দল ভাঙাচ্ছেন না। তৃণমূল নিজে থেকেই ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে!

এই ঘটনাপ্রবাহ মাথায় রাখলেই মমতার এ দিনের মন্তব্যের ইঙ্গিত পরিষ্কার বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছে। বস্তুত, দলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বন্ধ করার বার্তা দিতে গিয়েও মমতা এ দিন বলেছেন, কেউ নিজেকে বেশি বড় ভেবে ফেললে প্রয়োজনে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এই সূত্রেও তৃণমূল নেত্রীর হুঁশিয়ারি, “তাতে যদি কেউ মনে করেন অন্য পার্টিতে যাব, দরজা খোলা! যান!” যা শুনে দলেরই এক রাজ্য নেতা বলছেন, “সিবিআই তদন্ত জোরদার হওয়ার সময় থেকেই নেত্রী বলছেন, যাঁরা অন্য দলে যেতে চান, চলে যেতে পারেন। এখন হুঁশিয়ারি আরও বেড়েছে!” পক্ষান্তরে বিজেপি-র এক রাজ্য নেতার কটাক্ষ, “ভয় পেয়ে উনি দলের লোকজনকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন!”

কৌশলে শুভেন্দুকে বার্তা দিলেও মমতা অবশ্য মঞ্চ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁর বা মুকুল রায়ের মতো তমলুকের সাংসদও ‘চক্রান্তে’র শিকার। যে কারণে মমতা এ দিন বলেছেন, “ক্ষমতা থাকলে আমায় জেলে পোরো! মুকুলকে জেলে পোরো, শুভেন্দুকে জেলে পোরো, আমায় পোরো, পার্থদাকে পোরো, বক্সীকে পোরো, শঙ্কুকে পোরো, ববিকে পোরো! এক জনকে পুরবে, লক্ষ কর্মী তৈরি হবে!” মঞ্চে উঠে শুভেন্দু এসেছেন কি না, খোঁজ নিয়েছেন। স্লোগান দেওয়ার জন্যও শুভেন্দুকে ডেকে নিয়েছেন। দলের একাংশের বক্তব্য, সন্দেহের বাতাবরণ আড়াল করতেই এমন ‘নৈকট্যে’র পর্দা! গোটা পর্ব নিয়ে শুভেন্দু প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে শুভেন্দু শিবিরের দাবি, দলকে আসলে ঐক্যবদ্ধ রাখার বার্তাই দিতে চেয়েছেন দলনেত্রী।

তাই শুভেন্দুকে কাছে টানার চেষ্টাই করেছেন।

medinipur visit subhendu adhikary mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy