Advertisement
E-Paper

শুভেন্দুর সভায় মমতার নাম নিলেন না কেউ

‘বিদ্রোহ, বিপ্লব, সংগ্রাম। তমলুক তোমার আর এক নাম।’ শনিবার বিকেলে নন্দকুমারে শুভেন্দু অধিকারীর সংবর্ধনা সভায় এই ছিল উদ্বোধনী গান। হয়তো প্রতীকীই ছিল। তবে গান শেষে কর্মীরা যে ভাবে উঠে হাততালির স্রোত বইয়ে দিলেন, তাতে সভার মনোভাব চাপা রইল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৪ ০২:১৭
শুভেন্দু অধিকারীকে সংবর্ধনা। নন্দকুমারের খঞ্চিতে। শনিবার পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

শুভেন্দু অধিকারীকে সংবর্ধনা। নন্দকুমারের খঞ্চিতে। শনিবার পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

‘বিদ্রোহ, বিপ্লব, সংগ্রাম। তমলুক তোমার আর এক নাম।’ শনিবার বিকেলে নন্দকুমারে শুভেন্দু অধিকারীর সংবর্ধনা সভায় এই ছিল উদ্বোধনী গান। হয়তো প্রতীকীই ছিল। তবে গান শেষে কর্মীরা যে ভাবে উঠে হাততালির স্রোত বইয়ে দিলেন, তাতে সভার মনোভাব চাপা রইল না।

রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর শুভেন্দুর প্রথম প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মুহুর্মুহু জয়ধ্বনি তুলে পাশে থাকার বার্তা দিলেন কর্মীরা। এই প্রথম প্রায় এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উচ্চারিত হল না এক বারও। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যা প্রায় অচিন্ত্যনীয়।

এ দিনই সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামে এক জরুরি বৈঠক হয় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, “যে পদ্ধতিতে শুভেন্দুবাবুকে সরানো হল, তাতে নন্দীগ্রামের মানুষ ভেঙে পড়েছে।” তিনি জানান, বিধায়ক ফিরোজা বিবির নেতৃত্বে আগামী বৃহস্পতিবার ১৫ জনের একটি দল তৃণমূল ভবনে গিয়ে ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাবেন।

এ দিনের কর্মসূচিতে নন্দকুমার ব্লক এলাকার মধ্যে আমন্ত্রণ সীমাবদ্ধ থাকলেও, ভিড় উপচে পড়ছিল দুপুর থেকে। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে জিতে সাংসদ হওয়ার পরে শুভেন্দু অধিকারীকে এর আগেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। শনিবার নন্দকুমারের খঞ্চি গুণধর আদর্শ বিদ্যাপীঠের সভাগৃহে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেছিল তমলুকের নন্দকুমার ব্লক তৃণমূল ও তৃণমূল যুব কংগ্রেস। পূর্বঘোষিত এই সভায় শুভেন্দু আসার আগে পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ক্ষোভ, দুঃখ চেপে রাখতে পারছিলেন না কর্মীরা। শুভেন্দুর অপসারণের পিছনে দলের প্রথম সারির এক নেতার নাম করে বিষোদ্গার চলছিল।

নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে জানিয়ে দেন, “পদমর্যাদায় যা-ই পরিবর্তন হোক না কেন, শুভেন্দুর নেতৃত্বেই আমরা কাজ করে যাব।” স্থানীয় তৃণমূল শিক্ষা সেলের নেতা কালীশঙ্কর মাইতি আবার শুভেন্দুকে ‘যথাযোগ্য সম্মান’ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত আলোচনা, তাঁকে বেশ খোলামেলা মেজাজেই পাওয়া গিয়েছে এ দিন। এক ঘণ্টার বক্তব্যে শুভেন্দু দলের সমালোচনা করে কোনও কথা বলেননি। তবে, দলনেত্রীর নামও মুখে আনেননি তিনি। বরং নিজের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কথা বলে সূক্ষ্ম ভাবে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন। শুভেন্দুর কথায়, “আমি প্যারাসুটে নেমে আসিনি, বা আমার পারিবারিক পরিচয়ে বিধায়ক, সাংসদ হইনি। ২০০১ সালে দলের কঠিন সময়ে মুগবেড়িয়া বিধানসভায় লড়াই করে পরাজিত হয়েছিলাম। ২০০৪ সালে তমলুকে পরাজিত হয়েছিলাম। তখনও আমি পালিয়ে যাইনি। ভবিষ্যতেও আপনাদের ছেড়ে পালিয়ে যাব না। আমার পরিবর্তন হবে না। আমি আপনাদের সেবায় থাকব।”

চিট-ফান্ড থেকে দলীয় কর্মীদের সতর্ক করার সময় সারদার নাম নেওয়া-সহ দু’একটা মন্তব্যে উষ্মার সুর যে শোনা যায়নি, এমনটা নয়। সভা শেষে যেমন মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতীদের কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করে বসেন, “মেদিনীপুরের লোকেরা কেউ চাকর-বাকর নয়।” তবে ওই এক-দু’বারই। কর্মীরা যখন ঘিরে ধরে জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন, তখনও যেমন নির্বিকার মুখে ছিলেন শুভেন্দু, সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নেও তেমনই অবিচলিত থেকেছেন। তিনি শুধু বলেন, “আমি কাজ করে যেতে চাই। কাজটাই আমরা পরিচয়।”

সেই কাজকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা অন্তত প্রকাশ্যে জানিয়ে এ দিনই তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ বলেছেন, শুভেন্দুর উপস্থিতিতে সংগঠনের আগামী দিনের কর্মসূচি স্থির করতে চান তিনি। এ দিন বিকেলে সৌমিত্র তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে এসে জানান, আগামী ১০ জুনের মধ্যে শুভেন্দুর উপস্থিতিতে তৃণমূল ভবনে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মুকুল রায়, সুব্রত বক্সী, মদন মিত্রের মতো দলের শীর্ষ নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে।

শুভেন্দু অবশ্য জানান, আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি কোনও আমন্ত্রণ পাননি। আমন্ত্রণ পেলে কি যাবেন? শুভেন্দু বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার জন্য দলে এখন অনেক লোক আছে। সাংসদ ও তিনটি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হিসাবে আমার সাংবিধানিক দায়দায়িত্ব তো আগে পালন করতে হবে। জুনের ৪ থেকে ১২ সংসদের অধিবেশন চলবে। আমন্ত্রণ পেলে দেখব।”

suvendu adhikary tamluk
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy