Advertisement
E-Paper

শালবনি নিয়ে বক্সী বিঁধলেন জিন্দল, কেন্দ্রকে

শালবনির ইস্পাত প্রকল্প চালু করা নিয়ে জিন্দল গোষ্ঠীর দিকে তোপ দাগলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। আঙুল তুললেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকেও। তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার ইঙ্গিত, ওই প্রকল্প চালু করার দাবিতে বিরোধীদের আন্দোলন অস্বস্তিতে রেখেছে শাসক দলকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। রয়েছেন জমিদাতাদের সংগঠনের সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতোও। বৃহস্পতিবার শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার সামনে।  ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। রয়েছেন জমিদাতাদের সংগঠনের সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতোও। বৃহস্পতিবার শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার সামনে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

শালবনির ইস্পাত প্রকল্প চালু করা নিয়ে জিন্দল গোষ্ঠীর দিকে তোপ দাগলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। আঙুল তুললেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকেও। তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার ইঙ্গিত, ওই প্রকল্প চালু করার দাবিতে বিরোধীদের আন্দোলন অস্বস্তিতে রেখেছে শাসক দলকে।

বুধবার কারখানা সংলগ্ন তৃণমূলের ধর্না-মঞ্চ থেকে সুব্রতবাবু বলেন, “শান্তির পরিবেশে জমি নিয়ে পাঁচিল তুললেন। কিন্তু যখন কারখানা চালু করার কথা, তখন নতুন অজুহাতে চলে যেতে চাইছেন! রাজ্যকে অপদস্থ করতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন! চাপ সৃষ্টি করে বিশ্ৃঙ্খলা তৈরি করবেন না।”

শাসক দলের শীর্ষ নেতার এ দিনের অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ জিন্দল গোষ্ঠী। প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারার দায়ও নিচ্ছে না তারা। গত ৩০ নভেম্বর সজ্জন জিন্দল কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে শালবনির ইস্পাত প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখার কথা জানান। কয়লা ও আকরিক লোহা এই দুই কাঁচামালের যোগানের অভাবেই এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেন তিনি। সংস্থার দাবি, ওই প্রকল্পে ৭০০ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে। প্রকল্প ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তারা এত লগ্নি করত না। সংস্থার এক কর্তা মনে করান, ৩০ নভেম্বর সজ্জন জিন্দল লগ্নিতে বাধা হিসেবে রাজ্যের সদিচ্ছার অভাবের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। সংস্থার হাতে কয়লা ব্লক থাকার সময় রাজ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে কিছু ছাড়পত্র দেয়নি বলে ক্ষোভও জানিয়েছেন।

ধর্না-মঞ্চ থেকে সুব্রত বক্সী অবশ্য শালবনি-পরিস্থিতির দায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। তিনি এ দিন বলেন, “বাংলার সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে হবে। এটা বহু দিনের প্রচেষ্টা। তাতে কিছুটা সাহস জুগিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারা অসহযোগিতা করায় যে পদ্ধতিতে ওঁরা (জিন্দল) চলে যেতে চাইছেন তাকে ধিক্কার জানাই।” রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি রাহুল সিংহ যা শুনে হেসে বলেছেন, “তৃণমূল এ রাজ্যে তোলাবাজির শিল্প আমদানি করেছে। সেই শিল্পের কাছে সব শিল্পই হার মানাবে। আমাদের দুষে লাভ হবে না। মানুষ জানেন, কে-কী করেছে।” তাঁর সংযোজন, “সিঙ্গুর থেকে কারা বিশৃঙ্খলা করে শিল্প সরাতে বাধ্য করেছিল, তা ত সুব্রতবাবুদের অজানা নয়।”

শালবনিতে বক্তব্য রাখছেন সুব্রত বক্সী

সুব্রতবাবু অবশ্য শালবনি সমস্যা মেটানোর দায়িত্বও কেন্দ্রের কাঁধে দিয়েছেন। বলেছেন, “আকরিক লোহা ও কয়লার জন্য কারখানা গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তা হতে পারে না। এটা অজুহাত ছাড়া আর কি? এ দু’টি বিষয়ই কেন্দ্রের হাতে। রাজ্যের হাতে থাকলে ১২ ঘণ্টায় সমস্যা মিটে যেত। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হোক।”

মঞ্চে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পন্ডা এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, “শালবনির বর্তমান পরিস্থিতির পিছনে বিজেপি-র ষড়যন্ত্র রয়েছে। কায়দা করে পরিস্থিতি বিগড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।” সুব্রতবাবু ঘোষণা করেন, প্রকল্পের জমিদাতাদের মতো তৃণমূলও জিন্দলদের কারখানা চালু করার দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার ধর্নায় বসবে।

শুক্রবার শালবনির কারখানা চত্বরে শুরু হয়েছিল তৃণমূলের সাত দিনের ধর্না-অবস্থান কর্মসূচি। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল আজ, বৃহস্পতিবার। ইতিমধ্যে জেলা বিজেপিও অবস্থানের অনুমতি চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। বিজেপি নেতৃত্বের পরিকল্পনা ছিল, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের অবস্থান উঠলে তাঁরা ফের পুলিশের কাছে ধর্নার অনুমতি চেয়ে আবেদন করবেন। কিন্তু তৃণমূল লাগাতার ধর্নার কথা বলে বিজেপির পরিকল্পনায় চোনা ফেলে দিল বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। জেলা বিজেপির সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল জানে মানুষ ওদের পাশে নেই। তাই এ সব কৌশল করছে। তবে খুব একটা সুবিধে করতে পারবে না।”

তবে শাসক দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা এ দিন প্রকল্প চালু করার দাবিতে অবস্থান-কর্মসূচির কথা ঘোষণা করলেও জমিদাতা পরিবারের সদস্যেরা যে আলাদা ভাবেই অবস্থান চালাবেন, তা জানিয়েছেন ‘শালবনি জেএসডব্লিউ বেঙ্গল স্টিল লিমিটেড ল্যান্ড লুজার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতো। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের আহ্বানে এ দিন তিনি তাদের ধর্না-মঞ্চে গিয়ে সুব্রত বক্সীকে বরণ করলেও, বারংবার অনুরোধের পরেও সেই মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখেননি। এত কাছে গিয়েও দূরত্ব কেন? জমিদাতা সংগঠনের সম্পাদকের মন্তব্য, “দেখি, রাজ্য কতটা সাহায্য করে। যদি দেখি, নানা আশ্বাসের কথা শুনিয়ে ২০১৬-র নির্বাচন কাটিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, তা হলে আমরা আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াব।”

salbani jindal steel plant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy