পুলিশের এক বড়কর্তার স্ত্রী পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে মোটা টাকা ‘অনুদান’ দিয়েছিলেন সারদা কর্তারা। রীতিমতো চেক লিখে। তার তথ্যপ্রমাণ হাতে পেলেও, পুলিশের ওই কর্তা বা তাঁর স্ত্রীকে ডেকে পাঠানোর সাহস করেননি স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেটিং টিম-এর (সিট) কর্তারা।
উত্তরবঙ্গে স্কুল, কলেজ, রিসর্টের জন্য জমি কেনা, বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সারদা-কর্তাকে ‘সাহায্য’ করেছিলেন প্রভাবশালী কিছু নেতা। সে তথ্য হাতে থাকলেও তাঁদের কাউকে জেরা করার জন্য আজ অবধি ডাকেনি সিট। যে সারদা দুর্নীতিকাণ্ডে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তার তদন্তে নেমে এমন ভাবেই আটকে যাচ্ছিল সিট। তাই সারদা-কাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ায় ‘সিট’-এর অফিসার-কর্মীদের একাংশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। পুলিশের এক জন প্রথম সারির কর্তার যুক্তি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দৈনন্দিন কাজের জন্য সারদা-মামলায় প্রাপ্ত অনেক তথ্য ঠিকঠাক যাচাই করা যায়নি। অনেক পুলিশ একান্তে স্বীকার করছেন, সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত যাওয়ায় হাঁফ ছেড়েছে রাজ্য পুলিশ। এক আধিকারিকের কথায়, “আমাদের দশা এখন জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। কাজ করতে গেলে উপরওয়ালাদের চটাতে হবে। না করলে বাইরের নানা মহলে, এমনকী পুলিশের অন্দরেও সমালোচনা শুনব।”
এমনকী সারদাকাণ্ডে পুলিশ যাঁদের জেরা করেছে, তাঁদেরও কয়েকজন জেরার সময়ে পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের কথার সত্যতা যাচাই করা সিট-এর পক্ষে সম্ভব হবে না। সারদা-কাণ্ডের তদন্তের কাজ শুরুর পরে রাজ্যের নানা জেলার অন্তত শতাধিক পুলিশ অফিসার-কর্মীর সাহায্য নিয়েছে সিট। সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষকে নানা জেলার আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। অনেক সময়ে সংশ্লিষ্ট থানার তরফে পুলিশ হেফাজতে রেখে জেরাও করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরার সময়ে ধৃতদের একাংশ টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত এমন কিছু ব্যক্তির নাম বলেছেন, যা শুনে তদন্তকারী অফিসাররা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন। জেরার সময়ে ধৃতদের অনেকে এটাও দাবি করেছেন, তাঁরা সত্যি কথা বললেও সে সব কিছু যাচাই করা কখনও সিট-এর পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে, সিট-এর হয়ে জেরা করতে যাওয়া অফিসারদের অনেকেই অপ্রস্তুত হয়েছেন বলে একান্তে স্বীকারও করেছেন। নানা সময়ে ধৃতদের আদালতে হাজির করানোর সময়ে তদন্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ জনতার কটাক্ষও শুনতে হয়েছে।
শুক্রবার শীর্ষ আদালত সারদা-কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে রাজ্যের নানা জেলার পুলিশ মহলও আশ্বস্ত। দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গে একাধিক জেলার থানায় সারদা সংক্রান্ত মামলা রুজু হয়েছে। ওই সব মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত অফিসাররাও এ যাবৎ সংগৃহীত সব তথ্য সিবিআইকে তুলে দেওয়ার জন্য তৈরি। পুলিশের এক কর্তা জানান, সারদা-কাণ্ডের তদন্তে নেমে যে সব সন্দেহজনক লেনদেনের নথি মিলেছে তার কিছু খতিয়ে দেখা হয়েছে। যে সব নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে, তা এখন সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সিবিআই ওই তথ্য হাতে পেয়ে কত তাড়াতাড়ি যাচাই করতে পারে সেটাই দেখার বিষয় বলে মনে করেন পুলিশের ওই প্রথম সারির অফিসার।