Advertisement
১১ মে ২০২৪

স্বাস্থ্য-শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে জোর অমর্ত্যের

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উপর আরও এক বার জোর দিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। রবিবার শান্তিনিকেতনে প্রতীচী ট্রাস্ট আয়োজিত ‘শিশু স্বাস্থ্য ও বিদ্যালয় শিক্ষা’ বিষয়ে দু’দিনের আলোচনাসভার শেষে অমর্ত্যবাবু বলেন, “রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে খরচ বাড়ানোর চেয়ে বড় উপায় কিছু নেই। রাষ্ট্রের ব্যয় কমানোর জন্য অনেক সময় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু, সেটা কোনও রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার উপায় নয়। বরং তাতে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

চলছে বক্তৃতা। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

চলছে বক্তৃতা। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর উপর আরও এক বার জোর দিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। রবিবার শান্তিনিকেতনে প্রতীচী ট্রাস্ট আয়োজিত ‘শিশু স্বাস্থ্য ও বিদ্যালয় শিক্ষা’ বিষয়ে দু’দিনের আলোচনাসভার শেষে অমর্ত্যবাবু বলেন, “রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে খরচ বাড়ানোর চেয়ে বড় উপায় কিছু নেই। রাষ্ট্রের ব্যয় কমানোর জন্য অনেক সময় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু, সেটা কোনও রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার উপায় নয়। বরং তাতে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

সম্প্রতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমাতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর পরেই এ নিয়ে নানা বিতর্কের শুরু হয়। ভারতের স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ যেখানে এমনিতেই অনেক গরিব দেশের চেয়েও কম, সেখানে বরাদ্দ কেন আরও কমানো হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক এই বিতর্কের প্রসঙ্গেই তিনি এ দিনের মতামত ব্যক্ত করলেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য অমর্ত্যবাবু কোনও উত্তর দেননি। তাঁর জবাব ছিল, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।” যদিও অমর্ত্যবাবু এ দিনের বক্তব্যে পাশাপাশি আমেরিকা ও ইউরোপের উদাহরণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমেরিকায় স্বাস্থ্যখাতে রিপাবলিকানরা খরচ কমাতে চাইলেও ডেমোক্র্যাট রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার বাধায়, তা করা যায়নি। এখন সে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ। অন্য দিকে, ব্যয় কমাতে ইউরোপ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। সেখানে এখন আর্থিক বৃদ্ধি শূন্য।” তাঁর অভিমত, “শিক্ষা বা স্বাস্থ্যে খরচ কমিয়ে আয় বাড়াতে গেলে তাতে রাষ্ট্র শক্তিশালী হয় না।” অমর্ত্যবাবুর যুক্তি, শিক্ষিত স্বাস্থ্যবান কর্মীদের নিয়ে উন্নত গুণমানের বস্তু উত্‌পাদন করা সম্ভব। কিন্তু, দুর্বল স্বাস্থ্যের স্বল্পশিক্ষিত কর্মীদের নিয়ে সেই গুণমান বজায় রাখা যায় না। তিনি সার্বিক ভাবে ভারত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “বহু দিন ধরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে বলেই জাপান-কোরিয়া প্রমুখ দেশের থেকে ভারত জাতীয় আয়ের নিরিখে পিছিয়ে পড়ছে। কারণ ওই দেশগুলি ওই সব খাতে অনেক বেশি খরচ করছে।”

প্রতীচী ট্রাস্ট আয়োজিত শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রপল্লিতে দু’দিনের ওই আলোচনা সভার বিষয় ছিল শিশু স্বাস্থ্যও শিক্ষার সংযোগ। প্রায় ১৮০ জন শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়িকর্মী, গবেষক এবং সরকারি প্রতিনিধিরা তাতে যোগ দেন। আলোচনায় উঠে আসে, ‘রাষ্ট্রীয় বালস্বাস্থ্য কার্যক্রমে’র অধীনে শিশুদের পুষ্টি, রক্তাল্পতা, চোখ-কান বা কথা বলার যে সব সমস্যা নির্ণয় হওয়ার কথা, বাস্তবে তার সামান্যই হচ্ছে। শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রায় সময়ই সরকারি নিয়মগুলির রূপায়ণ গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে হয়ে চলেছে। তাতে বাস্তবিক সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না। এ দিনের আলোচনার শেষে রাষ্ট্রকে শিশুস্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলার জন্য নানা প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এ দিন ওই সভায় ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী, শিশু সুরক্ষা কমিশনের অশোকেন্দু সেনগুপ্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE