Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুরক্ষার ছিদ্রপথে মল যেন মুক্তাঞ্চল

সুপার মার্কেটে ঢুকে পড়েছে জঙ্গি। এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে বেশ কয়েক জনকে পণবন্দি করে ফেলা হয়েছে। দিন কয়েক আগেই প্যারিসে এ ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত বিশ্ববাসী। শুধু প্যারিসই নয়, বছরখানেক আগে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি কফিশপে ঢুকেও নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল এক জঙ্গি। দুই দেশের দুই ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১৮ জনের। কী অবস্থা কলকাতার শপিং মল বা সুপার মার্কেটগুলির? ঘুরে দেখলেন আর্যভট্ট খান, সুপ্রিয় তরফদার ও দীক্ষা ভুঁইয়া।

নিউ টাউনের অ্যাক্সিস মল। মল চত্বরের গাড়ি পার্কিংয়ে নেই তল্লাশির ব্যবস্থা।

নিউ টাউনের অ্যাক্সিস মল। মল চত্বরের গাড়ি পার্কিংয়ে নেই তল্লাশির ব্যবস্থা।

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

মুখ দেখে তল্লাশি

রবিবার বেলা ১২টা। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলে বেশ ভিড়। গেটের মুখে একাধিক নিরাপত্তারক্ষী। রয়েছে মেটাল ডোর ডিটেক্টর। তা দিয়ে লোকজন ঢুকছেন। কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বা হাত নেড়ে দিব্যি তল্লাশি এড়িয়ে ঢুকে পড়ছেন। কেন? এক রক্ষীর জবাব, ওঁরা তো জোড়ায় জোড়ায় প্রায় রোজই আসেন। মুখ চেনা হয়ে গিয়েছে।

দরজা খোলাই কাজ

দক্ষিণে ই এম বাইপাস লাগোয়া এক শপিং মলে ইচ্ছেমতো লোক ঢুকছেন, বেরোচ্ছেন। গাড়িও রাখা হচ্ছে মল লাগোয়া ফাঁকা জায়গায়। গাড়ি তল্লাশির ব্যবস্থা নেই। আর শপিং মলের ভিতরে ঢোকার মুখে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে এক জন পুরুষ এবং এক মহিলা নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। কিন্তু কারোরই শরীর কিংবা ব্যাগ তল্লাশি হচ্ছে না। কাচের দরজা টেনে খুলে ধরাই কাজ ওই দুই রক্ষীর।

সল্টলেক সিটি সেন্টার। নিরাপত্তারক্ষীর কাজ শুধুই দরজা খোলা।

একাই একশো

বিকেল ৫টা। সল্টলেকের একটি নামী শপিং মলে সবেমাত্র ভিড় হতে শুরু করেছে। গেটের সামনে নিরাপত্তারক্ষী এক জনই। তিনিই সবাইকে তল্লাশি করে ঢোকাচ্ছেন। ফলে ভিড় বাড়তেই হিমশিম। মহিলাদের জন্য কোনও তল্লাশির ব্যবস্থা নেই। ভিড় বাড়তে অনেক পুরুষও রক্ষীর চোখ এড়িয়ে দিব্যি ঢুকে গেলেন ভিতরে।

যেমন খুশি রাখো

সন্ধ্যা যত নামছে, সল্টলেকের শপিং মলের সামনের রাস্তায় ততই বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। শপিং মলের ভিতরে যাঁরা গাড়ি রাখতে পারছেন না, তাঁরা গাড়ি দাঁড় করাচ্ছেন বাইরে। সেখানে গাড়ি পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থাই নেই।

সব গাড়িকেই ছাড়

দুপুর দেড়টা। একের পর এক গাড়ি ও মোটরবাইক ঢুকছে হাওড়ার শিবপুরে গঙ্গার ধারের এক শপিং মলে। গাড়ির তল্লাশি হচ্ছে ঠিকই, তবে নেহাতই দায়সারা ভাবে। সব গাড়ির ‘ডিকি’ খোলাও হচ্ছে না। প্রবেশপথের পাশেই মোটরবাইক নিয়ে ঢোকার পথ। সেখানে অবশ্য তল্লাশির কোনও বালাই নেই। রোদ থেকে বাঁচতে মুখে কাপড় ঢাকা অবস্থাতেই দিব্যি ভিতরে ঢুকে গেলেন মোটরসাইকেলের পিছনে বসা কয়েক জন তরুণী। মুখ ঢাকা থাকায় গেটের সিসিটিভির ফুটেজেও তাঁদের ছবি পাওয়ার কোনও উপায় থাকল না। এ নিয়ে কোনও আপত্তি তুললেন না নিরাপত্তাকর্মীও।

সবাই ভাল

নিউ টাউনের একটি শপিং মলের ঢোকা-বেরোনোর গেট একটিই। সেখানেই দাঁড়িয়ে কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী। ঝাঁ-চকচকে ওই মলে ব্যাগ তল্লাশির পদ্ধতিটা কিন্তু সেই পুরনো আমলের। ব্যাগের সামনে মেটাল ডিটেক্টর এক বার বুলিয়ে নিয়েই ছাড়। যে সব রক্ষীর হাতে মেটাল ডিটেক্টর নেই, তারা স্রেফ ব্যাগের চেন খুলে একটু উঁকি মেরেই তল্লাশির পাট চুকিয়ে ফেলছেন।

নিরাপত্তা সংস্থার বক্তব্য

“আলাদা ভাবে সব সময়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মজুত রাখা সম্ভব হয় না। পেশোয়ার বা প্যারিসের মতো ঘটনার জন্য আমরা তৈরি নই।”

হাওড়ার অবনী মল। সর্বত্রই এক হাল।

পুলিশের সাফাই

“কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ বা রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ যখন জঙ্গি হানার আশঙ্কা নিয়ে আগাম রিপোর্ট দেয়, তখনই পুলিশ তল্লাশিতে নামে। সব সময়ে আলাদা বাহিনী নিয়ে তল্লাশি করতে গেলে চার গুণ পুলিশকর্মী লাগবে। সেই পরিকাঠামো আমাদের নেই।”

বিধিসম্মত সতর্কীকরণ

প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে নিরাপত্তা কড়া করতে বলেছে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE