Advertisement
E-Paper

সতর্কতার খাতিরে মোক্তার ধৃত, প্রশ্ন মুন্না-অনুব্রতের রেহাই নিয়ে

কলকাতা বন্দর এলাকার কংগ্রেস নেতা মহম্মদ মোক্তার বৃহস্পতিবার ভিন রাজ্য থেকে কলকাতায় ফেরা মাত্র তাঁকে গ্রেফতার করল লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখা। এবং এই গ্রেফতারিকে ঘিরে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে আবার উঠে পড়ল পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, যার সঙ্গে জড়াল শাসকদলের দুই নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার নাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০৩:২৭

কলকাতা বন্দর এলাকার কংগ্রেস নেতা মহম্মদ মোক্তার বৃহস্পতিবার ভিন রাজ্য থেকে কলকাতায় ফেরা মাত্র তাঁকে গ্রেফতার করল লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখা। এবং এই গ্রেফতারিকে ঘিরে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে আবার উঠে পড়ল পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, যার সঙ্গে জড়াল শাসকদলের দুই নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার নাম।

মোক্তারের বিরুদ্ধে বন্দর এলাকায় একাধিক অভিযোগ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজের নির্বাচনে সাব-ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরী খুনের ঘটনায় তাঁর নাম পুলিশের খাতায় উঠেছিল। তাতে মোক্তারের বিরুদ্ধে হাঙ্গামা বাধানোর মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার বেশ কিছু দিন বাদে তিনি জামিন পেয়েছেন। পুলিশের দাবি, গত এপ্রিলেও মোক্তারের বিরুদ্ধে ওয়াটগঞ্জ থানায় অস্ত্র-আইনে একটা মামলা হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রাক-ভোট সতর্কতা হিসেবে তাঁকে ধরা হল।

এ দিন রাজস্থান থেকে বিমানে চেপে কলকাতায় নামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ মোক্তারকে পাকড়াও পরে। পরে অস্ত্র--আইনের মামলাটিতেই তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম রয়েছে। তা হলে কমিশনের একই নির্দেশ মেনে বীরভূমে ভোটের আগে শাসকদলের ওই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে গ্রেফতার করা হল না কেন, রাজনীতিবিদ, প্রশাসন, এমনকী পুলিশ-কর্তাদেরও একাংশের মধ্যে সে প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। আবার তাপস-খুনে মুন্নাও অন্যতম মূল অভিযুক্ত। ওই মামলায় ফেরার হওয়ার পরে তাঁকে ভিন রাজ্য থেকে ধরে আনা হয়। বেশ কিছু দিন জেলে কাটিয়ে তিনিও জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর নামেও বন্দর এলাকায় তোলাবাজি ও সমাজবিরোধীদের সঙ্গে ওঠা-বসার বিস্তর অভিযোগ। শাসকদলের নেতা হওয়ার সুবাদেই তিনি সতর্কতামূলক গ্রেফতারি থেকে ছাড় পেলেন কিনা, খাস লালবাজারের অন্দরে এই মুহূর্তে তা নিয়ে জল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে।

বস্তুত ভোটের প্রাক্কালে লালবাজারের গতিবিধিতে সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে আক্ষেপ শোনা গিয়েছে পুলিশমহলের একাংশের মুখে। এই মহলের দাবি: বন্দরে বিবিধ অপরাধের জন্য মুন্না-ঘনিষ্ঠ একাধিক দুষ্কৃতীর নাম পুলিশের খাতায় রয়েছে। যেমন চুড়ি ফিরোজ, ইবনে, বিরিয়ানি রহমান, পাপুল বাহাদুর ওরফে দাই প্রমুখ, যারা ভোটের সময়ে গোলমাল পাকাতেই পারে। তবু তাদের গারদে পোরার কোনও চেষ্টা হয়নি। ইবনে আবার গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। “খুনের মামলায় জামিন পেয়ে এখন সে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।” মন্তব্য করেছেন লালবাজারের এক কর্তা। প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও দাবি, বন্দর এলাকায় ভোট লুঠের উদ্দেশ্যেই তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ছেড়ে রেখে বেছে বেছে মোক্তারকে ধরা হল। “কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নালিশ করেছি। সিপি জানিয়েছেন, তিনি ব্যাপারটা দেখবেন।”এ দিন বলেন প্রদীপবাবু। লালবাজার-কর্তৃপক্ষের কী বক্তব্য?

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ এ দিন এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে কিছু পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা: ‘দাগি দুষ্কৃতীদের’ যে তালিকা গার্ডেনরিচ থানা বা গুন্ডাদমন শাখায় রয়েছে, তাতে কোথাও মুন্নার নাম নেই। তাই ওঁকে ধরা হয়নি। তা হলে ইবনের মতো মুন্না-ঘনিষ্ঠ ‘পরিচিত অপরাধী’রা ছাড় পাচ্ছে কেন?

এক কর্তার জবাব, “গ্রেফতারির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তাও বিচার করা হয়। অনেক সময়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।” কলকাতা পুলিশ-সূত্রের তথ্য, প্রাক-ভোট সতর্কতায় শহরে ৫১৪৯ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে ২৫০১ জন।

অর্থাৎ, ভোটের তিন দিন আগেও মহানগরের এক-তৃতীয়াংশ দাগি অপরাধী পুলিশি জালের বাইরে! লালবাজার-সূত্রের খবর, উত্তরের নারকেলডাঙা-রাজাবাজার কিংবা দক্ষিণের বেহালা-টালিগঞ্জের মতো বহু জায়গায় শাসকদলের ঘনিষ্ঠ চেনা দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ, স্থানীয় থানা বা লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখা জেনেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এক অফিসারের কথায়, “শেখ বিনোদের শাগরেদ শিউকুমার রজক, রাজেশ খানেরা দক্ষিণ কলকাতায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হামলা-তোলাবাজির মতো মামলা থাকলেও তাদের ধরার কোনও চেষ্টা নেই।” তিনি জানান, বাইপাস লাগোয়া তিলজলা-মাঠপুকুরেও চেনা অপরাধীদের বড় অংশ অধরা। বাচ্চা তারক, লালুবাবুর মতো অনেক দাগি নাগালের বাইরে।

এবং এ হেন ‘বদান্যতা’র পিছনে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের ছায়াই দেখছেন ওঁরা। শাসকদলের কী প্রতিক্রিয়া?

বিতর্কটি থেকে একটু দূরত্ব রাখতে চাইছে তৃণমূল। মুন্না-প্রসঙ্গ ‘বিচারাধীন’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন পুরমন্ত্রী তথা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। তবে তাঁর দাবি, “মোক্তারের নামে পুলিশে অনেক অভিযোগ রয়েছে।”

md iqbal md mokhtar anubrata mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy