Advertisement
E-Paper

সমাবর্তন বয়কট করলেই শংসাপত্রে দাগ: আচার্য

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কোথায় হবে, অনেক টানাপড়েনের পরে তা ঠিক করে দিয়েছেন তিনিই। এ বার ছাত্রছাত্রীদের বয়কটের সিদ্ধান্তে সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাতে কোনও রকম ব্যাঘাত না-ঘটে, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করতে চাইছেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কী সেই পদক্ষেপ?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৪

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কোথায় হবে, অনেক টানাপড়েনের পরে তা ঠিক করে দিয়েছেন তিনিই। এ বার ছাত্রছাত্রীদের বয়কটের সিদ্ধান্তে সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাতে কোনও রকম ব্যাঘাত না-ঘটে, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করতে চাইছেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

কী সেই পদক্ষেপ?

বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানের পরে সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয় রাজ্যপালের কাছে। আচার্য বলেন, “অনুষ্ঠান বয়কট করা হবে কি না, সেটা ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপার। তবে কেউ তা করলে ডিগ্রি-শংসাপত্রের উপরে স্ট্যাম্প দিয়ে বয়কট করার কথা লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি আমি।”

আচার্যের এই প্রস্তাবের অর্থ কী?

যাদবপুরের একটি সূত্রের বক্তব্য, ২৪ ডিসেম্বর সমাবর্তনে যাঁরা ডিগ্রি-শংসাপত্র পাবেন, তাঁদের সকলেই যাতে ওই অনুষ্ঠানে থাকতে বাধ্য হন, তার জন্য পরোক্ষে চাপ সৃষ্টি করলেন আচার্য স্বয়ং। তিনি চান, যাঁরা সমাবর্তন বয়কট করবেন, তাঁদের শংসাপত্র ডাকে পাঠানো হবে। আর সেগুলির উপরে স্ট্যাম্প-সহ লেখা থাকবে, ওই পড়ুয়া সমাবর্তন বয়কট করেছিলেন।

সমাবর্তনে হাজির হয়ে ডিগ্রি-শংসাপত্র নেওয়াটা সম্মানের। কিন্তু অনেক সময়েই নানা কারণে বহু ছাত্রছাত্রী সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন না। দেখা যায়, কেউ কেউ চাকরি পেয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। অনেকের গরহাজিরার কারণ অসুস্থতা। নিছক দূরত্বের জন্যও অনেকে সমাবর্তনে হাজির হতে পারেন না। এটা শুধু যাদবপুর নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটে থাকে। তাই আচার্যের প্রস্তাবে যাদবপুর-কর্তৃপক্ষও হতচকিত। সেখানকার এক অফিসার বলেন, “সমাবর্তনে শংসাপত্র নেওয়াটা বাধ্যতামূলক কোনও বিষয়ই নয়। রাজ্যপালের পরামর্শ বাস্তবায়িত করতে গেলে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হবে। কোন কোন ছাত্র বা ছাত্রী ওই অনুষ্ঠান বয়কট করেছে, আর কারা অন্য কোনও কারণে আসতে পারছেন না, তা আমরা বুঝব কী করে?”

আচার্যের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলতে চাননি। উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী টেলিফোন কেটে দিয়েছেন। এসএমএস করেও জবাব মেলেনি। আর রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানান, রাজ্যপাল ঠিক কী বলেছেন, তা না-জেনে তিনি কিছুই বলবেন না। প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বুধবারেই আচার্যকে চিঠি দিয়ে উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। অভিজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠেরা মনে করছেন, আচার্য-রাজ্যপালের সুপারিশ পরোক্ষ ভাবে উপাচার্যের হাতই শক্ত করল।

১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঘেরাও তোলার জন্য উপাচার্যের ডাকে পুলিশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ুয়াদের বেধড়ক পেটায়। তার পর থেকে পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বড় অংশই উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে অনড়। শিক্ষক সংগঠন জুটা সমাবর্তন বয়কটের কথা জানিয়েছে। সমাবর্তনে তাঁদের ভূমিকা কী হবে, সেই ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কথা আগামী সোমবার। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না-হলেও উপাচার্য-বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই সমাবর্তন বয়কটের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। রাজ্যপালের সুপারিশ শুনে এক ছাত্র বলেন, “শংসাপত্রে স্ট্যাম্প লাগিয়ে বয়কটের কথা লিখলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেই সম্মানহানিকর হবে। কেন আমরা বয়কট করেছিলাম, সেই প্রসঙ্গ বারবার উঠবে। অপ্রীতিকর প্রসঙ্গটি তুলতে হবে আমাদেরই।”

আচার্যের প্রস্তাবে বিস্ময় প্রকাশ করছেন যাদবপুরের প্রাক্তন কর্তাদের অনেকে। কেউ কেউ নিন্দাও করছেন। প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু বলেন, “ডিগ্রি-শংসাপত্রের উপরে এমন কিছু লেখার সিদ্ধান্ত আচার্য-রাজ্যপাল নিতে পারেন না। তাঁর সেই ক্ষমতা নেই। তা ছাড়া এমন মন্তব্য করাটাই আচার্যের পক্ষে অশোভন। একটু দায়িত্বজ্ঞানহীন, শিশুসুলভও বটে।” আর শিক্ষক সংগঠন জুটা-র মতে, রাজ্যপালের প্রস্তাব বেআইনি।

রাজ্যপালের মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার অন্তরায় হয়ে উঠলে তিনি বিস্মিত হবেন না জানান যাদবপুরের এমেরিটাস অধ্যাপক তথা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এই প্রস্তাবের নিন্দা হওয়া উচিত। আমি প্রাক্তন ছাত্র, অধ্যাপক হিসেবে জানি, সমাবর্তনে ৫০ শতাংশ পড়ুয়াও শংসাপত্র নেন না। মন্তব্য করার আগে সেটা রাজ্যপালের জানা উচিত ছিল।”

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য রাজ্যপালের এ-হেন প্রস্তাবের আইনগত ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি জানান, পরীক্ষার মার্কশিটটাই আসল। শংসাপত্রের কোনও দাম নেই। এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে। সেখানেও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, শংসাপত্র না-থাকলেও পিএইচডি করা যায়। পাওয়া যায় চাকরিও।

ত্রিপাঠীর প্রস্তাবে রাজ্য বিজেপি ঘোর অস্বস্তিতে। উপাচার্যের ডাকে ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের পরেই পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ওই দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। আর তখনকার অস্থায়ী উপাচার্য অভিজিৎবাবুর পাশে দাঁড়ান আচার্য-রাজ্যপাল। কিন্তু তাঁরা যে আচার্যের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত নন, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব হাবেভাবে সেই সময় তা জানিয়েও দিয়েছিলেন। সমাবর্তন বয়কটকে ঘিরে রাজ্যপালের এ দিনের মন্তব্যের পরে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি রাহুলবাবু। তবে তিনি বলেন, “পড়ুয়াদের কোনও ক্ষোভ থাকলে রাজ্যপালকে জানান। ক্লাস বা কোনও অনুষ্ঠান বয়কট করে সমস্যার সমাধান হয় না।”

অভিজিৎবাবুর প্রতি শিক্ষক-ছাত্রদের বড় অংশ বিরূপ হওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে তাঁর ঢাল হয়েছেন আচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর জন্য কখনও তিনি ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বয়কট প্রত্যাহার করতে বলেছেন। তুমুল বিতর্কের মধ্যেই অভিজিৎবাবুকে স্থায়ী উপাচার্য করেছেন। কোথায় সমাবর্তন হবে, সেই বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের মুশকিল আসান করেন তিনি। সমাবর্তন সফল করতেও তিনি আসরে অবতীর্ণ। তাঁর প্রস্তাবের পরিণতি কী হয়, সংশ্লিষ্ট সব শিবিরের চোখ এখন সে-দিকেই।

আচার্যের প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের দিনেই অভিজিৎবাবুর অভিযোগ, সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে সল্টলেকের স্টেডিয়ামের কাছে তাঁর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে চার যুবক। কোনও রকমে বেরিয়ে গিয়ে তিনি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটে ফোন করে সব জানান। শুক্রবার লিখিত ভাবে অভিযোগ করবেন।

convocation jadavpur university governor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy