Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সরকারের অনাস্থা বিল নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলের মান্নানের

পঞ্চায়েতে আড়াই বছরের আগে অনাস্থা আনা যাবে না বলে সদ্য বিল পাশ করেছে সরকার। শাসক দলেরই এক নেতা সেই বিলের উপরে অনাস্থা জানালেন! তাঁর যুক্তি, পঞ্চায়েত দখল করে দলের শক্তি বাড়াতে বাধা হবে ওই বিল! কল্যাণীতে শুক্রবার তৃণমূলের রাজনৈতিক সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার তিন সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, গৌরীশঙ্কর দত্ত এবং মান্নান হোসেনকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

পঞ্চায়েতে আড়াই বছরের আগে অনাস্থা আনা যাবে না বলে সদ্য বিল পাশ করেছে সরকার। শাসক দলেরই এক নেতা সেই বিলের উপরে অনাস্থা জানালেন! তাঁর যুক্তি, পঞ্চায়েত দখল করে দলের শক্তি বাড়াতে বাধা হবে ওই বিল!

কল্যাণীতে শুক্রবার তৃণমূলের রাজনৈতিক সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার তিন সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, গৌরীশঙ্কর দত্ত এবং মান্নান হোসেনকে। মুর্শিদাবাদে সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মান্নান সেই অবসরেই বলেন, “হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটা বিল নিয়ে এসেছে। আড়াই বছরের আগে পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনা যাবে না। এটায় রাজ্যপাল সই করলে আমাদের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তিন-চার মাস অন্তত সময় পেলে আমরা সিংহ ভাগ পঞ্চায়েতে সংগঠন বিস্তার করতে পারতাম।” শাসক দলে সদ্য যোগদানকারী এক নেতার মুখে এ ভাবে নিজেদের সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন শুনে বিস্মিত হয়ে গিয়েছে তৃণমূলেরই একাংশ।

অধীর চৌধুরীর গড়ে দলের শক্তি বাড়াতেই প্রাক্তন সাংসদ মান্নান, তাঁর পুত্র, যুব নেতা সৌমিক হোসেনকে দলে নিয়েছে তৃণমূল। আসার পর থেকেই পিতা-পুত্র চেষ্টা করে যাচ্ছেন নেত্রীর মন পেতে। জেলার সাংগঠনিক রিপোর্ট দিতে উঠে মান্নান এ দিন বলেছেন, গত বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের প্রতীকে মাত্র এক জন বিধায়ক জিতেছিলেন। পরে বাম ও কংগ্রেস থেকে দু’জন বিধায়ক দলে এসেছেন। তাঁরা যোগ দেওয়ায় দলের শক্তি বেড়েছে, নিজেই এ কথা জানিয়ে মান্নান বলেন সম্প্রতি ভগবানগোলা, জঙ্গিপুর-সহ জেলার আরও কিছু অংশে অন্যান্য দলের পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এসেছে। কিন্তু পঞ্চায়েত আইনের সংশোধনী বিল এই কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়াল।

তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, মুর্শিদাবাদ, মালদহ বা উত্তর দিনাজপুর জেলায় শাসক দল এখনও বিশেষ শক্তিশালী নয়। সেখানে কিছু বিশেষ কৌশল নিতে হচ্ছে, যা অন্যত্র প্রযোজ্য নয়। মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস নেতারা যদিও মান্নানের বক্তব্যকে দল ভাঙানোর ঘোষণা হিসাবেই দেখছেন। বিধায়ক এবং জেলার কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তীর কথায়, “বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী বলেই মান্নান এখন তৃণমূলে গিয়েছেন। নতুন দলে গিয়ে তৃণমূল নেত্রীর মন পাওয়ার জন্য এ সব বলছেন। অচিরেই বুঝবে তৃণমূল, করেছে কত বড় ভুল!”

এই পরিস্থিতিতে এ দিন তলবি সভায় সরে যেতে হয়েছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সহ-সভাপতি রীনা বাউরিকে। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের আনা অনাস্থায় সায় দিয়েছেন সিপিএম সদস্যেরাও। অপসারিত হয়ে রীনাদেবী অভিযোগ করেছেন, “দলের মধ্যে দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। এই দলে আর থাকব কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি।” রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির বক্তব্য, “রীনার অনাস্থা গৃহীত হলেও এখনও নতুন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়নি।” তা হলে কি ফের রীনাদেবীকেই সহ-সভাপতি করা হবে? বিধায়ক শুধু বলেন, “এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দলের মধ্যেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” বস্তুত, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অনাস্থা আনা চললেও রঘুনাথপুর-১ ব্লকে তা আরও বেশি সংখ্যায় হচ্ছে। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই এর প্রধান কারণ। যে সমস্যা সামলানোর জন্যই বিল এনেছে রাজ্য সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

no confidence motion mannan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE