ধীমান রায় ও দীনবন্ধু গায়েন
হাবরার বিডিও নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশি তদন্ত যাতে যথাযথ হয়, সেটা দেখবেন বলে নির্বাচনী অফিসারদের মঙ্গলবারই কথা দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনসল। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা পালন করার চেষ্টা করল জেলা প্রশাসন। হাবরার তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায়কে বুধবার অশোকনগর থানায় ডেকে পাঠাল পুলিশ। যদিও এ দিনই নিগৃহীত বিডিও দীনবন্ধু গায়েনকে আরও এক বার সিপিএম-ঘনিষ্ঠ বলে আক্রমণ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
নিগৃহীত বিডিওর অভিযোগপত্রে বিধায়কের নাম ছিল কি ছিল না, এর আগে তাই নিয়েই বিতর্ক ঘনিয়েছিল। দীনবন্ধুবাবুর সহকর্মীদের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, চাপের মুখে অভিযোগপত্র বদল করা হয়েছে। চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে অবশ্য ধীমানবাবুর নাম ছিল না
বলেই তদন্তে প্রকাশ। তবে নিগ্রহের আগে অশোকনগরের বিধায়কের সঙ্গে তাঁর যে টেলিফোনে কথা কাটাকাটি হয়েছিল, সে কথা উল্লেখ করেছেন দীনবন্ধুবাবু।
এ দিন ধীমানবাবুকে ডাকল কেন পুলিশ? জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোন ঘটনার জেরে ২৫ মার্চ ওই বিডিও-র উপরে হামলা হয়েছিল, তা জানতেই ধীমানবাবুকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে ধীমানবাবু নিজে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “যা বলার দল বলবে। আমার কাছে এ ব্যাপারে কিছু জানতে চাইবেন না।”
বিডিও নিগ্রহের ঘটনার তদন্তে বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জেলাশাসক একটি বিশেষ দল গড়ে দিয়েছেন। সেই দলের সদস্যেরাই এ দিন অশোকনগর থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশি তদন্ত কতটা এগিয়েছে, তা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। ওই নিগ্রহের ঘটনায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাঁরা জামিন পেয়ে যান। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনকে এ দিন থানায় ডেকে পাঠানো হয়। তার আগে দীনবন্ধুবাবুর কাছে গিয়ে তাঁর বয়ান লিপিবদ্ধ করেন তদন্তকারী দলের সদস্যরা।
নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের জন্য পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে বলে মঙ্গলবার কথা দিয়েছিলেন জেলাশাসক। বুধবারই ওই সব অফিসারের জন্য পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশমতো নির্বাচনের কাজে যুক্ত সব অফিসারের জন্যই আমরা পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।” নিগৃহীত বিডিও-র গুমার ভাড়াবাড়ির সামনেও বসেছে পুলিশ পাহারা। নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের দফতরেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাবরার বিডিও-র চেম্বারে এ দিন ক্লোজড সার্কিট টিভিও বসানো হয়েছে। ধাপে ধাপে অন্য অফিসারদের দফতরেও এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
তবে দীনবন্ধুবাবুর চেম্বারে ক্যামেরা বসানো নিয়ে এ দিন কটাক্ষ করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সম্প্রতি খাদ্যভবনে নিজের ঘরে সিসিটিভি বসানো জ্যোতিপ্রিয়বাবুর প্রতিক্রিয়া, “ওই বিডিও-র বাড়িতে আর গাড়িতেও এ বার সিসিটিভি বসানো উচিত। তা হলে বোঝা যাবে ওই বিডিও কার কার সঙ্গে ওঠাবসা করেন।’’ বসিরহাটে দলীয় প্রার্থীর মিছিলে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এক জন বিডিও-র এত ক্ষমতা যে তিনি ১৫ জনের নাম মুখস্থ বলে গেলেন! এর পিছনে নিশ্চয়ই কারও ইন্ধন রয়েছে।” খাদ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন, “ওই বিডিও আগে যাঁদের বাড়িতে ভাড়া ছিলেন এবং এখন যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেই ব্যক্তিরা সিপিএমের লিডার। বিডিও অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করেছেন বলে আমাদের মনে হওয়ায় ইতিমধ্যেই তথ্যপ্রমাণ দিয়ে নির্বাচন দফতর এবং জেলাশাসককে জানিয়েছি।”
তবে খাদ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে তেমন আমল দিতে চাননি দীনবন্ধুবাবু। তিনি এ দিন বলেন, “আমি যে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করি, তা সবার জানা। তদন্ত হলেই সব বোঝা যাবে।” হাবরার বিধায়কের সঙ্গে কথা কাটাকাটির ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার চটজলদি মীমাংসা হয়ে গেলেই ভাল বলেও এ দিন মন্তব্য করেছেন দীনবন্ধুবাবু। তিনি বলেন, “এখন যে পরিস্থিতি চলছে, সুষ্ঠু ভাবে প্রশাসনিক কাজ চালাতে গেলে তার অবসান দরকার।” কিন্তু এ দিন জ্যোতিপ্রিয়বাবু যে মন্তব্য করলেন, তাতে মীমাংসার পথ আর খোলা রইল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিগৃহীত বিডিও-র সহকর্মীদের অনেকেই।
তবে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দীনবন্ধুবাবুর উপরে হামলার ঘটনার পরে যে ভাবে জেলার নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত অফিসারেরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, তাতে নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ্ন। শনিবার রাতে কমিশনের ফুল বেঞ্চ আসছে রাজ্যে। এমতাবস্থায় নির্বাচনের কাজের সঙ্গে যুক্ত অফিসার ও কর্মীরা যাতে বেঞ্চের সদস্যদের কাছে নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ না তুলতে পারেন, সে বিষয়টি মাথায় রেখেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতর। নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সব অফিসার ও কর্মীর নিরাপত্তার দায়িত্ব যে জেলাশাসক এবং রিটার্নিং অফিসারদের তা এ দিন আরও এক বার মনে করিয়ে দিয়েছে কমিশন। মঙ্গলবার বারাসতে নির্বাচনী অফিসারদের সঙ্গে জেলাশাসকের বৈঠকের ভিডিও ফুটেজও পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy