Advertisement
E-Paper

হোয়াটস অ্যাপে ভেসে এল বিয়ের নেমন্তন্ন

এত দিন ছিল ‘শুভ বিজয়া’, ‘ঈদ মুবারক’, ‘শুভ দীপাবলি’, ‘মেরি ক্রিসমাস’ লেখা হরফ। পোস্টকার্ডের দিন কবেই গিয়েছে। হরফ ছুটত এসএমএস হয়ে মোবাইল থেকে মোবাইলে। এখন তারও দিন গিয়েছে। শুষ্ক হরফ হয়ে উঠেছে ছবি, চলন্ত ভিডিও। এ বঙ্গে নতুন বিনোদন, বন্ধুতার-যোগাযোগের নতুন মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপ।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩১

এত দিন ছিল ‘শুভ বিজয়া’, ‘ঈদ মুবারক’, ‘শুভ দীপাবলি’, ‘মেরি ক্রিসমাস’ লেখা হরফ।

পোস্টকার্ডের দিন কবেই গিয়েছে। হরফ ছুটত এসএমএস হয়ে মোবাইল থেকে মোবাইলে। এখন তারও দিন গিয়েছে। শুষ্ক হরফ হয়ে উঠেছে ছবি, চলন্ত ভিডিও। এ বঙ্গে নতুন বিনোদন, বন্ধুতার-যোগাযোগের নতুন মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপ।

শুধু ঈদ-বিজয়া নয়, তার পাখা এতটাই বেড়েছে যে এমনকী বিয়ের নেমন্তন্নও উড়ছে তাতে ভর করে। তা-ও কোথায়? কেতাদুরস্ত মহানগরে নয়, সীমান্তের এক মফস্সল শহরে।

দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে এক কলেজ শিক্ষকের ফোনে ঢুকে পড়া ভিডিও ক্লিপিংস জানায়, আগামী ১০ ডিসেম্বর একটি বিয়েতে তাঁর নিমন্ত্রণ। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন, এ বুঝি কোনও মজা। পরে খোঁজ নিয়ে জানেন, মোটেই তা নয়। একেবারেই সত্যি। তাঁর কথায়, ‘‘শুভেচ্ছা বিনিময় আগেও হতো। কিন্তু হোয়াটস অ্যাপে বিয়ের নেমন্তন্ন আসবে, এতটা ভাবিনি।’’

যিনি সেই নেমন্তন্ন পাঠিয়েছিলেন, ধুলিয়ানের সেই কল্যাণ গুপ্ত কিন্তু অত ভাবেননি। আগামী ৭ ডিসেম্বর তাঁর বিয়ে। তাই হোয়াটস অ্যাপ করে ভিডিও ক্লিপিংস পাঠিয়ে দিয়েছেন শ’দুই পরিচিতকে। ‘‘একটা ভয় ছিল, কে কী ভাববে। দারুণ সাড়া পেয়েছি কিন্তু। হবু গিন্নিকেও নেমন্তন্ন করেছি। জবাব এসেছে— ওকে।’’

সত্যি বলতে, হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহারে এখন কেউই কম যান না। সিপিএমের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক মইনুল হক, নওদার ওসি উৎপল দাস বা কলকাতার রবীন্দ্রনগর থানার আইসি সৈয়দ রেজাউল কবীর, সুতির তরুণ ওসি সুব্রত ঘোষ অথবা সামশেরগঞ্জের প্রবীণ পুলিশকর্তা সম্রাট ফণি। দীপাবলির সন্ধ্যায় বহু জনের কাছেই পৌঁছেছে স্বাস্থ্যকর্তা শাশ্বত মণ্ডলের ভিডিও-শুভেচ্ছা।

হোয়াটস অ্যাপে ছড়িয়ে পড়া এই সব ভিডিও আসে কোত্থেকে?

সহজে ব্যাখ্যা দেন সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কুণাল পাল— ‘এই সব ভিডিও ক্লিপিংস কম্পিউটারে তৈরি করা যায় অতি সহজেই। যারা ভিডিও মিক্সিংয়ের কাজ করেন, তাঁরা অবসর সময়ে এই সব ছোট ক্লিপিংস তৈরি করেন, কেউ শখে কেউ প্রচার পেতে। সেগুলোই ফোন থেকে ফোনে ছড়িয়ে পড়ে।’ সাগরদিঘির সাইবার কাফের মালিক পরিতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ করেন, ‘‘কেউ কেউ এই সব মজাদার ভিডিও গুগুল থেকেও নেন।’’

পা ভেঙে বাড়িতে পড়ে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের কৃষি বিপণন দফতরের কর্মী প্রণব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর এখন বেশির ভাগ সময় কাটছে হোয়াটস অ্যাপ করেই। শয্যাশায়ী প্রণববাবুর কথায়, ‘কস্মিন কালেও যাদের সঙ্গে কথাবার্তার প্রয়োজন হয়নি, তাঁদের কাছেই হোয়াটস অ্যাপ পাঠাচ্ছি। তাঁদের থেকে যে সব ক্লিপিংস পাচ্ছি, ভাল লাগলে সেগুলোই অন্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। নেটের খরচটা একটু বাড়ছে, কিন্তু সময়টা তো কাটছে।’’

বিভিন্ন সংস্থা— কী সরকারি, কী বেসরকারি, তৈরি করে ফেলেছে ‘হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ’। কাজের কথা যেমন চলছে, হচ্ছে ঠাট্টা-ইয়ার্কিও। ফরাক্কার ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অমল মিশ্র ৮২ জনকে নিয়ে ‘এভারগ্রিন’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। বিজয়ায় মিষ্টির ছবি পোস্ট করেছেন। টিপ্পনীও এসেছে— ‘ও বাবা, এই জন্যই তবে ক’দিন ধরে পিঁপড়ে লাগছে মোবাইলে!’’

দেখা-সাক্ষাতের সময় যত কমছে, নেটনির্ভর ডিজিটাল দুনিয়াই খুলে দিচ্ছে নতুন পরিসর।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy