ফুটফুটে মেয়েটির বয়স তখন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ধরা পড়ল দুরারোগ্য ক্যানসার। বাবা-মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তড়িঘড়ি চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু বছর চারেক পরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি। তার পর গত ছ’বছর অনেক জায়গায় চিকিৎসা হয়েছে। বহু ওষুধপত্র খেয়েছে। তিন বার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয়েছে। শরীরে কর্কট রোগ নিয়ে সমাজমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল সে। এই নশ্বর জীবন কেমন কাটানো উচিত? কেমন করে নানা প্রতিকূলতা পেরোতে হয়, ছোট্ট মেয়েটি সেই শিক্ষা দিত ছোট ছোট ভিডিয়ো করে। দিনে দিনে তার ‘ফলোয়ার্স’ বাড়ে।
অনুরাগীরা জানান, বয়সে ছোট হলেও জুজা বেইন তাঁদের যাপন শেখাচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে আমেরিকার মেয়েটির ফলোয়ার্স ১৯ লক্ষ। সেই ১৯ লক্ষ অনুরাগীকে বাঁচতে শিখিয়ে ১৪ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল সে। সোমবার জুজার পরিবারের সদস্যেরা ইনস্টাগ্রামে তার মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছেন। লেখা হয়, ‘‘১৪ বছর বয়সে ১১ বার মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচেছে জুজা। নিজে ক্যানসার-যোদ্ধা হয়েও অনেক সুস্থ মানুষের চেয়ে পরিপূর্ণ ভাবে বেঁচেছে ও। বাঁচতে শিখিয়েছে অন্যদের। সোমবার নিষ্ঠুর ক্যানসার ওকে কেড়ে নিল।’’ আরও বলা হয়, ‘‘জুজার অস্তিত্ব আমাদের সকলকে বদলে দিয়েছে। মৃত্যু দিয়ে আমাদের সকলকে বদলে দিয়ে গেল ও।’’
ওই বার্তার পর জুজার ইনস্টাগ্রামে শোকবার্তার স্রোত। কাকতালীয় ভাবে, জুজা ইনস্টাগ্রামে তার শেষ ভিডিয়োতে বলেছিল, সকলের কাছে সে কৃতজ্ঞ। সে বলে অনেকেই কাোছের মানুষকে হালকা ভাবে নেয়। পাত্তা দেয় না। মানুষকে ভালবাসতে হয়। কাছে টেনে নিতে হয়। জীবন একটাই। অনুরাগীরা ওই ভিডিয়োর কমেন্টবক্সে গিয়ে নিরন্তর লিখছেন।
ক্যানসার-যোদ্ধা ছোট্ট মেয়েটি ক্যানসার সচেতনতায় একের পর এক ভিডিয়ো বানিয়েছে। তার হাসপাতাল যাত্রা থেকে সোনালি চুল কেটে ফেলা, ত্বক ফিকে হয়ে যাওয়া থেকে মনখারাপ, সমস্ত অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। তবে দিনের শেষে হাসতে ভোলেনি মেয়েটি। ক্যানসারের সঙ্গে যুঝতে যুঝতেও হাসি লেগে থাকত তার ঠোটের কোণে। বলেছিল, তার বয়সের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। দেখে মন খারাপ করে। আবার ভালও লাগে তাদের উচ্ছ্বাস দেখে। তারা যখন খেলাধুলো করে তখন বিছানাতে শুয়ে শুয়ে তাকিয়ে থাকে সে। ভাবে এক দিন সে-ও খেলবে।
আরও পড়ুন:
গত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিল জুজা। হাসপাতাল যাত্রা, কঠিন লড়াই তুলে ধরেছিল সমাজমাধ্যমের পাতায়। সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ছে সমাজমাধ্যমে। চোখ ভিজছে নেটাগরিকদের। পরিচিত হাসি হেসে আর ভিডিয়ো বানাবে না জুজা, বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকে।