E-Paper

ল্যুভর: চুরি হয়নি ১৪১ ক্যারাটের হিরে

১৮০১ সালে হিরেটি নেপোলিয়ন বোনাপার্তের হাতে আসে। সেটি তাঁর বিশেষ তরোয়ালে শোভা পেত। নেপোলিয়নের পতনের পরে সেটি ভিয়েনায় নিজের বাবার কাছে রেখে আসেন নেপোলিয়নের দ্বিতীয় স্ত্রী মারি লুইস।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:৫৫
নেপোলিয়নের তলোয়ারে ‘রিজেন্ট হিরে’।

নেপোলিয়নের তলোয়ারে ‘রিজেন্ট হিরে’।

কড়া প্রহরা ভেদ করে মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে যে ভাবে ফ্রান্সের ল্যুভর জাদুঘর থেকে বহুমূল্য গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছে চার চোর, তা নিয়ে এখনও বিশ্বস্তরে চর্চা তুঙ্গে। গয়নাগুলির ভবিষ্যত কী, সেগুলির ঐতিহাসিক মূল্য আদৌ চোরেরা বুঝবে কি না, তা নিয়ে বেশ চিন্তিত বিশেষজ্ঞ মহল। তবে এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, ১৪১ ক্যারাটের একটি ‘অভিশপ্ত’ হিরে চুরি হয়নি ওই দিন। উঠে এসেছে ভারতের যোগও।

ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, ১৬৮৭ সালে যখন গোলকোন্ডা দুর্গ দখল করেছিলেন ঔরঙ্গজ়েব, তখন সেখানকার খনিতে কাজ করা এক জন দাসের হাতে আসে ৪২৬ ক্যারাটের একটি হিরে। বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা নদীর ধারে ওই হিরেটি উদ্ধার হতেই সেটিকে পায়ের সঙ্গে একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়েছিলেন তিনি। সকলকে বলেছিলেন, পায়ে চোট লেগেছে, তাই কাপড় দিয়ে বাঁধা। এই মিথ্যে অবশ্য ধরা পড়ে যায়। যে জাহাজে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটির ক্যাপ্টেনই ওই দাসকে খুন করেন। হিরেটি এক ভারতীয় ব্যবসায়ী, জামচাঁদকে বিক্রি করে দেন তিনি।

এখানেই শেষ নয়। ১৭০১ সালে জামচাঁদের থেকে এই বহুমূল্য পাথরটি কিনে নেন টমাস পিট নামে এক ইংরেজ ব্যবসায়ী। এর পরে, পিটের ছেলের জুতোর মধ্যে লুকিয়ে হিরেটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইংল্যান্ডে। সেখানে, প্রায় দু’বছর ধরে কাজ চালিয়ে হিরেটিকে ১৪১ ক্যারাটের ব্রিলিয়ান্ট কাটে আনা হয়। জানা যায়, শুধুমাত্র এর জন্যই তখনকার দিনে খরচ হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার পাউন্ড!

হিরেটি অবশ্য ইংল্যান্ডে বিক্রি করা যায়নি। কিছুটা বাধ্য হয়েই তাই ১৭১৭-এ সেটি ওরলিয়েন্সের ডিউক, দ্বিতীয় ফিলিপকে বিক্রি করেন টমাস পিট। সেই সময়ে দাম পড়েছিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার পাউন্ড, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। এ বার অবশ্য পাল্টে গেল হিরেটির নামও। নয়া নাম হল ‘রিজেন্ট হিরে’। ঠাঁই হল ফরাসি ‘ক্রাউন জুয়েলস’, অর্থাৎ ফরাসি রাজপরিবারের গয়নাতে।

১৮০১ সালে হিরেটি নেপোলিয়ন বোনাপার্তের হাতে আসে। সেটি তাঁর বিশেষ তরোয়ালে শোভা পেত। নেপোলিয়নের পতনের পরে সেটি ভিয়েনায় নিজের বাবার কাছে রেখে আসেন নেপোলিয়নের দ্বিতীয় স্ত্রী মারি লুইস। যদিও মারির বাবা আবার সেটি ফিরিয়ে দেন ফরাসি রাজপরিবারে। এর পর থেকে হিরেটিকে দেখা গিয়েছে একাধিক শাসকের মুকুটে। শেষ পর্যন্ত সেটির স্থান হয় তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির মুকুটে। সেটিই ’৮৭-এ জাদুঘরে আনা হয়। ইন্টারন্যাশনাল জেম সোসাইটির বিশষজ্ঞদের মতে, রাজকীয় পাথরগুলির মধ্যে এমন ত্রুটিহীন হিরে দু’টি নেই! নেট নাগরিকদের অনেকেই বলেন, লোভ-লালসার জেরে এত বার বেহাত হওয়ার পরেও ঠিক নিজের মতো করে বিশেষ জায়গায় থেকে গিয়েছে হিরেটি!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Louvre Museum Robbery Louvre

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy