Advertisement
০৬ মে ২০২৪

স্ত্রী খুনের পরেই কি অধ্যাপককে নিশানা করেছিলেন মৈনাক?

২০১১ সালে বিয়ে। এক বছরের মধ্যেই ছাড়াছাড়ি। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ নয়। তারও বছর পাঁচেক পরে এক জনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হওয়ার পর অন্য জনের নাম উঠে আসা সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে।

স্ত্রী অ্যাশলের সঙ্গে মৈনাক। ছবি ফেসবুক থেকে।

স্ত্রী অ্যাশলের সঙ্গে মৈনাক। ছবি ফেসবুক থেকে।

সংবাদ সংস্থা
লস অ্যাঞ্জেলেস শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০৪:০২
Share: Save:

২০১১ সালে বিয়ে। এক বছরের মধ্যেই ছাড়াছাড়ি। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ নয়। তারও বছর পাঁচেক পরে এক জনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হওয়ার পর অন্য জনের নাম উঠে আসা সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে। অবশ্য সন্দেহভাজনও তত ক্ষণে আত্মঘাতী।

পিএইচডি-র গাইডের সঙ্গে গণ্ডগোলের কথা লিখেছিলেন নিজেই। এ বার পুলিশি তদন্ত জানাল, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউসিএলএ) নিহত বন্দুকবাজ মৈনাক সরকারের বিবাহিত জীবনও সুখের হয়নি। মিনেসোটায় নিজের বাড়িতে খুন হওয়া অ্যাশলে হাসতি মৈনাকের বান্ধবী ছিলেন বলেই প্রথমে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু স্থানীয় নথিপত্র জানাচ্ছে, অ্যাশলে ছিলেন মৈনাকের স্ত্রী। অ্যাশলের ঠাকুমা জাঁ জনসন এক সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, টাকার জোর না থাকায় মৈনাককে বিবাহবিচ্ছেদ দিতে পারেননি তাঁর নাতনি। এবং বলেছেন, ‘‘অ্যাশলের এক জনই শত্রু ছিল। মৈনাক!’’

মৈনাকের থেকে আলাদা হওয়ার পরে ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার মেডিক্যাল স্কুলে পড়তেন অ্যাশলে। থাকতেন বাবার সঙ্গে। ফেসবুকে মৈনাক ও তাঁর একসঙ্গে অনেক ছবি এখনও আছে। তবে সে সবই ২০১১-র মে মাসের আগে পোস্ট করা। শেষ দিকে অ্যাশলেকে ‘আনফ্রেন্ড’ করে দিয়েছিলেন মৈনাক। কিন্তু ঠাকুমার এই মন্তব্যের পর অনেকের প্রশ্ন, তবে কি দু’জনের ব্যক্তিগত তিক্ততা গড়িয়েছিল চরম শত্রুতায়? মৈনাকই অ্যাশলেকে মেরেছেন, অকাট্য ভাবে এখনও তা বলেনি পুলিশ। যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে অধ্যাপক উইলিয়াম এস ক্লুগকে মৈনাক খুন করেন, সেই একই পিস্তলের গুলিতে অ্যাশলেরও মৃত্যু হয়েছে কি না, ফরেন্সিক রিপোর্ট আসার আগে তা বলার উপায় নেই। তবে ফেসবুকে অ্যাশলের বোন অ্যালেক্সের দাবি, ‘‘আমার বোনকে খুন করেছে তার স্বামী।’’

কিন্তু কেন? ক্লুগের বিরুদ্ধে মৈনাকের তবুও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। ক্লুগ তাঁর কম্পিউটার কোড চুরি করে অন্য এক ছাত্রকে দিয়েছিলেন বলে মৈনাকের দাবি। একটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি গবেষক জানালেন, অন্যের কম্পিউটার কোড জানা গেলে তাঁর গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া অসাধ্য কিছু নয়। এই আশঙ্কা হয়তো মৈনাকও করতেন। কিন্তু এর সঙ্গে অ্যাশলের খুনের কী সম্পর্ক, মৈনাকের বাড়িতে পাওয়া ‘খতম তালিকা’য় ক্লুগ এবং ইউসিএলএ-র আরও এক অধ্যাপকের সঙ্গে এই তরুণীর নামটাও কেন ছিল— সবই ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।

ইউসিএলএ-র ঘটনা বুধবারের। পুলিশের সন্দেহ, তারও হয়তো দিন তিনেক আগে খুন করা হয় অ্যাশলেকে। মৈনাক মিনেসোটা থেকেই প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্পাসে এসেছিলেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। কিন্তু তার আগে অ্যাশলের বাড়ি গিয়েছিলেন কি না, স্পষ্ট নয়। মৈনাকের গাড়ির সন্ধান পেতে সাধারণ মানুষের সাহায্য চেয়েছে পুলিশ। বাঙালি গবেষকের দেহের কাছ থেকে যে পরিমাণ তাজা কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে, তা দেখে পুলিশ নিশ্চিত, ক্লুগের পাশাপাশি অন্য অধ্যাপককেও একই সঙ্গে শেষ করার ছক ছিল মৈনাকের। সেই মুহূর্তে ক্যাম্পাসে না থাকায় তিনি বেঁচে যান। পুলিশ তাঁর নাম জানাতে চায়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও বলছেন, ক্লুগের বিরুদ্ধে মৈনাকের অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং মৈনাকের মানসিক সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেছেন লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের প্রধান চার্লি বেক। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, মৈনাক যে তাঁদের প্রতি ক্ষুব্ধ, দুই অধ্যাপক-সহ অনেকেই তা জানতেন। তবু এমন কাণ্ডও যে ঘটতে পারে, ভাবা যায়নি। ফেসবুকে ক্লুগের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন অ্যাশলের বোন অ্যালেক্স। লিখেছেন, ‘‘নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য যা খুশি করতে পারত অ্যাশলে। শুধু ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা অধরা রয়ে গেল। জীবনটাই তো থেমে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mainak murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE