E-Paper

মনের রাস্তা গিয়ে মেলে পেটে, দাবি ইয়েলের গবেষণায়

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, পেটের রাস্তা দিয়ে মন পাওয়া যাক বা না-যাক, মনের রাস্তা পেটে গিয়ে মেলে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২

— প্রতীকী চিত্র।

কথায় বলে, মানুষের পেটের রাস্তা দিয়ে নাকি মন পাওয়া যায়। তাই কি? মনের টান কত দূর!

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, পেটের রাস্তা দিয়ে মন পাওয়া যাক বা না-যাক, মনের রাস্তা পেটে গিয়ে মেলে। কাছের বন্ধুদের মধ্যে অনেক সময়েই দেখা যায়, একই বিষয়ে আগ্রহ, প্রিয় খাবার এক, জীবনযাপনের ধারা একই রকম, আরও বহু বিষয়ে মিল। ইয়েলের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁদের পেটের ভিতরে থাকা মাইক্রোবস বা অণুজীবগুলিও এক। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ জার্নালে।

গবেষণাটিতে দেখা হচ্ছিল, মানুষের সামাজিক জীবন ও বন্ধু-পরিসরের সঙ্গে শরীরের মাইক্রোবায়োমের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না। মাইক্রোবায়োম হল, কোনও ব্যক্তির গ্যাস্ট্রোইন্টেসটিনাল ট্র্যাক্ট (পরিপাক নালী)-এ বসবাসকারী মাইক্রোঅর্গানিজ়ম বা জীবাণু। গবেষকেরা হন্ডুরাসের ১৮টি প্রত্যন্ত গ্রামের (যে সব জায়গা কার্যত বাইরের পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন) বাসিন্দা ১৭৮৭ জন প্রাপ্তবয়স্কের সামাজিক যোগযোগ ও তাঁদের প্রত্যেকের মাইক্রোবায়োম পরীক্ষা করে দেখেন। এই সুবিশাল ডেটাবেসে ২৫৪৩ মাইক্রোবিয়াল স্পিসিসের নাম ওঠে। প্রতিটি অণুজীব প্রজাতির আবার ৩,৩৯,১৩৭ স্ট্রেন বা ভেরিয়েন্ট ধরা পড়ে। গবেষকেরা সংগৃহীত তথ্যগুলি বিচার করে দেখেন, যাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে (একই পরিবারের বা ভিন্ন পরিবারের), তাঁদের মাইক্রোবায়োম বা পেটে উপস্থিত জীবাণুর প্রকৃতির মধ্যে অস্বাভাবিক রকমের সাদৃশ্য রয়েছে।

গবেষণাটির সহ-প্রধান লেখক তথা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান নেচার ল্যাব-এর গবেষক ফ্র্যাঞ্চেসকো বেগিনি বলেন, ‘‘একই পরিবারের নয়, এক বাড়িতে থাকেনও না, কিন্তু ভাল বন্ধু— এমন মানুষদের মাইক্রোবায়োমে ব্যাপক মিল দেখতে পাওয়া গিয়েছে।’’ অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ সামাজিক সম্পর্ক, একই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে থাকা, এ সবেই এক জনের থেকে অন্য জনের দেহে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন, দু’টো মানুষ এক জায়গায় এক সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, একই জায়গায় হাত রাখছেন, হাত মেলানো বা জড়িয়ে ধরার মতো শারীরিক স্পর্শ হচ্ছে তাঁদের মধ্যে, তাতেই জীবাণু দু’টো মানুষের মধ্যে আদানপ্রদান হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষের শরীরের মাইক্রোবায়োম কী ভাবে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। তাতে এক বাড়িতে থাকারও প্রয়োজন নেই। ফ্র্যাঞ্চেসকো বলেন, ‘‘এর সঙ্গে কারও ধর্ম, কী পরিমাণ অর্থ আছে কারও কাছে, কিংবা শিক্ষারও যোগ নেই।’’

তবে, সবচেয়ে বেশি জীবাণু আদানপ্রদান ঘটে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই। একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, পুরো বিষয়টি নির্ভর করে এই মানুষগুলো কতটা সময় একসঙ্গে কাটাচ্ছেন, তার উপরে। আবার উল্টো দিকে, যাঁদের বন্ধুবান্ধব কম বা একেবারেই নেই, ছোট্ট গণ্ডিতে বাস করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জীবাণু আদানপ্রদান একেবারেই কম।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক ছাত্র জ্যাকসন পুলম্যান বলছেন, ‘‘আমরা কতটা একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছি, ভাবলে অবাক লাগে... একেবারে অণুজীব স্তরে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Research NATURE Journal Strain Researchers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy