Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ফের রক্তাক্ত ঢাকা, খুন এলজিবিটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক জুলহাস মান্নান

ফের মৌলবাদীদের চাপাতির কোপে রক্তাক্ত হল ঢাকা। রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজ্জাল করিম সিদ্দিকে নৃশংস হত্যার আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই ফের আরও দু’জন প্রগতিশীলকে কুপিয়ে খুন করল মৌলবাদীরা। বাংলাদেশের সমকামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা জুলহাস মান্নানকে সোমবার সন্ধ্যায় কলাবাগানে তাঁর নিজের বাড়িতেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করল দুর্বৃত্তরা।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ১১:৩৬
Share: Save:

ফের মৌলবাদীদের চাপাতির কোপে রক্তাক্ত হল ঢাকা। রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজ্জাল করিম সিদ্দিকে নৃশংস হত্যার আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই ফের আরও দু’জন প্রগতিশীলকে কুপিয়ে খুন করল মৌলবাদীরা। বাংলাদেশের সমকামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা জুলহাস মান্নানকে সোমবার সন্ধ্যায় কলাবাগানে তাঁর নিজের বাড়িতেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করল দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে খুন করা হয়েছে জুলহাসের বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কেও। গুরুতর আহত আরও এক। বাংলাদেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী দীপু মণির সম্পর্কে ভাই জুলহাস সমকামীদের অধিকার বিষয়ক পত্রিকা ‘রূপবান’ এর সম্পাদক ছিলেন। প্রসঙ্গত, ‘রূপবান’ই সে দেশের প্রথম এলজিবিটি অধিকার বিষয়ক পত্রিকা। তিনি, এক সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রোটোকল অফিসারেরও দায়িত্ব সামলেছেন।

সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ জুলহাসের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে জোর করেই ঢুকে পড়ে জনা পাঁচেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী। তাদের হামলায় প্রথমেই আহত হন জুলহাসের দেহরক্ষী পারভেজ মোল্লা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি পারভেজ তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, তাঁকে বাঁচাতে জুলহাস ছুটে এলে তাঁর উপর এলোপাথাড়ি চাপাতি চালাতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। একই কায়দায় কোপানো হয় তনয়কেও। পারভেজ জানিয়েছেন, হামলাকারীদের পরনে নীল টি-শার্ট আর কাঁধে ব্যাগ ছিল। আর এক প্রত্যক্ষদর্শী রাকীব হাওলাদার জানিয়েছেন, শুধু চাপাতি নয়, দুষ্কৃতীদের এক জনের হাতে বন্দুকও ছিল। জুলহাসদের খুন করার পর তারা দ্রুত সেখান থেকে পালাতে চেষ্টা করে। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় স্থানীয়েরা তাদের ধাওয়া করেন। ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশও। যদিও এক জন খুনিকেও ধরতে পারেনি তারা। উল্টে তাদের হামলায় আহত হয়েছেন এক পুলিশকর্মীও।

আরও পড়ুন-কুপিয়ে খুন মুক্তমনা অধ্যাপককে

বাংলাদেশে বহু দিন ধরেই এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের সমানুধিকারের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন জুলহাস। ধর্মীয় মৌলবাদীরা বেশ কয়েক দিন ধরেই তাঁকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল। পয়লা বৈশাখের আগে থেকেই ফেসবুকে একটি ইভেন্ট পেজ খুলে বাংলাদেশের সমস্ত এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের গণধোলাইয়ের ডাক দেওয়া হয়। কুত্‌সিত ভাষায় চলে তাঁদের প্রতি অকথ্য গালিগালাজ, জুলহাস-সহ অনান্যদের খুনের হুমকিও। রিপোর্ট করার পর সেই ইভেন্ট পেজটি রিমুভ করা হলেও তাদের সেই হুমকি যে কতটা ভয়ঙ্কর ছিল জুলহাসের মৃত্যু তারই প্রমাণ দিল।

শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী শাফিউল ইসলাম, রাজীব হায়দার, আসিফ মইনুদ্দীনের পর ফের গত বছর ২৬ ফ্রেব্রুয়ারি অভিজিত্ রায়কে কুপিয়ে খুন করা— বাংলাদেশে শুরু হয়েছে এই নৃশংস হত্যলীলা। এর পর ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলয় নীল, ফইজল আরেফিন দীপন, নজিমুদ্দীন সামাদ, রেজাউল করিম সিদ্দিকি এবং জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়কে শিকার হতে হল চাপাতির। কেন বাড়ছে মৌলবাদীদের এই আক্রমণ? কেন বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তচিন্তার মানুষকে খুন হয়ে যেতে হচ্ছে? কেন বিন্দুমাত্র বাড়ছে না তাঁদের নিরাপত্তা? প্রশ্নগুলো উঠছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE