Advertisement
E-Paper

ফের রক্তাক্ত ফ্রান্স, বাস্তিল উৎসবে ট্রাক হানা, নিহত ৮৪, আহত অন্তত ২০০

বৃহস্পতিবার দেশের জাতীয় দিবস ‘বাস্তিল ডে’ উদ্‌যাপনের জন্য নিস শহরের সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। চারদিকে উৎসবের আমেজ। আকাশে আতসবাজির রোশনাই।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৭
ফের রক্তাক্ত ফ্রান্স:  রাস্তায় পড়ে নিথর দেহ। বৃহস্পতিবার নিস-এ হামলার পরে। ছবি: রয়টার্স।

ফের রক্তাক্ত ফ্রান্স: রাস্তায় পড়ে নিথর দেহ। বৃহস্পতিবার নিস-এ হামলার পরে। ছবি: রয়টার্স।

বৃহস্পতিবার দেশের জাতীয় দিবস ‘বাস্তিল ডে’ উদ্‌যাপনের জন্য নিস শহরের সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। চারদিকে উৎসবের আমেজ। আকাশে আতসবাজির রোশনাই। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আচমকাই পাল্টে গেল ছবিটা। ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করে ছুটে এল ১৯ টনের একটা সাদা ট্রাক। তার চাকায় প্রাণ গেল ৮৪ জনের। যার মধ্যে ১০ জন শিশু। আহতের সংখ্যা ২০০-র বেশি। তার মধ্যেও অন্তত ৫০ জন শিশু রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বেশ কয়েক জন আহতের অবস্থা সঙ্কটজনক। প্রায় ২৫ জন কোমায়। ফলে আরও দীর্ঘ হতে পারে মৃত্যুমিছিল।

চাকার তলায় মানুষ পিষতে পিষতে প্রায় দু’কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পরে অবশেষে থামে ট্রাকচালক। প্রাথমিক তদন্তের পর যার নাম মোহামেদ লাহুআইয়েজ বুহলেল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ৩১ বছর বয়সি ফরাসি-তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ওই ব্যক্তিকে শেষ পর্যন্ত গুলি করে মেরেছে নিরাপত্তারক্ষীরা। তার আগে সে-ও এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। জানা যায়নি, বুহলেলের আর কোনও সঙ্গী ছিল কি না, সেটাও। ট্রাকটির থেকে একটি আসল পিস্তল মিললেও বাকি যে দু’টি কালাশনিকভ রাইফেল এবং একটি গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি নকল।

তবে কয়েক দিন আগেই আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী ইন্টারনেটে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল। ট্রাক-বোঝাই বিস্ফোরক নিয়ে জনবহুল এলাকায় হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছিল সেই ভিডিও-য়। ফলে বুহলেলের সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংগঠনের যে সম্পর্ক ছিল না, তা-ও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ঘটনাটিকে জঙ্গি হানা বলেই আখ্যা দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই।’’

সেটা সত্যি হলে গত দেড় বছরে এই নিয়ে তিন বার জঙ্গি হানার শিকার হল ফ্রান্স। গত বছর জানুয়ারিতে ব্যঙ্গ পত্রিকা শার্লি এবদোর দফতরে হামলা দিয়ে যার শুরু। সে বার প্রাণ গিয়েছিল ১২ জনের। তার পর গত বছরই নভেম্বরে একের পর এক হানা রাজধানী প্যারিসে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ছ’জায়গায় বন্দুকবাজদের গুলিতে মারা যান ১২৮ জন। দু’টি ঘটনারই দায় স্বীকার করেছিল আইএস। চলতি বছরের জুন মাসে দুই পুলিশ অফিসারের উপর হামলা চালায় এক ব্যক্তি। পরে সে দাবি করে, আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে।

প্যারিস-হানার পরে দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ওলাঁদ। চলতি মাসেই তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ দিনের ঘটনার পর আরও তিন মাস জরুরি অবস্থা বলবৎ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এই ঘটনার পরেই নিসে জারি হয়েছে কড়া সতর্কতা। বিমানবন্দর বন্ধ করে সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। এ দিনের ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একজোট হয়ে সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে হবে— এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন, ‘‘আগের মতোই আমরা ফ্রান্সের পাশে থাকব।’’

ঠিক কী হয়েছিল গত রাতে?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাস্তিল দিবস উদ্‌যাপনে সমুদ্রের তীরে প্রম্‌নদ দেজ অঙ্গলে-তে সপরিবার ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখানে তখন চলছিল আকাশে আতসবাজির রোশনাই। ওই ভিড়ের মধ্যে আচমকাই প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসে একটা সাদা বড় ট্রাক। এক বার ডান দিক এক বার বাঁ দিক, একেবেঁকে ভিড়ের মধ্য দিয়ে ছুটতে থাকে। কখনও গতি বাড়িয়ে, কখনও কমিয়ে এগোতে থাকে সেটি। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়তে শুরু করেন মানুষ। অনেকেই পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হতে থাকেন। কোন দিকে গেলে প্রাণ বাঁচবে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

এ ভাবে প্রায় দু’কিলোমিটার ধরে হত্যালীলা চালায় ট্রাকটি। বহু প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই সময় গুলির শব্দও শোনা গিয়েছিল।

পরে পুলিশ জানায়, রাত ১২টা নাগাদ প্যালে দ্য মেদিতরানি ওতেলের কাছে ঘাতক ট্রাকটি থামে। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ এক জন ট্রাকটির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরেই সেটি থেমে যায়। বুহলেল তাকে লক্ষ করে গুলিও চালায়। তত ক্ষণে পুলিশ ট্রাকটি ঘিরে ফেলেছে। তারা পাল্টা গুলি চালায়। খানিকক্ষণ গুলির লড়াই চলে। পরে পুলিশ জানায়, গুলিতে মারা গিয়েছে ট্রাকচালক। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গিয়েছে, গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে ট্রাকটির সামনের কাচ।

পুলিশ ও ট্রাকচালকের গুলির লড়াইয়ের গোটা দৃশ্যটি রেকর্ড করেছেন নাদের-এল-শাফেই নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী। সংবাদমাধ্যমে আজ সারা দিন ঘুরেছে নাদেরের তোলা সেই ফুটেজ। সংবাদমাধ্যমের কাছে নাদের জানিয়েছেন, তিনি ওই আততায়ীকে কয়েক মিনিটের জন্য সামনে থেকে দেখেছিলেন। নাদের বলেন, ‘‘ওই আততায়ীকে দেখে খুব নার্ভাস বলে মনে হচ্ছিল! কী যেন খুঁজছিল। আমি তা-ই দেখে তার দিকে হাত নেড়ে চেঁচিয়ে তাকে থামতে বলেছিলাম। এর পরেই সে বন্দুক তুলে নিয়ে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকে।’’ রাস্তা লাগোয়া বাড়ির বারান্দা থেকে বাজি পোড়ানো দেখছিলেন পিয়োরো বিয়ানকুল্লি। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ দেখলাম লোকেরা ভয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছে। গোড়ায় ভেবেছিলাম কেউ মজা করার জন্য গুজব ছড়িয়েছে। তার পরেই দেখলাম ট্রাকটাকে। তার ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেল একের পর এক লোক।’’

ধ্বংসলীলার শেষে রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। রক্তাক্ত। পুলিশ এসে কাপড়ে-চাদরে মুড়ে দিচ্ছে সেগুলো। তার মাঝে নিথর বসেছিলেন সাদা কোট পরা মাঝ বয়সি এক ব্যক্তি। তাঁকে ঘিরে চার-পাঁচ জনের ছোটখাটো একটা ভিড়। কোনও মতে কান্না চাপতে চাপতে সেই ভিড়েরই এক জন বললেন, ‘‘ওর গোটা পরিবারটাই ট্রাকের চলায় শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

Bastille killed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy