Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বুক-এর হানায় ১২ সেকেন্ডেই ধুলো বোয়িং ৭৭৭

ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর ২৯৫ জন আরোহী সমেত এমএইচ ১৭ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে মাত্র ১২ সেকেন্ডের মধ্যেই, এমনই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তা-ই নয়, ওই হামলায় মাঝ আকাশেই গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর মাটিতে প্রায় ন’মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এমএইচ ১৭-এর ধ্বংসাবশেষ এবং যাত্রী ও বিমানকর্মীদের টুকরো টুকরো হওয়া দেহ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, আকাশ থেকে খণ্ড খণ্ড কাপড়ের মতো পড়ছিল দেহগুলো।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন ও লন্ডন শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৫
Share: Save:

ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর ২৯৫ জন আরোহী সমেত এমএইচ ১৭ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে মাত্র ১২ সেকেন্ডের মধ্যেই, এমনই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুধু তা-ই নয়, ওই হামলায় মাঝ আকাশেই গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর মাটিতে প্রায় ন’মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এমএইচ ১৭-এর ধ্বংসাবশেষ এবং যাত্রী ও বিমানকর্মীদের টুকরো টুকরো হওয়া দেহ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, আকাশ থেকে খণ্ড খণ্ড কাপড়ের মতো পড়ছিল দেহগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সব থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা কালান্তক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছিল ২৮০ জন যাত্রী ও ১৫ জন বিমানকর্মী বহন করা মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের ওই বিমানকে।

পূর্ব ইউক্রেনের আকাশথ দিয়ে যাওয়া বিমানটিকে ‘বুক মিসাইল সিস্টেম’-এর একটি ক্ষেপণাস্ত্রই যে ধ্বংস করেছে, সেই বিষয়টি এখন মোটামুটি নিশ্চিত। ভূমি থেকে আকাশে ছোড়ার মাঝারি পাল্লার ওই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ১৯৭৯ সালে সাবেক সোভিয়েক ইউনিয়নে তৈরি করা হয়েছিল যুদ্ধবিমান, ক্রুজ মিসাইল ও চালকহীন গুপ্তচর বিমানকে আকাশ থেকে নামানোর জন্য।

রুশ ভাষায় ‘বুক’-এর অর্থ, ভাল কোনও গাছ। তবে বুক মিসাইল সিস্টেম তৈরি হয়েছে শত্রুর যতটা সম্ভব খারাপ করার জন্যই। বিশেষজ্ঞদের মতে, লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়ার পর তাকে আঘাত করার ক্ষেত্রে এর নিশানা প্রায় নিভুর্ল, প্রায় ৯৫ শতাংশ।

বুক-এর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, লক্ষ্যবস্তুর ২০ মিটার আগেই সেটি বিস্ফোরণ ঘটায়। যার ফলে, মনে করা হচ্ছে, এমএইচ ১৭-এর ইঞ্জিন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে ওই বিস্ফোরণের দরুণ বিমানের জ্বালানিতে আগুন ধরে যায়। সব মিলিয়ে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মাঝ আকাশেই চূর্ণ হয়ে যায় বিমানটি।

মালয়েশীয় ওই বোয়িং ৭৭৭ ধ্বংস হয়েছে পূর্ব ইউক্রেনের ডনেৎস্ক এলাকায়, যেটি রুশপন্থী জঙ্গি সংগঠন প্রভাবিত। ভূমি থেকে হামলা চালিয়ে কোনও বিমানকে ভূপতিত করার ক্ষেত্রে জঙ্গিদের হাত থাকলে অনেক সময়েই দেখা যায়, তারা কাঁধ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রথমেই সেই সম্ভাবনা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, কাঁধ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা বড়জোর হয় ১৫ হাজার ফুট। আর মালয়েশীয় বিমানটি ছিল ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেলফার সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স’-এর প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা-তথ্য বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পের অধিকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কেভিন রায়ানের বক্তব্য, ওই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বিমানটি যারা ধ্বংস করেছে, তারা নির্ঘাৎ পেশাদার সেনাবাহিনী। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই হোক কিংবা ভুল করে, এটা তেমন কোনও বাহিনীরই কাজ। রায়ানের কথায়, “দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির বিস্তর সমন্বয় সাধন ছাড়া বুক মিসাইল নিক্ষেপ করে লক্ষ্যবস্তুর উপর নির্ভুল নিশানায় আঘাত করা সম্ভব নয়।”

আর এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড হান্ট-এরও বক্তব্য, কঠোর প্রশিক্ষণ কিংবা বাইরের সাহায্য ছাড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার কোনও জঙ্গি সংগঠনের পক্ষে মুশকিল, কারণ গোটা ব্যবস্থাটাই জটিল প্রযুক্তি নির্ভর।

ডনেৎস্ক এলাকার রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেতা আন্দ্রেই পুরগিন দাবি করেছেন, জঙ্গিদের হাতে বুক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আছে কি না, সেটা তাঁর জানা নেই। তবে পুরগিনের বক্তব্য, ওই ক্ষেপণাস্ত্র থাকলেও জঙ্গিদের মধ্যে এক জনও তা চালাতে জানে না। পুরগিন গোটা দায়টাই চাপাতে চেয়েছেন ইউক্রেন সেনার কাঁধে।

ইউক্রেন প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, এটা পরিষ্কার রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা। সন্দেহ করা হচ্ছে, মালয়েশীয় যাত্রিবাহী বিমানটিকে তারা ইউক্রেন সেনা বহনকারী বিমান ভেবে ভুল করেছিল।

নিশ্চিত ভাবে না বলা গেলেও একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার পূর্ব ইউক্রেনেরই স্নিঝনে শহরে বুক মিসাইল সিস্টেমের মতো হুবহু অস্ত্রসম্ভার দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ডনেৎস্ক ও স্নিঝনের দূরত্ব আশি কিলোমিটার। আবার ডনেৎস্কের মতো স্নিঝনেতেও রুশপন্থী জঙ্গিদের আধিপত্য রয়েছে। তবে ইউক্রেন সেনার হাতে যে বুক মিসাইল সিস্টেম রয়েছে, সেটা সরকারি ভাবেই স্বীকৃত।

ডনেৎস্ক পিপল্স রিপাবলিক-এর নিজস্ব ট্যুইটার অ্যাকাউন্টের একটি বার্তায় হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে জানানো হয়েছিল, রাশিয়ায় তৈরি প্রচুর বুক মিসাইল সিস্টেম জঙ্গিদের হাতে এসেছে। পরে অবশ্য ওই ট্যুইট মুছে ফেলা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Missile Malaysia Airlines plane
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE