পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আরও একটি শহরকে তালাবন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল চিন। গত কাল যেখানে গোটা দেশে করোনোভাইরাসের জেরে মৃতের সংখ্যা ছিল ২০৫, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেই সংখ্যাটাই বেড়ে দাঁড়িয়ে হয়েছে ৩৬১। সার্সের থেকেও এই ভাইরাস আরও ভয়ঙ্কর গতিতে ছড়াচ্ছে বলে আজ মেনে নিয়েছে চিনের সরকারও।
সতকর্তা হিসেবে আজ থেকেই ওয়েংঝাও নামে আর একটি শহরকে পুরোপুরি তালাবন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এ নিয়ে চিনের ১৯টি শহর বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে এখন। উড়ান তো বটেই, ট্রেন-বাস-ফেরি-সহ গণপরিবহণের সমস্ত ব্যবস্থা বন্ধ এই সব শহরে। স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরবন্দি। এমনকি, বাজার করতে বেরেনোতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আরও পড়ুন: এই প্রথম নয়, নতুন নতুন রূপে ফিরে আসে আতঙ্কের করোনাভাইরাস
উহানের পরে ঝেজিয়াং প্রদেশের ওয়েংঝাও-ই সেই শহর যেখানে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ৯০ লক্ষ মানুষের বাস এই শহরে। তার মধ্যে এখন ২৬৫ জনের চিকিৎসা চলছে। ঝেজিয়াং প্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬১। চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, গোটা দেশে ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে শুধুমাত্র হুবেই প্রদেশেই নতুন করে ২ হাজারেরও বেশি সংক্রমণের হদিস মিলেছে।
চিনের বাইরে প্রায় ২৪টি দেশে ছড়িয়েছে এই মারণ ভাইরাস। ভারত ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কাম্বোডিয়া, তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি— এই ২৩টি জায়গায় এই রোগে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এদের মধ্যে প্রায় প্রতিটি দেশই বিশেষ বিমান পাঠিয়ে চিন থেকে তাদের দেশের নাগরিকদের এয়ারলিফ্ট করে করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে বেশির ভাগ দেশই এখন চিনে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। যদিও নিজেদের দেশের নাগরিকদের না ফেরানোর যে সিদ্ধান্ত পাকিস্তান সরকার নিয়েছে, আজ তার প্রশংসা করেছে বেজিং। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, বন্ধু দেশের উপর ইসলামাবাদ কতটা আস্থা রাখে, এই সিদ্ধান্তই তার প্রমাণ। রোগের মোকাবিলায় মাত্র দশ দিনেই একটি বিশেষ হাসপাতাল তৈরি করেছে বেজিং। দেড় হাজার শয্যাবিশিষ্ট ওই হাসপাতাল শুরু হয়ে যাবে এই সপ্তাহেই। তবে সার্জিক্যাল মাস্ক-সহ বেশ কিছু চিকিৎসার সরঞ্জামের আকাল শুরু হয়েছে দেশে। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আজ বেজিংয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন। দিনরাত এক করে এখন দেশের নানা প্রান্তে মাস্ক তৈরি করছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। তবে সেই সংখ্যাটা দিনে দু’কোটির বেশি না। কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের দেশে মাত্র দু’কোটি মাস্ক দিয়ে এই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।