Advertisement
E-Paper

হেরে গেলে মানবেন না ফল, শেষবেলায় ‘হুমকি’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের

ফলাফল যা-ই হোক না কেন, মনে মনে তিনি যে হেরে বসে আছেন, নির্বাচনের দিন কুড়ি আগেই তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৬
তৃতীয় বিতর্কের শেষে। বুধবার লাস ভেগাসে হিলারি ক্লিন্টন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। — এএফপি

তৃতীয় বিতর্কের শেষে। বুধবার লাস ভেগাসে হিলারি ক্লিন্টন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। — এএফপি

ফলাফল যা-ই হোক না কেন, মনে মনে তিনি যে হেরে বসে আছেন, নির্বাচনের দিন কুড়ি আগেই তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ‘দাদাগিরি’ করে যে দেশ, আজ সেই দেশেরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী ওহায়োতে এক নির্বাচনী প্রচারে বলে দিলেন, ‘‘যদি আমি জিতি, তা হলেই এই নির্বাচনের ফলাফল স্বীকার করব।’’ আর যদি না জেতেন? কয়েক ঘণ্টা আগেই, তৃতীয় তথা শেষ প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী বলেছেন, ‘‘সে সব কথা তখন ভাবব। আমি এখন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’ কেন? ট্রাম্পের দাবি, ‘‘চারপাশে যা দেখছি, তা ভয়ঙ্কর। ভোটারদের মন দূষিত করে দিয়েছে এ দেশের সংবাদমাধ্যম।’’

বিস্ফোরক, আপত্তিকর মন্তব্য করায় যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার, এর আগেও বুঝিয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মহিলাদের নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টনের নামে কুৎসা করেছেন ভুরিভুরি। কিন্তু সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেল বুধবার রাতে লাস ভেগাসের নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তৃতীয় বিতর্কে আড়াইশো বছর ধরে চলে আসা মার্কিন নির্বাচনী প্রক্রিয়াটাকেই প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন এই মার্কিন ধনকুবের।

তত ক্ষণে অবশ্য একদমই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন তিনি। ৯০ মিনিটের বিতর্কে এ দিন প্রথম থেকেই সপাটে ব্যাট চালাচ্ছিলেন হিলারি। ধনকুবের যখন আয়কর সম্বন্ধে কথা বলছেন, তাঁকে থামিয়ে দিয়ে হিলারি বলেন, ‘‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, এই জটিল কথাগুলো সাধারণ ভাষায় বুঝিয়ে দিই আমি।’’ ট্রাম্প যখন তাঁর লাস ভেগাসের বিলাসবহুল হোটেলের উল্লেখ করছেন, হিলারি মাইক্রোফোনে আস্তে করে বলেন, ‘‘পুরো হোটেলটাই চিনা ইস্পাতে বানানো!’’ রুশ প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে রিপাবলিকান প্রার্থীর মন্তব্য, ‘‘পুতিন একদম প্রেসিডেন্ট ওবামাকে শ্রদ্ধা করেন না। হিলারিকেও না। হিলারি-ওবামার থেকে অনেক বেশি দক্ষ রাষ্ট্রনেতা উনি।’’ যা শুনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বলে ওঠেন, ‘‘রুশ প্রেসিডেন্ট দেখছি, ভালই কাঠপুতলি পেয়েছেন!’’

বিতর্ক শুরুর আগে অনেকে বলেছিলেন, আজ বিতর্ক-মঞ্চে মহারণ। কিন্তু দেখা যায়, হিলারির শান দেওয়া হাতিয়ারের মোকাবিলা করার মতো অস্ত্রই নেই ট্রাম্পের কাছে। আগের দু’টো বিতর্কেও যথেষ্ট বাগ্মিতা দেখিয়েছেন প্রাক্তন বিদেশসচিব। কিন্তু আজ তাঁর ‘আগ্রাসী’ মনোভাব দেখে অনেকেই বলছেন, ট্রাম্পকে ট্রাম্পের অস্ত্রেই কী ভাবে বধ করতে হয়, দেখিয়ে দিলেন ক্লিন্টন।

বিতর্কের শুরু থেকেই ট্রাম্প ছিলেন বেশ শান্তশিষ্ট, বলা যেতে পারে, ‘হিলারি-সুলভ’! প্রথম দিকে সঞ্চালকের গুগলিগুলো কিন্তু সামলানোর চেষ্টা করছিলেন। ব্যাখ্যা করে বলছিলেন, কেন তিনি অস্ত্র আইন পাল্টানো বা গর্ভপাতের বিপক্ষে, সুপ্রিম কোর্টে কী ধরনের বিচারপতি চান, বা আইএস নিধনে কেন রুশ-মার্কিন যৌথ প্রচেষ্টা জরুরি। আক্ষেপ করছিলেন, ভারত বা চিনের অর্থনীতি যে ভাবে এগোচ্ছে, তার থেকে অনেক পিছিয়ে মার্কিন অর্থনীতি। এর আগে যে-সব বিতর্কিত ক‌থাবার্তা বলেছেন, যেমন মেক্সিকো সীমান্তে পাঁচিল তোলা বা অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো, ছুঁয়ে যাচ্ছিলেন সে সব বিষয়ও।

কিন্তু হিলারি যখন তাঁকে একের পর এক ‘মৌখিক থাপ্পড়’ মারতে শুরু করে দেন, আমতা আমতা করতে শুরু করেন ট্রাম্প। তখন বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছিল তাঁকে। ঢকঢক করে কয়েক বার জলও খেয়ে নেন তিনি। তারপর বিতর্কটা নেহাতই একপেশে হয়ে যায়। হিলারি যা-ই বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর জবাবে শুধু বলে যান, ‘‘ভুল বলছেন’’, ‘‘আপনি ভুল বলছেন।’’

এক দম শেষ পর্বে এসে সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি এখন বলতে শুরু করেছেন, আমাদের নির্বাচনে রিগিং হয়। যদি আপনি হেরে যান, তা হলে কি ফল মেনে নেবেন না?’’

বাঁধ ভাঙে এতেই। উত্তেজিত ট্রাম্প বলতে শুরু করেন, ‘‘আমাদের নির্বাচনে রিগিং হয়। আলবাত হয়।

এ দেশের সংবাদমাধ্যম অসৎ ও পক্ষপাতদুষ্ট। এবং তারা সমানে ভোটারদের প্ররোচিত করে।’’ সঞ্চালক বারবার তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি তা হলে ফল মানবেন না?’’ উত্তরে রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে ট্রাম্প শুধু বলেন, ‘‘এখনই বলব না। সাসপেন্সে থাকুন আপনারা।’’

কী হবে যদি ভোটের ফলাফল মানতে রাজি না হন ডোনাল্ড ট্রাম্প? মার্কিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল লোকজন বলছেন, ট্রাম্প যদি খুব কম ব্যবধানে হারেন, তা হলে তিনি আদালতে সেই ফলের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। কিন্তু হিলারির সঙ্গে তাঁর যদি বিস্তর ফারাক থাকে, তা হলে তাঁর কিছুই করার থাকবে না।

এ কথা শুনে হিলারিও অবশ্য চুপ করে থাকেননি। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ওবামা ঠিকই বলেছেন। আপনি নিজে হেরে বসে আছেন ডোনাল্ড।’’ এখানেই না থেমে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি-র প্রশ্ন, ‘‘আড়াইশো বছর ধরে যে ভাবে এই দেশে নেতা নির্বাচন হয়েছে, ট্রাম্প আজ সেই প্রক্রিয়া সম্বন্ধেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এই দেশের ওপর যাঁর আস্থা নেই, দেশ তাঁর ওপর আস্থা রাখবে কী করে?’’

তৃতীয় বিতর্কের আগে অধিকাংশ জনমত সমীক্ষাই বলছিল, এগিয়ে রয়েছেন হিলারি। আর বিতর্কের পরে দেখা যায়, দু’জনের মধ্যে ফারাকটা বিস্তর বেড়ে গিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষ কার ওপর আস্থা রাখছেন, জানা যাবে ২০ দিন পরে। ৮ নভেম্বর ভোট, আর তার পরের দিন ফল ঘোষণা আমেরিকায়। যে আমেরিকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ।

হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টনেরও।

Donald trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy