Advertisement
E-Paper

বিলিতি দুর্গায় ঘাসের আস্তর, টেমসের মাটি

খড়বিচালি নেই, গঙ্গামাটি নেই, বাঁশও নেই— তা সত্ত্বেও প্রায় এক মাস ধরে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। কলকাতা থেকে তাঁকে আর বিমানে উড়ে আসতে হল না টেমসের ধারে!

সাম্য কার্ফা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৫
চক্ষুদান। ওয়েলস-এর পুজোয়। —নিজস্ব চিত্র।

চক্ষুদান। ওয়েলস-এর পুজোয়। —নিজস্ব চিত্র।

খড়বিচালি নেই, গঙ্গামাটি নেই, বাঁশও নেই— তা সত্ত্বেও প্রায় এক মাস ধরে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। কলকাতা থেকে তাঁকে আর বিমানে উড়ে আসতে হল না টেমসের ধারে!

সাধারণত বিদেশের পুজোগুলোয় ঠাকুর তৈরি হয় কলকাতায়। আর পুজোর বেশ কয়েক মাস আগেই বাক্সে মুড়ে মা দুগ্গা পাড়ি দেন কখনও আমেরিকা, কখনও লন্ডন বা হয়তো সুদূর আফ্রিকা। কিন্তু এ বছর ওয়েলস-এর পুজোর জন্য তার আর দরকার হয়নি। কার্ডিফের একটি আর্ট গ্যালারিতেই বিলেতে বসে বানানো হয়েছে বিগ্রহ।

সুনীল পাল আর দিব্যেন্দু দে। এক জন কলকাতার আর এক জন বডোদরার আর্ট কলেজের ছাত্র। কলকাতায় বসে মূর্তি তৈরি করলেও বিদেশের মাটিতে ঠাকুর বানানোর অভিজ্ঞতা ছিল না আগে। সুতরাং ওয়েলস থেকে ডাক পাওয়ার পরে একটা উত্তেজনা ছিল তাঁদের মধ্যে। সঙ্গে ভয়ও। সুনীলবাবু বলছিলেন, “ঠিকঠাক পরিকাঠামো পাব কি না সে নিয়ে একটু সংশয় তো ছিলই! গঙ্গামাটির মতো মাটি মিলবে কী ভাবে.. খড়-বাঁশ বা জুটবে কি না!” সেই সব চিন্তা মাথায় নিয়েই জুন মাসের গোড়ায় রঙ-সাজ সব কিছু নিয়ে ওয়েলসে হাজির হন তাঁরা।

সুনীলবাবুর কথায়, ঠাকুর গড়তে ঠিক কী কী লাগবে তার তালিকা আগে থেকে পাঠিয়ে দিলেও জিনিসপত্র জোগাড় করা আদৌ সহজ ছিল না। প্রথম ধাক্কাটা এল, বাঁশ নেই। কী ভাবে তৈরি করা হবে মূল কাঠামো? ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে আসে নতুন পথ। ব্যবহার করা হয় গ্যালভানাইজড অ্যালুমিনিয়ম রড। এ বার চাই খড়। সেখানেও বিধি বাম! আবার ভাবতে বসা...। শুকনো ঘাস আছে তো! শুকনো ঘাস বা হে-র মোটা আস্তরণে ঢেকে ফেলা হল কাঠামো। কিন্তু সময় লাগল বিস্তর। শুধু সুনীল-দিব্যেন্দু নয়, প্রতিমা গড়ার কাজে হাত লাগাল স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও। মানচিত্রের বেড়া টপকে সংস্কৃতির আঙিনায় মিলল বাংলা ও ব্রিটেন। সুনীলদের তত্ত্বাবধানে পেপার পাল্পের ছোট ছোট নানা সামগ্রী তৈরি করল তারা। ওয়েলস পুজো কমিটির তরফে সন্দীপ রাহা-ও তাই বলছিলেন, “দুর্গাপুজো যে কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এ আমাদের বাংলার শিল্পকলার অন্যতম অঙ্গ, সেটাই বোঝাতে চেয়েছি এই কাজে।’’

মাটিরও বিকল্প মিলল। পেপার পাল্প বা কাগজ ছিঁড়ে মিহি গুঁড়ো করে ভিজিয়ে আঠা মাখিয়ে ব্যবহার করা হল। হে-র কাঠামোর উপর লাগানো হল সেই মিশ্রণ। কিন্তু সুনীলবাবুরা দেখলেন, পেপার পাল্প শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ছোট হয়ে যাচ্ছে। তাই দ্বিতীয় আস্তরণের জন্য কোনও মতে জোগাড় করা হল মাটি। এঁটেল মাটি, বলাই বাহুল্য গঙ্গামাটি নয়। পেপার পাল্পের মিশ্রণের সঙ্গে মাটি মিশিয়ে চাপানো হল কাঠামোর উপর। শেষ প্রলেপে শুধুই মাটি। এ বার শুকিয়ে গেলেই রঙের পালা শুরু। অপেক্ষা করছিলেন সুনীল-দিব্যেন্দুরা। কিন্তু শুকিয়ে যেতেই প্রতিমার গায়ে ধরা পড়ল বড় বড় চিড়। কুমোরটুলিতে এ সব ক্ষেত্রে মাটিমাখা ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে মুড়ে রাখা হয় জায়গাগুলো। কিন্তু এখানে যে সর্বাঙ্গে ফাটল। তবে উপায়! তিরে এসে তরী ডুববে নাকি? শেষমেশ গোটা প্রতিমাই মুড়ে ফেলা হল ভেজা সুতির কাপড়ে। আর আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল ফাটলও! রঙের জন্য নেওয়া হল অ্যাক্রিলিক। সাধারণত এই রঙ দিয়ে ছবি আঁকা হয়। সুনীল-দিব্যেন্দুর আশা, ঠিকঠাক সংরক্ষণ করলে আগামী চার পাঁচ বছর দিব্যি থাকবেন মা।

রণদেবীর সজ্জায় দুর্গা এখন ওয়েলসের পুজো মণ্ডপে অপেক্ষমান। ষষ্ঠীর সন্ধেতে বেল গাছের নীচে বোধন করেই শুরু হবে পুজো।

Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy