Advertisement
E-Paper

বর্ণ নয়, চাই প্রমাণ, বোঝালেন অলক

আদালতে তাঁকে দেখেই ‘ও সন্ত্রাসবাদী’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন এক জন। গায়ের রং দেখেই কাউকে এ ভাবে জঙ্গি বলাটা যে তীব্র আপত্তিকর, তা বিচারকও বুঝতে পারেননি। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন মার্কিন সরকারি কৌঁসুলি অলক চক্রবর্তী। এখন বস্টন ম্যারাথন বিস্ফোরণ মামলায় সেই বঙ্গসন্তানই প্রমাণ করলেন, প্রমাণের ভিত্তিতেই কাউকে জঙ্গি বলা চলে। বর্ণের ভিত্তিতে নয়।

সংবাদ সং‌স্থা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫১
অলক চক্রবর্তী

অলক চক্রবর্তী

আদালতে তাঁকে দেখেই ‘ও সন্ত্রাসবাদী’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন এক জন। গায়ের রং দেখেই কাউকে এ ভাবে জঙ্গি বলাটা যে তীব্র আপত্তিকর, তা বিচারকও বুঝতে পারেননি। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন মার্কিন সরকারি কৌঁসুলি অলক চক্রবর্তী। এখন বস্টন ম্যারাথন বিস্ফোরণ মামলায় সেই বঙ্গসন্তানই প্রমাণ করলেন, প্রমাণের ভিত্তিতেই কাউকে জঙ্গি বলা চলে। বর্ণের ভিত্তিতে নয়।

বস্টন ম্যারাথন হামলার মামলায় রায় বেরোনোর পর তাঁর নাম লোকের মুখে মুখে ফিরছে। কারণ অনেকেই মনে করেন, হামলার চক্রী জোখার সারনায়েভ যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, সেই কৃতিত্ব অনেকটাই অলকের ।

বস্টন ম্যারাথন মামলার শুনানির সময় অন্য তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণের পাশাপাশি একাধিক ভিডিও ও ছবি পেশ করেছিলেন সরকারি আইনজীবীরা। প্রতিটিই হামলা-পরবর্তী রক্তক্ষয়ের ছবি। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দেহাংশ, রক্ত, নিথর দেহ, যার মধ্যে এক জন আবার আট বছরের শিশু — এ সবই দেখা গিয়েছিল সেগুলিতে। জোখারদের ‘কীর্তি’র ঘোর জুরিরা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় অলকের জোরালো সওয়াল— ‘‘প্রায় এক বছর আগে থেকে ম্যারাথনে এমন বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক কষেছিল সারনায়েভ ভাইয়েরা।’’ তার পরেই আরও জোরদার যুক্তি, ‘‘ইচ্ছে করেই ম্যারাথনের দিনটিকে বেছেছিল তারা। সাধারণ মানুষ— ছেলে, মেয়ে, শিশু— সকলকেই লক্ষ্য করেছিল তারা। ...শুধুমাত্র আমেরিকাকে ভয় দেখাতে। তাদের লোকেদের সঙ্গে আমেরিকা যা করছে তার শাস্তি দিতে চেয়েছিল ওরা।’’ ন্যায়বিচার পেতে জোরদার তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্যের পাশাপাশি অলকের এমন সওয়ালও যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তা অনেকেই মানছেন।

শুনানির সময় জোখারের আইনজীবী এক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, সে দিনের হামলার পুরোটাই জোখারের ‘দাদার কীর্তি’। ভাইকে ভুল বুঝিয়ে এমন হামলা করিয়েছিল সে। কিন্তু অলকের সওয়ালের কাছে সে যুক্তি ধোপে টেঁকেনি। বাস্তব উদাহরণ দিয়ে তিনি বোঝান, রীতিমতো পোড়খাওয়া জঙ্গির মতো ভাবনাচিন্তা ছিল জোখারের। অলক বলেন, ‘‘যখন নৌকোয় লুকিয়ে থাকা জোখারকে ধরতে মার্কিন নিরাপত্তাবাহিনী চারপাশ ঘিরে ফেলেছে, তখনও জেহাদের কথা লিখে গিয়েছে ওই যুবক।’’ এর পরেই একটি ছবি পেশ করেন অলক। তাতে দেখা যাচ্ছে, রক্তের দাগ লাগা একটি কাগজ। ধরা পড়ার আগের মুহূর্তে তাতে কিছু লিখেছিলেন জোখার। তার প্রতিটি ছত্রে স্রেফ জেহাদের বার্তা আর তীব্র মার্কিন বিদ্বেষ। স্রেফ দাদার ভুল বোঝানোর জেরে যে এমন পোড়খাওয়া মানসিকতা তৈরি হতে পারে না, তা স্পষ্ট করে দেন অলক। প্রথমে সওয়াল ও তার পর জোরদার প্রমাণ পেশের কৌশলে।

এমন দুঁদে কৌঁসুলির স্বপ্ন ছিল, ডাক্তার হবেন। কিন্তু তা না হয়ে পড়তে চলে গেলেন আইন। বছর ছয়েক আগে এ প্রসঙ্গে এক বার একটি ঘটনার কথা বলেছিলেন অলক। তখন তিনি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দফতরে কাজ করেন। এক অপরাধীর সাজা ঘোষণা হবে। হঠাৎই সে অপরাধী অলকের দিকে আঙুল তুলে চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘ও সন্ত্রাসবাদী।’’ বিচারক চুপ ছিলেন। দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গসন্তান। এ ভাবে কোনও দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দাকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়াটা যে তীব্র আপত্তিকর, বিচারকও সেটা বুঝে উঠতে পারেননি। আর সেটা দেখেই স্তম্ভিত হয়েছিলেন অলক। দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দারা আইনি পেশায় আরও এলে তবেই এই ধারণা বদলাতে পারে বলে মনে করেন অলক।

হয়তো তিনিই হয়ে উঠবেন অনেকের অনুপ্রেরণা।

Dzhokhar Tsarnaev Boston Marathon Bombing Alok chakraborty terrorist court lawyer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy