১৮ থেকে ২৫। ডিসেম্বরের এই আটটা দিন বেছে রেখেছিল সে। কারণ বড়দিনের এই সময়টায় ভিড়ে ঠাসা শপিং কমপ্লেক্সে বিস্ফোরণ ঘটালে হতাহতের সংখ্যাটা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এভেরিট অ্যারন জেমসনের সেই পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছেন এফবিআইয়ের গোয়েন্দারা।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তরফ থেকে গত কাল জানানো হয়েছে, ২৬ বছরের ওই প্রাক্তন মেরিন সেনাকে গ্রেফতার করেছে তারা। সান ফ্রান্সিসকোর জনপ্রিয় পিয়ের ৩৯ শপিং সেন্টারে বড়দিনের এই সময়টায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা ছিল তার। আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় এফবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী ক্রিস্টোফার ম্যাককিনে জানিয়েছেন, আইএস ভাবাবেগে উদ্বুদ্ধ জেমসনের বাড়ি থেকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং তার লেখা কিছু চিঠি উদ্ধার করা হয় গত বুধবার। যার থেকে এটা স্পষ্ট যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পিয়ের ৩৯-এ বড়সড় জঙ্গি হামলার পরকল্পনা করছিল। জেরায় নাকি সে এটাও কবুল করেছে যে, গত অক্টোবরে নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তায় ট্রাক হামলা বা সান বার্নান্দিনোর মতো আরও হামলার দরকার রয়েছে আমেরিকায়।
২০০৯ সালে মার্কিন সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল জেমসন। অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও নিয়েছিল। কিন্তু তার হাঁপানির অসুখ থাকায় বাহিনী ছাড়তে হয় তাকে। আপাতত ট্রাক চালকের কাজ করত সে। থাকত ক্যালিফোর্নিয়ার মডেস্টো এলাকায়। সেই বাড়িতেই গত বুধবার তল্লাশি চালায় এফবিআই।
কী ভাবে ধরা হল জেমসনকে? গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গত চার মাস ধরে নজরে রাখা হচ্ছিল তাকে। দু’বছর আগে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয় সে। অনলাইনে আইএস ভাবাপন্ন বিভিন্ন সাইটের পোস্ট লাইক করত সে। কোনও জঙ্গি সংগঠনের পোস্ট করা নিউ ইয়র্কের রাস্তায় বিস্ফোরক ভর্তি বাক্স হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সান্তা ক্লজের একটি ছবিও লাইক করেছিল সে। সম্প্রতি এক মার্কিন গোয়েন্দাকে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএসের শীর্ষ নেতা ভেবে নিজের সব পরিকল্পনা বলে ফেলে সে। তার পরই গ্রেফতার করা হয় তাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে বিচার চলছে তার। তার বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার ছক ও বিদেশি জঙ্গি সংগঠনকে সাহায্য করার যে অভিযোগ এফবিআই এনেছে, তা প্রমাণিত হলে কমপক্ষে ২০ বছরের কারাবাস হবে জেমসনের। তবে সে পুলিশকে জানিয়েছে, পিয়ের ৩৯-এ হামলার পরিকল্পনা থাকলেও সেখান থেকে বেরোনোর কোনও ছক কষেনি সে। কারণ পুলিশকে সে জানিয়েছিল, মরতে সে ভয় পায় না।
তবে ছেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মেনে নিতে চাননি এভেরিটের বাবা গর্ডন জেমসন। স্থানীয় সংবাদপত্রকে গর্ডন জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে এত মানুষের ক্ষতি করার কথা ভাবতেই পারে না। কারণ তিনি মনে করেন, তাঁর ছেলে একজন অতি নিরীহ এবং দয়ালু এক মুসলিম।
এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস বলেছেন, ‘‘আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীর অবিশ্বাস্য সাফল্যের জন্য এত বড় হামলার থেকে দেশবাসী রক্ষা পেয়েছেন।’’