Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

'জানতাম আলমারির চেয়ে আর সুরক্ষিত কিছু নেই'

নব্বই সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মেলিসা। তাঁর মনে তখন শুধু চলছে, ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীর প্রাণ বাঁচাবেন কী করে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন শিক্ষিকা। ক্লাসের সব পড়ুয়াকে ফের ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি।

রক্ষক: মেলিসা ফাকোস্কি

রক্ষক: মেলিসা ফাকোস্কি

সংবাদ সংস্থা
পার্কল্যান্ড (ফ্লরিডা) শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

আগুন লাগার বিপদঘন্টি শুনে প্রথম টনক নড়েছিল মেলিসা ফাকোস্কির। বুধবার দুপুর। ফ্লরিডার পার্কল্যান্ডের মারজরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে কিছু ক্ষণ আগেই আগুন নেভানো নিয়ে মহড়া চলছিল। ফের সেই শব্দ শুনে তড়িঘড়ি ক্লাস থেকে সব ছাত্রছাত্রীকে বাইরে বার করে এনেছিলেন ওই শিক্ষিকা। ভেবেছিলেন এ বার বোধহয় সত্যি সত্যি আগুন লেগেছে। পড়ুয়াদের প্রাণ বাঁচাতে মেলিসা যখন তাদের স্কুল বিল্ডিংয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে স্কুলেরই এক নিরাপত্তারক্ষী এসে জানান, স্কুলে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করেছে কেউ।

নব্বই সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মেলিসা। তাঁর মনে তখন শুধু চলছে, ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীর প্রাণ বাঁচাবেন কী করে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন শিক্ষিকা। ক্লাসের সব পড়ুয়াকে ফের ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। জানতেন হাতে সময় বেশি নেই। সবাইকে বাঁচাতে তখন একটাই রাস্তা খোলা। ক্লাসের ভিতরে থাকা আলমারির ভিতরে একে একে সবাইকে ঢুকিয়ে দেন তিনি। এর পর টানা ৩০ মিনিট রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করেছেন মেলিসা। পুলিশের বিশেষ বাহিনীর (সোয়াট) অফিসারেরা এসে যখন ক্লাসের দরজা খোলেন, আলমারি থেকে একে একে পড়ুয়াদের বার করে আনেন মেলিসা।

আতঙ্কিত: অভিভাবকেরা।

১৯ জন ছাত্রছাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে শিক্ষিকা মেলিসা ফাকোস্কি এখন সকলের চোখে নায়িকা। সাংবাদিকদের তিনি জানান, ওই তিরিশ মিনিট তাঁর জীবনের ভয়াবহতম সময়। বলেছেন, ‘‘ঘরে ঢুকেও প্রথমে ভেবে উঠতে পারিনি ওদের বাঁচাতে কী করতে পারি। প্রথমে তো ঘরের কোণে সকলকে নিয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম। পরে মাথায় আসে আলমারির মতো সুরক্ষিত জায়গা আর নেই। ১৯ জনকে সেখানেই ঢুকিয়ে ফেলি। ছেলেমেয়েরা তখন অনেকেই কাঁদতে শুরু করেছে। কেউ কেউ শুধু ফোনে টেক্সট করে যাচ্ছিল।’’

মেলিসার মতো নায়ক আরও আছেন। আসলে ছিলেন। ওই স্কুলেরই ফুটবল কোচ অ্যারন ফিস। স্কুলের নিরাপত্তারক্ষীর কাজও করতেন অ্যারন। আজ যখন নিকোলাস ক্রুজ স্কুল চত্বরে বন্দুক হাতে তাণ্ডব চালাচ্ছে, অ্যারন নিজে মানব ঢাল হয়ে বহু শিশুকে বাঁচিয়েছেন। আর নিজে একাধিক বুলেট খেয়ে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি তাঁকে। আজ মারা যান তিনি। টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিয়ে নেটিজেনরা স্মরণ করেছেন তাঁর বীরত্বের কাহিনিও।

কালকের স্কুল হামলায় কারা কারা মারা গিয়েছেন, সকলের পরিচয় স্পষ্ট নয় অবশ্য। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন স্কুলের আর এক ক্রীড়া প্রশিক্ষক ক্রিস হিক্সন। মারা গিয়েছে জেইম গুটেনবার্গ নামে এক ছাত্রীও। তার ভাই জেস অবশ্য বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছে সুরক্ষিত ভাবেই।

ছবি: এপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE