Advertisement
E-Paper

ভয় পিছু ছাড়েনি, ‘অবাধ’ নয় প্যারিসের স্মরণসভাও

আতঙ্ক যে পিছু ছাড়ছে না, বুঝিয়ে দিল প্যারিসের স্মরণসভাও। জঙ্গি-তাণ্ডবের দু’সপ্তাহও পেরোয়নি। ক্ষতটা দগদগে। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাল ফ্রান্স। ‘নিয়ন্ত্রিত’ স্মরণসভার মাধ্যমে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৩

আতঙ্ক যে পিছু ছাড়ছে না, বুঝিয়ে দিল প্যারিসের স্মরণসভাও।

জঙ্গি-তাণ্ডবের দু’সপ্তাহও পেরোয়নি। ক্ষতটা দগদগে। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাল ফ্রান্স। ‘নিয়ন্ত্রিত’ স্মরণসভার মাধ্যমে।

রাজধানীর মধ্যস্থলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল ফরাসি সরকার। আহ্বায়ক ছিলেন খোদ প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। নিহতদের স্মরণে গোটা শহরটা মুড়ে ফেলা হয়েছিল তিন রঙা পতাকায়। জায়গায় জায়গায় শহিদবেদি, ফুলের স্তূপ আর মোমবাতির সারি। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে লেস অ্যাঁভালিদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হয়েছিলেন হাজার খানেক মানুষ। প্যারিস হামলায় আক্রান্তরা তো বটেই, ছিলেন দেশের তামাম রাজনীতিক, বিশিষ্ট জনেরাও। অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার ছিল নিয়ন্ত্রিত। আমন্ত্রণত্র ছাড়া কাউকেই অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে পা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কড়াকড়ি ছিল সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারেও। আজকের স্মরণসভার যে ক’টি ছবি সামনে এসেছে, তার বেশির ভাগই ফরাসি সেনার সৌজন্যে প্রাপ্ত।

লেস অ্যাঁভালিদ মিনারে এমনিতে যুদ্ধে নিহত ফরাসি সেনাদের শ্রদ্ধা জানানোর প্রথাই প্রচলিত। দ্বিতীয় বারের জন্য সে প্রথা ভাঙল ফ্রান্স। জানুয়ারি মাসে সাপ্তাহিক পত্রিকা শার্লি এবদোর দফতরে জঙ্গি হামলার পর সেখানে স্মরণসভার আয়োজন করেছিল ফ্রান্স। নিহতদের শহিদের সম্মান দিতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। ১৩ নভেম্বরের হামলায় নিহতদেরও একই ভাবে সম্মান দিতে চেয়েছিল প্রশাস। তাই বেছে নেওয়া হয়েছিল মিনার প্রাঙ্গন। পার্থক্য এটাই যে, শার্লি এবদোর পর যে স্মরণসভা হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। মনের তাগিদে জড়ো হয়েছিলেন লাখো মানুষ। এ বারেরটা পুরোটাই আমন্ত্রণভিত্তিক।

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মঞ্চে ওঠেন প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ। গাড়ি থেকে নেমে একাই এগিয়ে যান মঞ্চের দিকে। সঙ্গে ছিল না কোনও বন্দুকধারী রক্ষী। মঞ্চে উঠে নিজেই একটা চেয়ার টেনে বসে পড়েন। সামনে তখন থিক থিক করছে অগুন্তি কালো মাথা। একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন প্যারিস হামলায় আক্রান্তরা। নিহতদের পরিজনরা তো ছিলেনই, স্ট্রেচারে-হুইলচেয়ারে এসেছিলেন আহতদের অনেকে। কারও পায়ে প্লাস্টার, কারও মাথায় ব্যান্ডেজ। ১৩ নভেম্বর রাতে জঙ্গি তাণ্ডবে জখম হয়েছিলেন ওঁরা। ২৪ ঘণ্টা হল ছুটি পেয়েছেন কেউ, কেউ আবার চিকিৎসকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে সরাসরি চলে এসেছেন হাসপাতাল থেকে। তাঁদের তদারকির জন্য ছিলেন রেড ক্রসের কর্মীরা।

ওঁলাদ মঞ্চে উঠতেই যন্ত্রাণুসঙ্গে বেজে ওঠে ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীত। গলা মেলাচ্ছিলেন উপস্থিত সকলে। বড় পর্দায় তখন এক এক করে ভেসে উঠছে হামলায় নিহত ১৩০ জনের মুখ। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে নিহতদের ছবি জোগাড় করেছিল প্রশাসন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার পর এক মিনিটের নীরবতা পালন হয়। শুরু হয় ওঁলাদের বক্তৃতা।

সে দিনের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন মূলত অল্পবয়সীরা। তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ওলাঁদ বলছিলেন, ‘‘ওঁরা স্বাধীনতার প্রতিনিধি ছিল, ওঁরা ফ্রান্সের প্রতিনিধি ছিল, তার জন্যই মেরে ফেলা হল ওঁদের। যারা এই কাজ করেছে তাদের ধ্বংস করতে সব কিছু করবে ফরাসি সেনা। সন্তানদের রক্ষা করবে ফ্রান্স।’’ ওঁলাদ জানান, নিজেদের অস্ত্র দিয়ে শত্রু দমন করবে ফ্রান্স। আর এই অস্ত্র হল গণতন্ত্র। ওঁলাদ এ-ও জানান, শত্রুদের রুখতে শুধু সামরিক শক্তির উপরই নির্ভর করছে না তাঁর দেশ। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে আইন-কানুন কঠোর কথাও ভাবা হচ্ছে। সে দিনের হামলার নিশানা ছিল রাজধানীর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলি। জঙ্গিদের যোগ্য জবাব দিতে সে সব জায়গায় এর পর আরও বেশি করে গানের অনুষ্ঠান, খেলা, প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্চ।

১৩ নভেম্বরের হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্যারিসের এক বিজ্ঞাপন সংস্থারকর্মী ইয়ানিক মিনভেল। আজকের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তাঁর মা। সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘‘মনে শান্তি পেলাম।’’ ছিলেন নিহত ব্রিটিশ যুবক নিক আলেক্সজান্ডারের বাবা-মাও। আক্রান্তদের পরিজনদের সঙ্গে আত্মিক-যোগ গ়ড়ে ওঠার কথা বলছিলেন তাঁরা। তবে সব আক্রান্তই যে ওঁলাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন, তা নয়। ফরাসি সরকারের উপর আস্থা হারানোর বার্তা দিতে ইচ্ছে করে অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন অনেকে। তেমনই এক জন বলছিলেন, ‘‘বছরের গোড়ায় ভয়াবহ হামলার পরেও দেশটাকে বাঁচাতে তেমন কিছুই করেনি সরকার। করলে এ দিনটাই আসত না।’’

paris attack france memorial service
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy