সুনসান দুপুর। হঠাৎই ভীষণ শব্দে কেঁপে উঠল বহুতল। বাসিন্দারা বুঝতে পারলেন, বাড়িতে বোমা ফেলেছে ইজরায়েলের সেনা। তবে ধ্বংস করতে নয়, সতর্ক করতে। বিমান থেকে ছুঁড়ে ফেলা লিফলেটেও সেই বার্তা ‘এলাকা ছাড়ুন, না হলে আপনার ও আপনার পরিবারের মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন।’ এর কিছু ক্ষণ আগেই গাজার মাটিতে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। যার পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭০।
এ দিন মাত্র আধ ঘণ্টার জন্য একটি রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে অভিযান চালায় আইডিএফ। তাতে পাল্টা গুলির জবাব দেয় হামাস। আহত হন চার জন ইজরায়েলি সেনা। ইজরায়েলি নৃশসংতার আরও একটি ছবি এ দিন উঠে এসেছে। এক ব্রিটিশ দৈনিক দাবি করেছে, গাজার আকাশে ইজরায়েলের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ধোঁয়া ও আগুন দেখতে এক পাহাড়চূড়ায় জড়ো হয়েছিলেন অন্তত ৫০ জন ইজরায়েলি। দৈনিকটি জানিয়েছে, পপকর্ন খেতে খেতে গাজার হত্যালীলা উপভোগ করতে এসেছিলেন তাঁরা। সে সময়ের একটি ছবি টুইটারে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রবল প্রতিক্রিয়াও হয়।
সে ছবির সত্যমিথ্যা অবশ্য জানা নেই। যা জানা তা হল এ দিন সকালে গাজায় হামলার পর দুপুরে বিমান থেকে বেইত লাহিয়া শহরে লিফলেট ফেলতে শুরু করে আইডিএফ। তাতে লেখা ছিল, ‘সন্ত্রাসবাদীদের এলাকা এবং সন্ত্রাসের সরঞ্জাম যেখানে তৈরি হচ্ছে দু’জায়গাতেই হামলা চালাবে ইজরায়েলের সেনা।’ এমনকী কোন কোন জায়গায় হামলা চালানো হবে, তারও একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে ওই লিফলেটগুলিতে। বার্তা একটাই। সময় থাকতে এলাকা ছেড়ে যেন পালিয়ে যান বাসিন্দারা। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে বেইত লাহিয়ায় এক লক্ষেরও বেশি বাসিন্দা কোথায় যাবেন, তার ঠিক নেই। অন্য দিকে, গাজার প্রায় চার হাজার বাসিন্দা ইতিমধ্যেই ঘর-দোর ছেড়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের ত্রাণ সংস্থায় আশ্রয় নিয়েছে। তথ্য বলছে, ছ’দিনে গাজায় তেরোশোরও বেশি বার বিমান হানা চালিয়েছে ইজরায়েল। তাতে প্রাণ গিয়েছে ৩০টিরও বেশি শিশুর। সব মিলিয়ে ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগ উঠেছে আইডিএফের বিরুদ্ধে।
বিষয়টির জন্য অনুতপ্ত ইজরায়েলের রাষ্ট্রপ্রধান বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও। তাঁর মতে, “হামাসই আমাদের হামলার লক্ষ্য।” কিন্তু হাসপাতাল, ধর্মস্থান, সাধারণ বসতি কিংবা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ভিতর নিজেদের ঘাঁটি গেড়ে রাখায় বাধ্য হয়ে সেখানেও হামলা চালাতে হচ্ছে আইডিএফকে। নেতানিয়াহুর যুক্তি, “হামাস আমাদের শহরগুলিতে নির্বিচারে রকেট হানা চালিয়েছে।... দেশবাসীর বিরুদ্ধে এ হেন আক্রমণের জবাব সর্বশক্তি দিয়ে দেব।” তবে নির্বিচারে হামলা চালানোর আগে তাঁরা যে সাধারণ বাসিন্দাদের সতর্ক করবেন, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। এ দি বেইত লাহিয়ায় লিফলেট ফেলে সেই চেষ্টাই করেছে আইডিএফ।
তাতেও অবশ্য সমালাচনা থামছে না। রাষ্ট্রপুঞ্জ গত কালই সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানিয়েছিল। ভারতেও এ দিন নয়াদিল্লিতে ইজরায়েলের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখান অনেকে। দাবি ওঠে, গাজায় অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধ করা নিয়ে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে কড়া বার্তা দিক ভারত। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আগামিকাল ইজরায়েল যাচ্ছেন জার্মানির বিদেশমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy