Advertisement
১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ঈশ্বর জাদুকর নন, বিগ ব্যাং-কে স্বীকৃতি পোপের

ঈশ্বর তো কোনও জাদুকর নন যে, জাদু-কাঠির ছোঁয়ায় সব কিছু করে ফেলবেন! কোনও বিধর্মী নাস্তিক নয়। এই উক্তি খ্রিস্টধর্মের সর্বোচ্চ পদাধিকারী পোপ ফ্রান্সিসের। বিজ্ঞান-বিষয়ক এক সমাবেশে গিয়ে আজ এই মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “বাইবেলে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব আমাদের জাদুতে বিশ্বাস করতে শেখায়। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। বিগ ব্যাং-ই সঠিক স্ৃষ্টিতত্ত্ব। এবং ঈশ্বর-চেতনার সঙ্গে এর কোনও বিরোধ নেই।”

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৭
Share: Save:

ঈশ্বর তো কোনও জাদুকর নন যে, জাদু-কাঠির ছোঁয়ায় সব কিছু করে ফেলবেন!

কোনও বিধর্মী নাস্তিক নয়। এই উক্তি খ্রিস্টধর্মের সর্বোচ্চ পদাধিকারী পোপ ফ্রান্সিসের। বিজ্ঞান-বিষয়ক এক সমাবেশে গিয়ে আজ এই মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “বাইবেলে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ব আমাদের জাদুতে বিশ্বাস করতে শেখায়। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। বিগ ব্যাং-ই সঠিক স্ৃষ্টিতত্ত্ব। এবং ঈশ্বর-চেতনার সঙ্গে এর কোনও বিরোধ নেই।”

বছর দেড়েক আগে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বাঁধা গতের বাইরে কথা বলে মাঝেমধ্যেই সাড়া ফেলে দেন ফ্রান্সিস। কখনও সহমর্মিতা দেখান সমকামীদের প্রতি, কখনও বা মুখ খোলেন পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। আর্জেন্তিনীয় এই পোপের ‘প্রগতিশীল’ দৃষ্টিভঙ্গি এক দিকে যেমন কড়া সমালোচনা করেছেন কট্টরপন্থী খ্রিস্টানরা, তেমনই আবার তা বিপুল সমাদৃত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। ধর্মের অনুশাসনের অপব্যবহার করে মেয়েদের একঘরে করে রাখার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন তিনি, আবার ‘অপর’কে বুঝতে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে চেয়েছেন মুসলিমদের সঙ্গে। পোপ ফ্রান্সিসের এই সব ব্যতিক্রমী মন্তব্যের তালিকায় নতুন সংযোজন তাঁর বিজ্ঞান-মনস্কতা।

ঠিক কী বলেছেন পোপ ফ্রান্সিস?

তাঁর কথায়, “বিজ্ঞান-তত্ত্বের সঙ্গে ধর্মের কোনও বিরোধ নেই। মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব হিসেবে আমরা বিগ ব্যাং-কেই মেনে নিয়েছি। ঈশ্বরই সৃষ্টিকর্তা, এই কথা বললেও সৃষ্টির স্বরূপ বুঝতে বিগ ব্যাংয়ের মতো তত্ত্বের প্রয়োজন রয়েছে। জেনেসিসে যে ভাবে সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তা পড়লে মনে হয়, ঈশ্বর স্রেফ এক জাদুকর এবং তাঁর জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সব কিছু সৃষ্টি করে ফেলেছেন!” পোপের আরও সংযোজন, “মানবজাতির সৃষ্টি করে ঈশ্বর তাদের বিজ্ঞানের নিজস্ব নিয়মে বিবর্তিত হতে দিয়েছেন। প্রাকৃতিক বিবর্তনের নিয়মেই সৃষ্টিতত্ত্বকে ব্যাখ্যা করা উচিত।”

ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিরোধিতা বহু দিনের। সেই চারশো বছর আগে ‘পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু নয়’ বলে ধর্মগুরুদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন গ্যালিলিও গ্যালিলাই। আধুনিক যুগে অবশ্য ভ্যাটিকানের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই কোমল হয়েছে। বাইবেলের ‘জেনেসিস’ অংশে যে ভাবে সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তা এখন আর ধর্মীয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্গত করা হয় না। এর আগের পোপ, ষোড়শ বেনেডিক্টও ভ্যাটিকানের বিজ্ঞান-বিরোধী ভাবমূর্তি ঘোচাতে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। ভ্যাটিকানের একটি নিজস্ব বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিও আছে ‘পন্টিফিক্যাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’। স্থাপিত হয় ১৯৩৬ সালে। ম্যাক্স প্লাঙ্ক, ওটো হানের মতো নোবেল-জয়ী থেকে শুরু বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা এই অ্যাকাডেমির সদস্য। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই অ্যাকাডেমিকেই আজ তাঁর বৈপ্লবিক মন্তব্যের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি নিজেই অবশ্য এই অ্যাকাডেমির প্রধান।

পোপের এই মন্তব্য নিয়ে কট্টরপন্থীদের মধ্যে হয়তো সমালোচনার ঝড় উঠবে। এখন কিন্তু বিজ্ঞানীরা তাঁর এই বক্তৃতাকে স্বাগত জানিয়েছেন। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিলিও গিওরেলো যেমন বলেন, “বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বহু প্রাচীন বিতর্কের অবসান করতে চাইছেন পোপ ফ্রান্সিস।” আর ইতালির জাতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থার অধিকর্তা জিওভানি বিগনামির কথায়, “যে বিগ ব্যাংয়ের মধ্যে দিয়ে মহাবিশ্বের উৎপত্তি, আমাদের বিবর্তনও সেই পথে। পোপের এই মন্তব্য তাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।”

অন্য বিষয়গুলি:

pope francis big bang god Magician evolution online news national news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy